Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

হাতুড়েদের ছাড়পত্র!

গত সরকারের আমলে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন বিল পেশ করে বলেছিলেন, ছ’মাসের একটি ব্রিজ কোর্স করলেই অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করতে পারবেন হোমিওপ্যাথ ও আয়ুষ চিকিৎসকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০১:৫৭
Share: Save:

ব্রিজ কোর্সের প্রস্তাব বাদ দিলেও জনস্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগে অনড় নরেন্দ্র মোদীর সরকার। মাত্র ছ’মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েই ভবিষ্যতে যাঁরা অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করতে পারবেন! এ নিয়ে সমস্বরে আপত্তি তুলেছেন বিরোধীরা।

গত সরকারের আমলে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন বিল পেশ করে বলেছিলেন, ছ’মাসের একটি ব্রিজ কোর্স করলেই অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করতে পারবেন হোমিওপ্যাথ ও আয়ুষ চিকিৎসকেরা। প্রবল আপত্তি জানান বিরোধীরা ও চিকিৎসকেরা। লোকসভার মেয়াদ শেষ হতেই বাতিল হয়ে যায় বিলটি। নতুন করে বিলটি পেশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানান, ব্রিজ কোর্সের প্রসঙ্গ রাখা হয়নি। তবে জনস্বাস্থ্য কর্মীদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট শংসাপত্র পেলে তাঁরা রোগীকে ‘মর্ডান মেডিসিন’ দিতে পারবেন। দেশে, বিশেষ করে গ্রামে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। মূলত গ্রামে তাঁদের নিয়োগ করা হবে হলে জানান হর্ষ। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেব, সরকার প্রায় তিন লক্ষ জনস্বাস্থ্য কর্মীকে শংসাপত্র দেওয়ার কথা ভাবছে।

কংগ্রেস সাংসদ এন কে রাঘবনের মতে, ‘‘এতে এমন এক দল হাতুড়ে চিকিৎসক তৈরি হবে, যাঁদের উপর সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।’’ জনস্বাস্থ্য কর্মীদের ওই নিয়োগ আসলে হাতুড়েদের অ্যালোপ্যাথি ওষুধ দেওয়ার ছাড়পত্র বলে আজ এক যোগে সরব হন বিরোধীরা। ওই জনস্বাস্থ্য কর্মীরা কোথা থেকে, কী ভাবে, কিসের শংসাপত্র পেলে ‘মর্ডান মেডিসিন’ দিতে পারবেন, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই বিলে। মন্ত্রী হর্ষও এ নিয়ে বিশদে কিছু বলতে চাননি।

গ্রামীণ এলাকায় এঁদের নিয়োগের ভাবনাটির কড়া নিন্দা করেন তৃণমূলের কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তাঁর কথায়, ‘‘তার মানে হল, গ্রামের মানুষকে হাতুড়েদের ভরসায় ছেড়ে রাখতে চাইছে সরকার! গ্রামীণ ভারতের কি বাঁচার অধিকার নেই? নাকি হাতুড়েদের হাতে তাঁদের ছেড়ে দিয়ে জনসংখ্যা কমাতে চাইছে সরকার?’’ পরে নিজের জবাবে হর্ষ অবস্থান পাল্টে বলেন, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসকদের সাহায্য করবেন ওই জনস্বাস্থ্য কর্মীরা।

প্রায় সাড়ে চার বছর পাঠ নেওয়ার পরে ওষুধ দেওয়ার অধিকার পান এক জন চিকিৎসক। সেখানে কী ভাবে এক জন হাতুড়ে মাত্র ছ’মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে সেটা করবেন? সরকারের যুক্তি, জ্বর-পেট খারাপের মতো খুব সাধারণ রোগের ওষুধ দেবেন ওই কর্মীরা। কিন্তু কাকলি বলেন, ‘‘না-বুঝে চিকিৎসা করলে পেট খারাপের ওষুধেও রোগীর মৃত্যু ঘটে।’’ অনেক বিরোধী সাংসদই এক সুরে বলেন, ‘‘হাতুড়েদের ভুল চিকিৎসায় লোকের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপরে ভরসা আরও কমে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE