Advertisement
E-Paper

জলসীমায় তিন দিক দিয়ে ঘিরে ফেলেছে ভারত, ঘোর দুশ্চিন্তায় বেজিং

দক্ষিণ চিন সাগরে চিন-আমেরিকা দ্বৈরথ নিয়ে বিশ্ব সরগরম। নিজেদের এলাকা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক জলসীমায় কর্তৃত্ব কায়েমের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে চিনের বিরুদ্ধে। তার জেরেই মার্কিন ডেস্ট্রয়ারের চিন সাগরে হানা দেওয়া। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে বাধ্য, চিনের অভিসন্ধি পূরণে মূল বাধা আমেরিকাই। কিন্তু প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীরবে কৌশল সাজিয়ে চিনের পথে সবচেয়ে বড় কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে ভারত।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৪:৩২

দক্ষিণ চিন সাগরে চিন-আমেরিকা দ্বৈরথ নিয়ে বিশ্ব সরগরম। নিজেদের এলাকা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক জলসীমায় কর্তৃত্ব কায়েমের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে চিনের বিরুদ্ধে। তার জেরেই মার্কিন ডেস্ট্রয়ারের চিন সাগরে হানা দেওয়া। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে বাধ্য, চিনের অভিসন্ধি পূরণে মূল বাধা আমেরিকাই। কিন্তু প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীরবে কৌশল সাজিয়ে চিনের পথে সবচেয়ে বড় কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে ভারত।

ঠিক কী ভাবে চিনের পথে কাঁটা বিছিয়েছে ভারত?

প্রথম কাঁটা ভারত মহাসাগরে চিনের প্রবেশপথকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসা।

দ্বিতীয় কাঁটা, আমেরিকা-জাপান-ভারত সামরিক অক্ষ তৈরি করে চিনের নাকের ডগায় নৌ-যুদ্ধের মহড়া শুরু করা।

তৃতীয় কাঁটা অস্ট্রলিয়া, সিঙ্গাপুর-সহ চিন সাগরের আশেপাশে থাকা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করে চিনের জলসীমাকে সব দিক দিয়ে ঘিরে ফেলা।

ভারত যে ভাবে ঘুঁটি সাজিয়ে ফেলেছে, তাতে শি চিনফিং-এর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে বাধ্য। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরাই এমনটা মনে করছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ভিয়েতনামের দক্ষিণ প্রান্তে নৌঘাঁটি বানিয়ে চিনকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছে ভারত। চিনের পণ্যবাহী জাহাজ বা যুদ্ধজাহাজকে ভারত মহাসাগরে ঢুকতে হলে মালাক্কা প্রণালী হয়েই ঢুকতে হয়। এই জলপথ ভিয়েতনামের জলসীমার গা দিয়েই গিয়েছে। ভিয়েতনাম সরকারের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে ঠিক সেখানেই ভারতীয় নৌবাহিনী ঘাঁটি গেড়েছে। প্রতি বছর নৌবহরের আকার বাড়াতে বাড়াতে ভিয়েতনামের বন্দরে এখন ভারী উপস্থিতি ভারতীয় নৌসেনার। পরিস্থিতি কখনও উত্তপ্ত হলে ভিয়েতনামের জলসীমা ঘেঁষে চিনা জাহাজের যাতায়াত প্রায় অসম্ভব করে তুলতে পারে ভারত। এই বিষয়ে বেজিং এখন বেজায় চিন্তিত। ভিয়েতনামের জলসীমায় তথা চিন সাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর উপস্থিতি বাড়তে দেখে নয়াদিল্লিকে একাধিক বার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেজিং। কিন্তু, নয়াদিল্লি তাতে কর্ণপাত করেনি। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর ‘লুক ইস্ট’ নীতি বদলে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি ঘোষণা করেছেন। সেই নীতি অনুসারে চিনের হুমকির তোয়াক্কা না করে দিন দিন ভিয়েতনামের বন্দরে ভারতীয় নৌবহরের আকার বেড়েই চলেছে। তার সঙ্গে ভিয়েতনামের সেনাকে অত্যাধুনিক সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে দু’দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করা হচ্ছে। ভিয়েতনামকে ভারত আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করছে বলেও সূত্রের খবর।

ভারত-আমেরিকা-জাপান নৌ-মহড়া চিনের মাথাব্যাথার আর এক বড় কারণ। বিশ্বের তিন বৃহৎ শক্তি চিনের জলসীমা ঘেঁষে নৌবহর নিয়ে যাতায়াত করছে, হাতে হাত মিলিয়ে যুদ্ধের মহড়া দিয়ে শক্তি প্রদর্শন করছে। এই পরিস্থিতি চিনের পক্ষে মোটেই সুখকর নয়।

এখানেই থামেনি ভারত। চিন সাগরের বুকে বা তার কাছাকাছি অবস্থিত যে সব দেশের সঙ্গে চিনের উল্লেখযোগ্য সুসম্পর্ক নেই, তাদের সঙ্গে সরাসরি সামরিক জোট বেঁধেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুর এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। চিন সাগর ও ভারত মহাসাগরে অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের নৌবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে ভারতীয় নৌবাহিনী। যে কোনও সমস্যায় পরস্পরের সহায়তায় ছুটে আসার জন্য এই তিন দেশের নৌবাহিনী প্রস্তুত।

ভারত মহাসাগরে চিনের প্রবেশপথে পাহারা বসিয়ে আর চিনের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভিয়েতনাম, দক্ষিণে সিঙ্গাপুর, আরও দক্ষিণে অস্ট্রেলিয়া এবং পূর্বে জাপানের সঙ্গে সামরিক জোট গড়ে চিনের জলসীমাকে ধীরে ধীরে সব দিক থেকে যে ভাবে ঘিরে ফেলেছে নয়াদিল্লি, সেই জাল কেটে বেরনোর পথ এখন খুঁজে পাচ্ছে না বেজিং। ভারত আস্ফালন না করে ধীরে ও নীরবে কাজ হাসিল করেছে। এখন ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর আর চিন সাগরে মহড়া চলছে বছর বছর। বেজিং এই সব সামরিক অক্ষ নিয়ে মাঝেমধ্যে চড়া বিবৃতি দিচ্ছে ঠিকই। তবে পরিস্থিতি যে হাতের বাইরে, বেজিং নাকি তা ভালই বুঝতে পারছে। বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা।

china india delhi water war MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy