দীর্ঘ ২৮ মাস প্রতীক্ষার পরে তিনি মণিপুরে এলেন এবং দেখলেন ঠিকই। কিন্তু জয় করতে পারলেন পাহাড়় বা সমতলের মন। উল্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জোড়়া জনসভায় রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি ফেরার কোনও পোক্ত সমাধানসূত্র না মেলায় কুকি ও মেইতেই দুই পক্ষই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে। এমনকি আজ চূড়াচাঁদপুর রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। তার কারণ প্রধানমন্ত্রী না হলেও, উপলক্ষ তিনিই। গত কাল প্রধানমন্ত্রী কুকি এলাকা চূড়াচাঁদপুর ও মেইতেই এলাকা ইম্ফলের জনসভায় সংঘর্ষ থামানোর বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, হিংসা নয়, আলোচনাই হবে রাস্তা। পাহাড়় ও সমতলের মধ্যে মজবুত সেতুবন্ধন করতে হবে।” কিন্তু কুকিদের তিনি পৃথক প্রশাসনের আশ্বাস দেননি, মেইতেইদের ভরসা দেননি এনআরসি, বিদেশি বিতাড়়ন বা পাহাড় দিয়ে অবাধ চলাচলের। সেই সঙ্গে যে সব শিবিরবাসীকে মোদীর সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের পই পই করে বলে দেওয়া হয় কোনও অপ্রিয় প্রসঙ্গ তোলা চলবে না।
সমতলে মেইতেই মহিলা সংগঠন মোদীর সফর বয়কট করে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখায়। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ আটকায় পুলিশ। জঙ্গিদের যৌথ মঞ্চ প্রধানমন্ত্রীর সফর বয়কট করে বন্ধ ডাকে। সংঘর্ষে নিখোঁজ ৩৪ জনের পরিবারের যৌথ মঞ্চ সোলস্ প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকপত্র দিয়ে বলে, নিখোঁজদের দেহ মেলেনি বলে তাঁদের পরিবার কোনও ক্ষতিপূরণ বা সরকারি সাহায্য পাচ্ছে না। তারা দাবি করেছে, সুনামি ও উত্তরাখণ্ডের বন্যায় নিখোঁজদের ক্ষেত্রে যেমন “প্রেজিউমড ডেথ সার্টিফিকেট” দ্রুত জারি করা হয়েছিল, তেমন ব্যবস্থা এখানেও নেওয়া হোক। এ ছাড়়াও কয়েকটি মেইতেই সংগঠন প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে জাতীয় সড়়কে অবাধ চলাচল, সীমান্তে বেড়়া নির্মাণ সম্পূর্ণ করা, অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্তকরণ, ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম নিয়ন্ত্রণ, মণিপুরে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি প্রয়োগ, ভূমিপুত্রদের সাংবিধানিক সুরক্ষা এবং বাস্তুচ্যুতদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন, হারিয়ে যাওয়া নথি পুনরায় তৈরি করা, শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা, জীবিকা সহায়তা এবং নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানায়। মেইতেইদের একাংশের সান্ত্বনা, চূড়াচাঁদপুরের ২০ মিনিটের ভাষণে মোদী ৩৩ বার মণিপুর উচ্চারণ করেছেন। বিজেপির দাবি, এটাই প্রচ্ছন্ন ভাবে মণিপুরের অখণ্ডতা বজায় রাখার বার্তা ছিল।এ দিকে, পৃথক প্রশাসনের আশ্বাস দূরের কথা, যে ৮০০০ কোটির প্রকল্প মোদী উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন, তার মধ্যে নামমাত্র বরাদ্দ হয়েছে চূড়াচাঁদপুরের জন্য। তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন কুকিরা। তাঁরা আজ বলেন, মেইতেইরা মোদীর সফর বয়কট করেও ৯৯ শতাংশ উন্নয়নের বরাদ্দ পেল আর মোদীকে স্বাগত জানানোর পুরস্কারে কুকিদের কপালে জুটল মাত্র ১ শতাংশ! কুকিদের তরফে মোদীকে স্মারকপত্র পাঠিয়ে বলা হয়, পৃথক বিধানসভা-সহ কেন্দ্রশাসিত কুকি এলাকা বাদে অন্য কোনও সমাধানে তাদের আগ্রহ নেই।
কুকিদের আরও আক্ষেপ, মিজ়োরামের মতো ইংরেজিতে ভাষণ দেওয়া উচিত ছিল মোদী। তাঁর সংস্কৃত ঘেঁষা হিন্দি অনেকে বুঝতে পারেননি।মোদীর সফরের আগের দিন চূড়াচাঁদপুরে মোদীর ব্যানার-পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল। আজ সেনার সামনে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে পথ অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। ব্যানার-পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনায় পুলিশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছিল। তাদের মুক্তির দাবিতে রবিবার চূড়াচাঁদপুরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এমনকি বিক্ষোভকারীদের পাথরবৃষ্টির মুখে র্যাফকেও পিছু হটতে হয়। দীর্ঘক্ষণ চলে পথ অবরোধ।কংগ্রেস বলে, আগেই বোঝা গিয়েছিল, মোদীর সফর নিছক রাজনৈতিক চমক। কোনও সমাধানসূত্র তিনি দিতে পারবেন না।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)