অসম সরকারের অনুরোধে ও সিআইডি-র সমনে সাড়া দিয়ে সিঙ্গাপুরে জ়ুবিন গর্গের মৃত্যুর সময় ইয়টে থাকা ১১ জন প্রবাসী অসমিয়ার মধ্যে ৫ জন সোমবার সিআইডি দফতরেহাজির হলেন।
রূপকমল কলিতা আগেই কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হয়েছেন। এ দিন সকালে সিআইডি দফতরে হাজির হন পরীক্ষিৎ শর্মা, সিদ্ধার্থ বরা এবং জিওলাংসাট নার্জারি। বিকেলে আসেন ভাস্করজ্যোতি দত্ত। সকলকে আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করে, জ়ুবিনকে নিয়ে ইয়ট পার্টির আয়োজন করা, আগের দিন রাত পর্যন্ত পার্টি করা, ইয়ট পার্টির খানাপিনার বিবরণ ও মৃত্যুর আগে-পরের পূর্ণ ঘটনাক্রম যাচাই করা হয়। জ়ুবিন-মৃত্যু তদন্তে নেমে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) এখন পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করেছে। সিট ইয়টে থাকা আরও চারজন প্রবাসী অসমিয়াকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে। সিআইডি সিঙ্গাপুর পুলিশের থেকে সিসিটিভি ফুটেজ, ফরেনসিক রিপোর্ট-সহ বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ চেয়েছে। সিট সূত্রের খবর, গ্রেফতার হওয়া গায়িকা অমৃতপ্ৰভার মোবাইল ফোনে জ়ুবিনের মারা যাওয়ার ঘটনার পুরো ভিডিয়ো ছিল, যা সিঙ্গাপুরের এক ব্যক্তিকে দেওয়ার পরে মুছে ফেলা হয়েছিল। সেই ভিডিয়ো পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
সিআইডি আগামিকাল জ়ুবিনের ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক, বেশ কয়েক জন সম্পাদক ও সাংবাদিক, আসুর উপদেষ্টা ও সভাপতি, জ়ুবিনের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে মোট ১৫ জনকে ডেকেছে। জ়ুবিনের ময়না তদন্ত বা ভিসেরা রিপোর্ট জনসমক্ষে আনার দাবি ছিল। তা নিয়ে আইনি সমস্যা থাকায় জানা যাচ্ছে সিআইডি তদন্তে যা জানা গিয়েছে তা নিয়ে ওই ১৫ জনকে অবগত করবে।
সিটের প্রধান বিশেষ ডিজিপি মুন্না প্রসাদ গুপ্তা বলেন, “আগামী ২ দিনে সিঙ্গাপুরের আরও কয়েকজন আসবেন। ভিসেরা ও চূড়ান্ত ময়না তদন্তের প্রতিবেদন আমরা আদালতে জমা দেব। সিঙ্গাপুর পুলিশও তাদের তদন্তের জন্য আমাদের থেকে কিছু তথ্য চেয়েছে, তা দেওয়া হয়েছে।”
জ়ুবিনের স্ত্রী গরিমা শইকিয়া গর্গ 'দশ দিনের ভিতরে ন্যায় লাগবে' বলে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন। তার প্রেক্ষিতে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, অনতিবিলম্বে জ়ুবিনের মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ আদালতের সামনে প্রকাশ করা সম্ভব হবে। ভিসেরা রিপোর্ট থেকে সিআইডি তদন্তে এক নির্দিষ্ট দিক খুঁজে পেয়েছে।”
জ়ুবিন মৃত্যুর পরেও নজির গড়ে চলেছেন। এখন সোনাপুরে তাঁর শেষকৃত্যস্থলও তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। দূরপাল্লার নাইটসুপার বাসগুলি সমাধিস্থলের সামনে দাঁড়ায়। যাত্রীরা শ্রদ্ধা জানান। রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ জুবিনের সমাধিক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন। শনিবার রাতেও শতাধিক অনুরাগী সারা রাত জেগে জ়ুবিনের প্রিয় গানগুলি গেয়েছেন।
শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পাশাপাশি, জনতার প্রতিবাদের মঞ্চও হয়ে ওঠে সমাধিস্থল। স্লোগান ওঠে, ‘আমরা জ়ুবিনের জন্য প্রাণ দিতে পারি’, ‘তাঁর মৃত্যুর বিচার চাই’। হিমন্তের জ়ুবিনের নাম নিয়ে রাজনীতি করারও তীব্র নিন্দা করা হয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)