গত লোকসভা ভোটের সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে। তাই কংগ্রেস তথা অন্য আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে কোনও রকম নির্বাচনী জোট নয়— এই পুরনো রাজনৈতিক লাইন দলকে ছাড়তে হবেই বলে মনে করছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
ইয়েচুরির এই মতামতই আজ পলিটব্যুরোর হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পেশ করেছেন তাঁর বিপরীত মেরুতে থাকা প্রকাশ কারাট। পাল্টা নিজের মতামতও অবশ্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে পেশ করেছেন প্রকাশ। অ-বাম দলগুলির সঙ্গে কোনও রকম নির্বাচনী জোটে না যাওয়ার পক্ষে এখনও অনড় কারাট। একই সঙ্গে তাঁর মত হল, মোদী সরকারকে সরাতে অন্য দলগুলির সঙ্গে কিছুটা বোঝাপড়া বা সহযোগিতা হতে পারে।
আরও পড়ুন: প্রণব-স্মৃতিতে প্যাঁচে বিজেপি
সূত্রের দাবি, প্রকাশের এই বক্তব্য আসলে পলিটব্যুরোর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মত। পলিটব্যুরোয় সংখ্যাগরিষ্ঠ কারাট-পন্থীরাই। সেখানকার ১৬ জন সদস্যর মধ্যে ইয়েচুরির পক্ষে রয়েছেন মাত্র ৬ জন।
তিন বছর আগে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে কারাট লবির চাপে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কংগ্রেস বা আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জাতীয় বা রাজ্য স্তরে কোনও রকম নির্বাচনী জোট করা হবে না। ওই পার্টি কংগ্রেসেই কারাটকে সরিয়ে ইয়েচুরি সাধারণ সম্পাদক হলেও পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটি দু’জায়গাতেই তিনি সংখ্যালঘু। আগামী এপ্রিলে হায়দরাবাদ দলের পরবর্তী পার্টি কংগ্রেস। সেখানে ইয়েচুরি নিজের রাজনৈতিক লাইন তৈরি করতে চান। তার রূপরেখা চূড়ান্ত করতেই আজ থেকে দিল্লিতে সিপিএমের তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে।
বৈঠকের শুরুতেই কারাট পলিটব্যুরোর তরফে খসড়া রাজনৈতিক লাইনের রূপরেখা জানাতে গিয়ে বলেছেন, ইয়েচুরি পুরনো রাজনৈতিক লাইনের মূল ভাবনাটিই খারিজ করে দেওয়ার পক্ষে। ইয়েচুরি মনে করছেন, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে বিজেপি এই প্রথম একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ভোট পেয়েছে মাত্র ৩১ শতাংশ। মোদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতেই সব বিরোধী দলের যৌথ মঞ্চে সিপিএমেরও যাওয়া উচিত।
পলিটব্যুরোয় সংখ্যাগরিষ্ঠদের পাশে নিয়ে কারাটের পাল্টা বক্তব্য, মোদী সরকারকে সরাতে দলের প্রধান কাজ হওয়া উচিত— এক, পার্টির নিজস্ব শক্তি বৃদ্ধি, দুই, বাম দলগুলির জোট মজবুত করা, তিন, বাম ও গণতান্ত্রিক দলগুলির ঐক্য এবং চার, অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির সাহায্য নেওয়া। কিন্তু বাম দলগুলি ছাড়া অন্য কোনও দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোটে না যাওয়ার পক্ষেই সওয়াল করেছেন কারাট। যদিও ঘটনা হল, কারাটের সময়েই হিন্দি বলয়ে সিপিএমের ব্যাপক শক্তিক্ষয় হয়েছে। এ জন্য কারাটের সাংগঠনিক দুর্বলতার দিকেই আঙুল উঠেছে বারেবারে।
এ দিনের বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, কেরলের নেতার মুখেই কারাটের মতের ভিন্ন সুর। কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাকের বক্তব্য, জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy