Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ধনী চাষিদের ভর্তুকি রেখে দিচ্ছে কেন্দ্র

রান্নার গ্যাসের মতো সারের ভর্তুকিও সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল মোদী সরকার। পরিকল্পনা ছিল, সার সংস্থাগুলিকে ভর্তুকি দেওয়ার বদলে চাষিরা সার কেনার এক-দু’দিনের মধ্যেই ব্যাঙ্কে তাদের ভর্তুকি পাবে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ০৫:১০
Share: Save:

মধ্যবিত্ত বা গরিব মানুষের ওপর কোপ মেরে সংস্কারের ডংকা বাজাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু কোটিপতি জমির মালিকদের ভর্তুকি বন্ধ করার রাজনৈতিক ঝুঁকি নেওয়ার সাহস তারা দেখাতে পারছে না।

গরিব-মধ্যবিত্তের রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে ভর্তুকি তুলে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ধনী ‘কৃষক’দের ভর্তুকিকে হাত দিয়ে হাত পোড়াতে রাজি নয় তারা। কারণ, অর্থনৈতিক যুক্তির থেকে রাজনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কাই সেখানে বড়। অথচ উত্তরের পঞ্জাব থেকে দক্ষিণের তেলঙ্গানায় একের পর এক সরকারি সমীক্ষা বলছে— কৃষকদের জন্য সরকারি সুরাহার সিংহ ভাগ ফায়দাই ধনী কৃষকরা ঘরে তুলছে, যারা আদতে কৃষিকাজ করেন না, বিঘে বিঘে কৃষি-জমির মালিক।

রান্নার গ্যাসের মতো সারের ভর্তুকিও সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল মোদী সরকার। পরিকল্পনা ছিল, সার সংস্থাগুলিকে ভর্তুকি দেওয়ার বদলে চাষিরা সার কেনার এক-দু’দিনের মধ্যেই ব্যাঙ্কে তাদের ভর্তুকি পাবে। কোন সংস্থা কোথায় কোন চাষিকে সার বিক্রি করছে, আধারের মাধ্যমে তাঁদের তথ্য পরিচয় নথিভুক্ত করা হবে। এর ফলে যাঁরা চাষি নন, তাঁরা ভর্তুকিতে সার কিনতে পারবেন না। ভর্তুকি মিলবে শুধুমাত্র ছোট বা প্রান্তিক চাষিদেরই।

আরও পড়ুন:ডোভালের সঙ্গে কথা হচ্ছে জানজুয়ার, ইঙ্গিত দিলেন পাক রাষ্ট্রদূত

ঠিক ছিল, খারিফ ফসলের মরসুমে জুন মাস থেকেই এই ব্যবস্থা চালু হবে। কিন্তু দেশের সর্বত্র ‘পয়েন্ট-অফ-সেল’ যন্ত্র পৌঁছয়নি বা ইন্টারনেট সংযোগ ভালো নয়— এই যুক্তি তুলে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছে সরকার।

সমস্যা হল, কোনও রাজনৈতিক দলই ধনী কৃষকদের ভর্তুকি কমানোর কথা বলে না। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের যুক্তি, চলতি অর্থ বছরেই সারের ভর্তুকির জন্য ৭০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। যা ২ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকার মোট ভর্তুকির প্রায় ২৯ শতাংশ। এই ভর্তুকি কমানো গেলে সরকার অর্থনীতির পরিকাঠামোয় আরও বেশি টাকা ঢালতে পারবে।

ধনী কৃষকদের আয়ে কর বসানোর দাবিও কোনও রাজনৈতিক দল তোলে না। মোদী জমানাতেই প্রাক্তন অর্থ প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হা কৃষিতে আয়কর বসানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার পরেই তাঁকে বিমান মন্ত্রকে বদলি হতে হয়। সম্প্রতি নীতি আয়োগের উপদেষ্টা বিবেক দেবরায়ও কৃষির আয়ে কর বসানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। জেটলি বিদেশ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন, সরকারের এমন কোনও পরিকল্পনা নেই।

শুধু সার নয়। কৃষকদের জন্য দেওয়া যাবতীয় ভর্তুকির সিংহ ভাগই যে ধনী জমি-মালিকরা ঘরে তুলছেন, বার বার তা বিভিন্ন তথ্যে উঠে এসেছে। পঞ্জাবে নাবার্ড ও পঞ্জাব কৃষি বিদ্যালয় সমীক্ষা করে দেখেছিল, ৯৪ শতাংশ ভর্তুকিই যায় জমির মালিকদের ঘরে। গরিব চাষিরা বঞ্চিতই থাকছেন। তেলঙ্গানায় দেখা গিয়েছে— মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, আমলারাও বিপুল কৃষি জমির মালিক। এক এক জনের মালিকানায় ২৫ একরেরও বেশি জমি। বণিকসভাগুলির দাবি, সার ও বিদ্যুতে আধারের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভর্তুকি দেওয়া চালু হলে উপকৃত হবে প্রকৃত গরিব চাষিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE