Advertisement
E-Paper

ইউজিসি-বিধি বদলে বাড়তি স্বশাসন শিক্ষায়

পশ্চিমবঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠছে বারে বারে। আর ঠিক এর বিপরীতে গিয়ে সামগ্রিক ভাবেই দেশের কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি স্বশাসন দেওয়ার পথে হাঁটছে কেন্দ্র।

মধুমিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৮

পশ্চিমবঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠছে বারে বারে। আর ঠিক এর বিপরীতে গিয়ে সামগ্রিক ভাবেই দেশের কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি স্বশাসন দেওয়ার পথে হাঁটছে কেন্দ্র।

বুধবার বাজেট পেশ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়ে দেন, কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যাতে আরও স্বশাসনের অধিকার দেওয়া যায়, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র বিধি সংস্কার করা হবে। শিক্ষা আর প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আরও বেশি স্বশাসন দেওয়া হবে উচ্চ মানের কলেজগুলিকে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কতটা বেশি স্বশাসন দেওয়া যেতে পারে, সেটা নির্ধারিত হবে তাদের মানের ভিত্তিতে।

এখন ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল বা নাক-এর মাধ্যমে দেশ জুড়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা-মানের মূল্যায়ন করা হয়। এ রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও এই মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর সঙ্গে ২০১৫ সাল থেকে কেন্দ্র চালু করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট র‌্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক (এনআইআরএফ)। এই নতুন ব্যবস্থায় প্রতি বছরই মান অনুযায়ী সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রম-তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

কলেজ-সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বশাসনের মাত্রা বাড়ানোর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলার শিক্ষা শিবিরের বড় অংশ। শিক্ষায় স্বশাসনের প্রশ্নে এখানকার শিক্ষাবিদদের অনেকেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাঁদের কারও কারও অভিযোগ, এ রাজ্যে গত ৪০ বছর ধরে শিক্ষাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা চালাচ্ছে শাসক দল। বাম জমানায় এই প্রবণতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, বলা হতো, শিক্ষার ‘অনিলায়ন’ হয়েছে। বামফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএমের তরফে শিক্ষার ভারপ্রাপ্ত অনিল বিশ্বাসকে কটাক্ষ করেই এই অভিধার ব্যবহার চলছিল আকছার। তৃণমূল আমলে শিক্ষাকে রাজনীতির কব্জায় আনার সেই প্রবণতা আরও প্রকট হয়েছে বলে মন্তব্য করে এক শিক্ষাবিদ বলেন, ‘‘সিপিএম ৩৪ বছর ধরে ধীরে ধীরে শিক্ষা ক্ষেত্রে দলতন্ত্র কায়েম করেছিল। শিক্ষার ‘অনিলায়ন’ কিন্তু তৃণমূল আমলেও বন্ধ হয়নি।’’ এমনকী শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভার আসন্ন অধিবেশনে যে-শিক্ষা বিল পেশ করতে চলেছেন, তার বিভিন্ন ধারায় উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের স্বাধিকারকে সম্পূর্ণ খর্ব করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজ্য সরকারের খবরদারির অভিযোগ নিয়ে পার্থবাবুর বরাবরের বক্তব্য, তাঁরা যে-হেতু টাকা দেন, তাই শিক্ষায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন। কেন্দ্র যে কলেজ-সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও স্বশাসন দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, সেটাকে কোনও গুরুত্বই দিতে চাইছেন না তিনি। মূল বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ইউজিসি আবার কী স্বাধিকার দেবে? ওরাই তো ইচ্ছামতো আমাদের উপরে সব কিছু চাপিয়ে দেয়! আর আমাদের তা মানতে হয়।’’

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণাকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না। সংগঠনের সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসুর অনুযোগ, রাজ্যের যে-সব কলেজ ইউজিসি-র বিচারে ‘কলেজ উইথ পোটেনশিয়াল এক্সেলেন্স’ হচ্ছে, তাদেরও তো অনুদান পেতে বছর ঘুরে যাচ্ছে! গত বছর যারা এই স্বীকৃতি পেয়েছে, তারা এখনও অনুদানের টাকা পায়নি। এই অবস্থায় কলেজকে আরও বেশি স্বশাসন দেওয়ার ঘোষণায় তিনি খুবই সন্দিহান বলে জানান কৃষ্ণকলিদেবী। এ রাজ্যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাধিকারে হস্তক্ষেপের যে-অভিযোগ উঠছে, তা-ও মানতে রাজি নন তিনি। কৃষ্ণকলিদেবী বলেন, ‘‘নিজে কলেজ চালিয়েছি। এই ধরনের পরিস্থিতির (হস্তক্ষেপের) মুখে কখনও পড়িনি।’’

পার্থবাবু, কৃষ্ণকলিদেবী যা-ই বলুন, রাজ্যের অধিকাংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠনই অবশ্য কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এই পরিকল্পনার সুযোগ নিয়ে স্বেচ্ছাচার করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা-র সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজের সন্দেহ, ‘‘কেন্দ্র যে-স্বশাসনের পরিকল্পনা করেছে, তাতে আসলে লাভবান হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। স্বশাসনের ক্ষমতা পেয়ে তারা নিজেদের মতো করে চলার বাড়তি সাহস পাবে।’’

বাড়তি স্বশাসনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েও অন্য আশঙ্কায় ভুগছেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বভারতীয় সংগঠন এআইফুকটো-র সভাপতি কেশব ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, আরও স্বশাসন দেওয়ার নামে যদি কলেজগুলিকে নিজেদের খরচের টাকা নিজেদেরই সংগ্রহ করে নিতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়, তা হলে কিন্তু আখেরে বিপদে পড়বে কলেজগুলিই। ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিষয়গুলি আরও পরিষ্কার করে জানানো উচিত,’’ বলছেন কেশববাবু।

UGC College Budget 2017
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy