গত ৩২ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত ত্রিপুরার সীমান্ত-ঘেঁষা কৈলাসহর বিমানবন্দরটিকে ফের চালু করতে পদক্ষেপ করল কেন্দ্রীয় সরকার। গত কাল এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এএআই)-র এক প্রতিনিধিদল ঊনকোটি জেলার এই বিমানবন্দরটি পরিদর্শন করে। আজ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধিদলটি। এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন এএআই-এর উত্তর-পূর্বের আঞ্চলিক নির্বাহী পরিচালক এম রাজু কিশোর, আগরতলা এমবিবি বিমানবন্দরের ডিরেক্টর কে সি মিনা, ঊনকোটি জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক এল ডার্লং, মহকুমাশাসক প্রদীপ সরকার-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে উত্তর-পূর্ব বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সঙ্গে দেখা করে কৈলাসহর বিমানবন্দর দ্রুত চালু করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন মানিক।
এই বিমানবন্দরটি চালু করার দাবিতে স্থানীয় মানুষেরা-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন একাধিক বার আন্দোলন করেছে। জেলার প্রবীণেরা জানান, ১৯৭১-এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে এই বিমানবন্দরটির গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বিমানবন্দরটি ফের চালু হলে ত্রিপুরার পাশাপাশি অসমের কাছাড় জেলার বাসিন্দারাও উপকৃত হবেন। অবশেষে এ নিয়ে তৎপর হয়েছে কেন্দ্র।
বিভিন্ন সূত্রের দাবি, শিলিগুড়ি করিডর বা চিকেন’স নেকের খুব কাছে বাংলাদেশের লালমণিরহাটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নির্মিত একটি বিমানঘাঁটিকে চিনের সহযোগিতায় পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই উপমহাদেশের বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কৈলাসহর বিমানবন্দর চালু করা নিয়ে ভারত সরকারের তৎপরতাকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে তাৎপর্যপূর্ণ মনে হচ্ছে অনেকের। যদিও স্থানীয়দের একাংশের দাবি, বিষয়টিতে সেই অর্থে নতুনত্ব নেই। কৈলাসহর বিমানবন্দর নিয়ে সরকারি স্তরে নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে অনেক বছর আগেই। এএআই-এর বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি দল আগেও বিমানবন্দরটি পরিদর্শন করেছিল।
বিমানবন্দর পরিদর্শনের পরে আগরতলা বিমানবন্দরের ডিরেক্টর কে সি মিনা বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের অনুরোধে এবং বিমান মন্ত্রকের নির্দেশে আমরা এসেছি। বিমানবন্দরের পরিকাঠামো, জমি, দৃশ্যমানতার অবস্থা ও অন্যান্য কারিগরি দিক নিয়ে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।’’ এএআই কর্তা রাজু কিশোর জানান, বিমানবন্দরটিকে ফের চালু করার বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিকল্পনা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে কী ধরনের পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে, সে বিষয়েও মূল্যায়ন চলছে।
২০১৮-র নির্বাচনের আগে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, রাজ্যে তাদের সরকার ক্ষমতায় এলে এই বিমানবন্দরটি চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ত্রিপুরার পরিবহণমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানিয়েছিলেন, কৈলাসহরের রানওয়ের সংস্কার করে ছোট বিমান চালানোর ব্যবস্থা করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সেখানে বড় বিমান নামানোর উপযোগী অত্যাধুনিক বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে এএআই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)