Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আত্মসমর্পণ করেননি রাজন, বোঝাতে তৎপর গোয়েন্দারা

তিনি ধরা দেননি, বরং গোয়েন্দারাই তাঁকে ধাওয়া করে পাকড়াও করেছেন-এই প্রচারেই আপাতত ব্যস্ত সিবিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:২২
Share: Save:

তিনি ধরা দেননি, বরং গোয়েন্দারাই তাঁকে ধাওয়া করে পাকড়াও করেছেন-এই প্রচারেই আপাতত ব্যস্ত সিবিআই।

দাউদ ইব্রাহিমের পয়লা নম্বর দুশমন রাজনের সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দাদের যোগ নিয়ে জল্পনা হয়েছে বিস্তর। কোনও কোনও শিবিরের মতে, দাউদের সঙ্গে লড়াইয়ে ক্রমশ শক্তিহীন হয়ে পড়া রাজন প্রাণ বাঁচাতেই ইন্দোনেশিয়ায় ধরা দিয়েছেন। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হেফাজতে থাকাই এখন তাঁর পক্ষে নিরাপদ। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে মোহন কুমারের নামে
নেওয়া জাল পাসপোর্ট-সহ ধরা পড়েছেন রাজন। সূত্রের খবর, বালি বিমানবন্দরে নাম জানতে চাওয়ায় মোহন কুমারের বদলে নিজের আসল নামই জানান ওই মাফিয়া ডন। স্বভাবতই ধরা দেওয়ার তত্ত্ব আরও জোরদার হয়েছে।

কিন্তু সিবিআই সূত্রের দাবি, বিষয়টি মোটেই তা নয়। অনেক দিন ধরেই রাজনের উপরে নজর রাখছিল সিবিআই। মোহন কুমার ছদ্মনামেই ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বাস করছিলেন রাজন। প্রথমে পর্যটকের ভিসা নিয়ে সে দেশে গেলেও, পরে অস্ট্রেলিয়ায় থাকার মেয়াদ অনৈতিক ভাবে বার বার বাড়িয়ে নিতে পেরেছিলেন ওই মাফিয়া ডন।

সিবিআই অফিসারদের দাবি, ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস রয়েছে এমন অপরাধীদের ধরতে এপ্রিল মাসে বৈঠকে বসেছিলেন ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষ। তখন ছোটা রাজনের বিষয়টি অস্ট্রেলিয়াকে জানায় দিল্লি। রাজনের থাকার মেয়াদ আর না বাড়াতে অনুরোধ করা হয়। সেই অনুরোধ রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া।

অস্ট্রেলিয়ায় থাকার আর্জি খারিজ হতেই মরিয়া হয়ে অন্য দেশে পালানোর চেষ্টা শুরু করেন রাজন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তাঁর ব্যবসা দেখাশোনার সুবিধে হবে বলে আশ্রয় হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার বালিকে বেছে নেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া ইন্টারপোলের কাছ থেকে রাজনের বালিতে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানতে পারেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। তার পরেই ইন্দোনেশিয়া ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, রাজনের কাছ থেকে ভারতীয় মূল্যে দশ লক্ষ টাকা ও ১৫ সেট জামাকাপড় পাওয়া গিয়েছে। তা থেকেই প্রমাণ হয়, তিনি বালিতে স্থায়ী ভাবে থাকতে এসেছিলেন। ধরা দিতে নয়। তা ছাড়া রাজন বালির বিমানবন্দরে আত্মসমর্পণের নথিতে স্বাক্ষর করতেও রাজি হননি বলে দাবি সিবিআই সূত্রের। ওই নথিতে স্বাক্ষর করলে তাঁকে তখনই ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হত।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে তৈরি হওয়া মোট কুড়িটি পাসপোর্ট রাজনের কাছ থেকে উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৫ সালে রাজনের নামে রেড কর্নার নোটিস জারি হয়। ঠিক তার পরের বছর বিজয় কদম নামে একটি পাসপোর্ট বানান ছোটা রাজন। সেই পাসপোর্টের সাহায্যে ২০০০ সালে ব্যাঙ্কক যান তিনি। সেখানেই তাঁর উপরে হামলা চালায় দাউদ ইব্রাহিমের লোকেরা। এর পর বিজয় কদম নামের পাসপোর্টটি বাতিল করে দিয়ে মোহন কুমারের নামে পাসপোর্টটি বানান রাজন। যার সাহায্যে প্রথমে জিম্বাবোয়ের হারারে, পরে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছন তিনি। গত বারো বছর ধরে অস্ট্রেলিয়াই ছিল রাজনের প্রায় স্থায়ী ঠিকানা।

বস্তুত মোহন কুমারের নামে জাল পাসপোর্ট রাখার অভিযোগেই আপাতত রাজনকে হেফাজতে নিয়েছে সিবিআই। কারণ, রাজনের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্র ও দিল্লি পুলিশের হাতে থাকা মামলাগুলি তাদের হাতে আসার প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। সূত্রের খবর, গত কাল গভীর রাতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পেশ করা হয় রাজনকে। তাঁর ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chhota Rajan surrender arrested CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE