Advertisement
E-Paper

খাদ্য সংরক্ষণে তেজস্ক্রিয় প্রযুক্তি চায় কেন্দ্র

সরকারের কাজকর্ম থেকে শুরু করে জনসংযোগ, এমনকী সার্ক দেশগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রেও প্রযুক্তি ব্যবহারের উপরে বিশেষ জোর দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বার খাবার-দাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতেও তিনি ভরসা রাখছেন পরমাণু প্রযুক্তির উপরে।

শঙ্খদীপ দাস

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৮

সরকারের কাজকর্ম থেকে শুরু করে জনসংযোগ, এমনকী সার্ক দেশগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রেও প্রযুক্তি ব্যবহারের উপরে বিশেষ জোর দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বার খাবার-দাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতেও তিনি ভরসা রাখছেন পরমাণু প্রযুক্তির উপরে। সৌজন্যে দেশের পরমাণু শক্তি কমিশন ও ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

দেশে খাবার-দাবারের দাম হু-হু করে বাড়ছে অনেক কারণে। জোগানের অভাব তার একটি। আবার খাদ্যসামগ্রীর প্রচুর উৎপাদনের পরেও দেখা যাচ্ছে, তা সংরক্ষণ ও মজুত করার ব্যবস্থা নেই। ফলে বাড়তি ফলন হলে চাষিরা কখনও রাস্তায় ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন আলু-টোম্যাটো বা অন্য শাকসব্জি-ফল। অথচ আকালের বাজারে সেই টোম্যাটোই বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে!

চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য এলে অপচয় ও দাম বেড়ে যাওয়ার সমস্যা, দুই-ই সামলানো সম্ভব। প্রযুক্তির ভরসায় মোদী দু’ ভাবে সেই ভারসাম্য গড়ে তুলতে চান। তার প্রথমটি হল, ইন্টারনেট যোগাযোগের মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থাকে আধুনিক করে তোলা, পণ্য মজুতের ই-তথ্যভাণ্ডার গড়া। এর পাশাপাশি, সব্জি-ফল সংরক্ষণ ও মজুতের ব্যবস্থাকেও আধুনিক করে তোলা। তেজস্ক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে পচনশীল খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণের পরিকল্পনা নিচ্ছে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আগামিকাল এ নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী।

ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে তেজস্ক্রিয়তার মাধ্যমে মহারাষ্ট্রের নাসিকে পেঁয়াজ ও আলু সংরক্ষণের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প চলছে। নাগপুরের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকায় তাঁকেই এই মন্ত্রিগোষ্ঠীর নেতা করেছেন মোদী। আগামিকালের বৈঠকে কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান, কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। তাঁদের সামনে তেজস্ক্রিয় প্রযুক্তির মাধ্যমে খাদ্য সংরক্ষণ নিয়ে একটি ‘প্রেজেন্টেশন’ দেবেন পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনিল কাকোদকর এবং ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের খাদ্য-প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান এ কে কোহলি।

খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণে কী ভাবে তেজস্ক্রিয়তার প্রযোগ করা সম্ভব, আদৌ তা নিরাপদ কি না, এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেবেন তাঁরা। কারণ, এই কথাগুলিই দেশের মানুষ সবার আগে জানতে চাইবেন। খাদ্য মন্ত্রকের এক যুগ্মসচিব আজ জানান, কোবাল্ট-৬০ থেকে বেরোনো গামা রশ্মি খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে দিয়ে চালিত করলে তা ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী ও পোকামাকড় মেরে ফেলে। এই রশ্মি কিছুটা অতিবেগুনি রশ্মি বা মাইক্রোওয়েভের মতো। তবে খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে দিয়ে গেলে গামা রশ্মি তার উত্তাপ বাড়ায় না।

ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করে খাদ্য সংরক্ষণের চেয়ে এই ব্যবস্থা তুলনায় নিরাপদ। এতে খাদ্যসামগ্রীর তাজা ভাব নষ্ট হয় না। খাদ্যসামগ্রীতে বিষাক্ত রাসায়নিক থেকে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না। তার চেয়েও বড় কথা এই পদ্ধতি খাবারকে তেজস্ক্রিয় করে তোলে না। কোবাল্ট-৬০ থেকে বেরোনো গামা রশ্মি ততটা শক্তিশালী নয়। এ ছাড়া খাদ্যসামগ্রী সরাসরি তেজস্ক্রিয় রশ্মির উৎসের সংস্পর্শে আনা হয় না। ফলে খাদ্যে তেজস্ক্রিয়তা তৈরির আশঙ্কাও থাকে না।

খাদ্য মন্ত্রকের ওই সচিব জানান, আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স-সহ বিশ্বের ৪২টি দেশ ইতিমধ্যেই তেজস্ক্রিয়তার মাধ্যমে খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থায় ছাড়পত্র দিয়েছে। নয়াদিল্লিও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আলু, পেঁয়াজ, চাল, সুজি, আটা, ময়দা, আম, খেজুর, আদা, রসুন, মশলা ও মাংস সংরক্ষণে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। তেজস্ক্রিয়তার মাধ্যমে খাদ্য সংরক্ষণ ও মজুত ভাণ্ডার গড়ে তোলার জন্য আর্থিক ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। এ বিষয়ে বেসরকারি স্তরে উদ্যোগ নেওয়া হলে ৪% হারে ঋণ দেবে সরকার। সেই সঙ্গে প্রথম বছর সুদের ওপর ‘মোরাটোরিয়াম’ থাকবে।

তবে তেজস্ক্রিয় প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন, কিছু ডেয়ারিজাত খাদ্যসামগ্রীর বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ অটুট রাখতে পারে না এই পদ্ধতি। ডিম সংরক্ষণেও এই প্রযুক্তি ব্যবহারের অসুবিধা রয়েছে। গডকড়ী আজ এই প্রসঙ্গে বলেন, “সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্রগুলি এড়িয়েও খাদ্য সংরক্ষণে যুগান্ত ঘটাতে পারে এই ব্যবস্থা।” মজা করে তিনি বলেন, “সফল ভাবে এই পরিকল্পনা রূপায়ণ করতে পারলে খাদ্যসামগ্রীর দাম বাড়া নিয়ে ভবিষ্যতে আর মানুষের অসন্তোষের মুখে পড়তে হবে না সরকারকে। আখেরে লাভ সেটাই।”

radio active food processing sankhadeep das
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy