অভিযুক্ত হলেও বিচারপতিকে নাম ধরে সম্বোধন কেন? বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে নাম ধরে ডাকার ‘অপরাধে’ সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী ম্যাথিউস নেদুমপারাকে সকলের সামনেই ভর্ৎসনা করলেন প্রধান বিচারপতি বিআর গবই!
নগদকাণ্ডে নাম জড়ানোর পর দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে পাঠানো হয়েছে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে। সংসদে তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট-এর (অপসারণ) প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তবুও, তাঁর নামের সামনে সম্মানসূচক ‘বিচারপতি’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা উচিত, এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সোমবার নগদকাণ্ডে এফআইআর দায়ের করতে চেয়ে আবেদনের একটি জরুরি শুনানিতে এমন মন্তব্য করেছে বিচারপতি গবই এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ।
জানা গিয়েছে, শুনানি চলাকালীন আইনজীবী নেদুমপারা বার বার হাই কোর্টের বিচারপতিকে ‘বর্মা’ বলে উল্লেখ করছিলেন। তাতেই তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি গবই আইনজীবীকে বলেন, ‘‘উনি কি আপনার বন্ধু? উনি এখনও একজন বিচারপতি। আপনি তাঁকে কী ভাবে নাম ধরে সম্বোধন করছেন? কিছু ভদ্রতা বজায় রাখুন। মনে রাখবেন, আপনি একজন অভিজ্ঞ বিচারপতির বিষয়ে কথা বলছেন।’’
আরও পড়ুন:
এর পরেও মামলাটিকে জরুরি তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য চাপ দিতে থাকেন আইনজীবী। তখন বিচারপতি ফের প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কি চান মামলাটি এখনই খারিজ করে দেওয়া হোক?’’ তাতেও দমে না গিয়ে আইনজীবী নেদুমপারা বার বার জোর দিয়ে বলতে থাকেন, মামলাটি খারিজ করা যাবে না, অবিলম্বে এফআইআর নথিভুক্ত করার অনুমতি দিতে হবে। উত্তরে প্রধান বিচারপতি কড়া জবাব দেন, ‘‘দয়া করে আদালতকে নির্দেশ দেবেন না!’’
চলতি বছরের দোলের দিন দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বর্মার বাসভবনের গুদামে আগুন লেগে যায়। দমকলকর্মীরা আগুন নেবাতে গিয়ে আধপোড়া নোটের রাশি রাশি বান্ডিল উদ্ধার করেন। সেই থেকে নগদ-বিতর্কের সূত্রপাত। প্রথমে ওই বিচারপতিকে দিল্লি থেকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে সরিয়ে দেওয়া হয়। ক্রমে মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালত ওই ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য হাই কোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। মে মাসে ওই অনুসন্ধান কমিটি একটি মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে। তাতে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডের দিন বিচারপতি বর্মার বাসভবনের ভিতরে রাশি রাশি টাকার স্তূপ দেখেছিলেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীও। যদিও বিচারপতির দাবি, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না। সেই ঘটনাতেই এফআইআর দায়ের করতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, সোমবার বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন ২০০রও বেশি সাংসদ।