Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ফের দ্বন্দ্বের পথে কেন্দ্র ও বিচার বিভাগ

বিচারপতি নিয়োগে শেষ কথা বলার অধিকার কার কাছে থাকবে, তা নিয়ে গত এক বছর ধরে টানাপড়েন চলছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১৫
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদী সরকার বনাম বিচার বিভাগ স্নায়ুর যুদ্ধে ফের উত্তাপ বাড়তে চলেছে।

বিচারপতি নিয়োগে শেষ কথা বলার অধিকার কার কাছে থাকবে, তা নিয়ে গত এক বছর ধরে টানাপড়েন চলছে। এক দিকে মোদী সরকারের আইন মন্ত্রক। অন্য দিকে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সিনিয়র বিচারপতির কলেজিয়াম। কেউই শেষ কথা বলার অধিকার ছাড়তে নারাজ। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর বিচারপতিদের উপরে কাজের চাপ নিয়ে মোদীর সামনে চোখের জল ফেলেছিলেন। পরে বিচারপতি নিয়োগে বিলম্ব নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দেগেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিক্ষোভ দেখান আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ চলছে। কিন্তু বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া বা ‘মেমোরান্ডাম অব প্রসিডিওর’ নিয়ে কেন্দ্র ও কলেজিয়ামের মধ্যে এখনও ঐকমত্য হয়নি।

এরই মধ্যে নতুন করে মোদী সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলেছে সুপ্রিম কোর্ট। গত সপ্তাহে বিচারপতি আদর্শ কুমার গয়াল ও বিচারপতি ইউ ইউ ললিতের বেঞ্চ কেন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছে, বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া বা ‘মেমোরান্ডাম অব প্রসিডিওর’ নিয়ে দেরি কেন? আদালতের নির্দেশ, সরকারি হলফনামা দিলেই চলবে না। ১৪ নভেম্বর, পরবর্তী শুনানির দিন খোদ অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালকেই এজলাসে হাজির থাকতে হবে।

আইন মন্ত্রকের কর্তারা এই নির্দেশে বিস্মিত! তাঁদের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের সঙ্গেই এই নিয়ে টানাপড়েন চলছে। কলেজিয়ামের বিচারপতিরা সরকারের যুক্তি মেনে নিলেই ঐকমত্য তৈরি হয়ে যায়। সব বিষয়ে না হলেও গত এক বছরে অনেক বিষয়ে সম্মতিও তৈরি হয়েছে। অথচ এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরাই কেন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে দেরি হচ্ছে তার ব্যাখ্যা চাইছেন!

মোদী সরকারের তৈরি বিচারবিভাগীয় নিয়োগ কমিশন আইন অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। তারপরে আদালতই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া তৈরির নির্দেশ দেয়। বিচারপতি গয়াল ও বিচারপতি ললিতের বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছে, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ২০১৫-র ১৬ ডিসেম্বর। তারপরে ১ বছর ১০ মাস ধরে কী কাজ হলো? একাধিক আবেদনকারী জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে জানিয়েছেন, এ নিয়ে আর দেরি করা উচিত নয়।

সরকারি সূত্রের খবর, মূলত তিনটি বিষয় নিয়েই এখন প্রশাসনের সঙ্গে বিচার বিভাগের বিবাদ চলছে। এক, বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য কলেজিয়ামের সুপারিশ করা কোনও নাম গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকার খারিজ করতে দিতে পারবে কি না। দুই, কলেজিয়ামকে সাহায্য করার জন্য সরকার একটি সচিবালয় তৈরির সুপারিশ করেছে। যারা নিম্ন আদালতের বিচারক বা আইনজীবীদের কাজকর্মের খতিয়ান রাখবেন। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে এতে সুবিধা হবে। কলেজিয়াম এতে রাজি নয়। তিন, বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও বয়সের মধ্যে কোনটিকে কী ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আইন মন্ত্রক সূত্রের যুক্তি, কলেজিয়ামের বৈঠক নিয়েই তার অন্যতম সদস্য বিচারপতি জে চেলামেশ্বরই বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন। তা ছাড়া কলেজিয়ামের সঙ্গে সরকারের কী মত বিনিময় চলছে, তা গোপন তথ্য। তা কী ভাবে আদালতে জানানো হবে, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE