তাঁর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে জল্পনা ছিল। এনডিএ ভোটে জিতলেও তিনি আর মুখ্যমন্ত্রী হবেন কি না, তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। এনডিএ-র নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে তিনি এলেও একটি কথাও বলেননি। ২৬ সেকেন্ডের মধ্যে ইস্তাহার হাতে ছবি তুলে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও শারীরিক অসুস্থতার জল্পনায় জল ঢেলে বিহারের ভোটে ৭১টি জনসভা করেছিলেন।
সেই নীতীশ কুমার বিহারের নির্বাচনে এনডিএ-র বিপুল জয়ের ২৪ ঘণ্টা পরেও প্রকাশ্যে এলেন না। নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে ‘বিজয় ভাষণ’ দিয়েছেন। কিন্তু নীতীশ তাঁর এক্স-হ্যান্ডলে বিহার জয় নিয়ে দু’তিনটি বাক্য লেখা ছাড়া মুখ খোলেননি।
নীতীশ কুমারের এই অনুপস্থিতি নিয়ে যখন প্রশ্ন ও সংশয় আরও গভীর হচ্ছে, তখন শনিবার সকালে নীতীশের ছবি দেখা গিয়েছে তাঁর এক কালের প্রতিদ্বন্দ্বী চিরাগ পাসোয়ানের সঙ্গে। লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)-র প্রধান শনিবার সকালে নীতীশের বাড়িতে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন। চিরাগের প্রকাশিত ছবিতেই দেখা গেল, নীতীশের মুখে উষ্ণ হাসি, আলিঙ্গনাবদ্ধ, হাতে ফুল। যদিও দৃষ্টিতে সেই তীক্ষ্ণতা নেই। যেমন পটনায় এনডিএ-র ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানেও তিনি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হলেও তিনি কত দিন গদিতে থাকবেন?
এনডিএ শিবির অবশ্য বলছে, নতুন সরকারে ফের নীতীশ কুমারই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। সে ক্ষেত্রে দশম বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে রেকর্ড করবেন তিনি। গত কুড়ি বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও বার বার জোট বদলের জন্য ন’বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে ফেলেছেন নীতীশ। এ বার কবে শপথগ্রহণ হবে, তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সময়ের উপরে নির্ভর করছে বলে জেডিইউ সূত্রের বক্তব্য। আজ সন্ধেবেলা দিল্লিতে অমিত শাহের বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন জেডিইউ নেতা সঞ্জয় ঝা। সরকার গঠন নিয়েই তাঁদের মধ্যে কথা হয় বলে খবর। তার পর অমিতের কাছে আসেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। সেই বৈঠকে জেডিইউ-এর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীবরঞ্জন লল্লন সিংহও ছিলেন।
চিরাগ পাসোয়ান এ বার ১৯টি আসনে জিতে এনডিএ-র নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছেন। চিরাগ কি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিত্ব ছেড়ে পাটলিপুত্রের জোট সংসারে উপমুখ্যমন্ত্রী হতে চাইবেন? নীতীশের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে চিরাগ বলেন, ‘‘বিধায়করা ঠিক করবেন, কে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী বা উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন। আমার মত, নীতীশ কুমারেরই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে থাকা উচিত।’’
বিজেপি শিবির এখনও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে মুখ খোলেনি। তবে নীতীশের সাফল্যের পরে বিজেপির পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে ‘খেলা’ দেখানো মুশকিল। বিজেপি যেখানে ৮৯টি আসন জিতেছে, নীতীশের জেডিইউ এ বার শক্তি বাড়িয়ে ৮৫টি আসন দখল করেছে। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের প্রাথমিক হিসাব ছিল, জেডিইউ বিহারে দুর্বল হয়ে পড়লে জাতীয় রাজনীতিতে শরিক-নির্ভর মোদী সরকারের পক্ষে তা সুবিধাজনক হবে। প্রয়োজনে জেডিইউ-কে ভাঙানোটাও বিজেপির রাজনৈতিক ম্যানেজারদের পক্ষে সহজ হবে। কিন্তু এখন বিহারে নীতীশের জেডিইউ-কে বাদ দিয়ে বাকি এনডিএ শরিকদের নিয়ে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পৌঁছতে পারবে না। এনডিএ শিবির বলছে, বিহারের ফল প্রকাশের পরে নরেন্দ্র মোদী নিজেই একে ‘সুশাসনের জয়’ বলে আখ্যা দিয়ে নীতীশের মুখ্যমন্ত্রিত্বে সিলমোহর দিয়ে রেখেছেন। আজ চিরাগও বলেছেন, তিনি নীতীশকে চান। এই চিরাগই পাঁচ বছর আগে নীতীশের সঙ্গে রেষারেষির জেরে এনডিএ-র বাইরে থেকে ভোটে লড়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘পিএম মোদীসে বৈর নহি, নীতীশ তেরা খৈর নহি।’ আজ চিরাগ মেনে নিয়েছেন, এর ফায়দা আরজেডি পেয়েছিল।
বিজেপি শিবির অবশ্য মনে করছে, নতুন সরকারের অর্ধেক মেয়াদ পার হলেই মুখ্যমন্ত্রী পদে বদল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিজেপির কোনও নেতা প্রথম বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। জেডিইউ-কে সঙ্গে রাখতে প্রয়োজনে নীতীশের পুত্র নিশান্ত কুমারকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে। নিশান্ত এখনও সক্রিয় রাজনীতিতে আসেননি। জেডিইউ-এর অধিকাংশ নেতা অবশ্য তাঁকেই নীতীশের উত্তরসূরি হিসেবে দেখতে চান। জেডিইউ-এর বাকি শীর্ষ নেতারা এমনিতেই বিজেপির দিকে ঝুঁকে রয়েছেন। আজ জেডিইউ-এর সঞ্জয় ঝা বলেছেন, ‘‘গত কুড়ি বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সুশাসন বিহারের ভোল পাল্টে দিয়েছে। তার সঙ্গে কেন্দ্রে এনডিএ সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারকে বিপুল সাহায্য করেছেন। আমরা তাই জয়ের বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)