E-Paper

গণকবর-কাণ্ডে ষড়যন্ত্রের দাবি, ধৃত অভিযোগকারী

গত মাসের গোড়ায় চিন্নায়া একটি মানুষের করোটি নিয়ে থানায় হাজির হয়ে বলেছিলেন, প্রাণের ভয় দেখিয়ে তাঁকে দিয়ে কয়েকশো মৃতদেহ কবর বা পুড়িয়ে দেওয়ানো হয়েছিল ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে। যার মধ্যে ছিল প্রচুর মহিলা ও শিশুর শব।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০৪

—প্রতীকী চিত্র।

যিনি ছিলেন কর্নাটকের ধর্মস্থল গণকবর-কাণ্ডের প্রথম অভিযোগকারী, সেই সি এন চিন্নায়া গ্রেফতার হলেন ষড়যন্ত্র রচনার অভিযোগে। আবার অন্য দিকে, বেঁকে বসা আর এক অভিযোগকারিণী ফের দাবি পাল্টালেন। সব মিলিয়ে আরও ঘোলাটে হল রহস্য। রাজনীতিও। নয়া অস্ত্রে রাজ্যের কংগ্রেস সরকারকে বিদ্ধ করতে ইতিমধ্যেই আরও উঠেপড়ে নেমে পড়েছে বিরোধী বিজেপি।

গত মাসের গোড়ায় চিন্নায়া একটি মানুষের করোটি নিয়ে থানায় হাজির হয়ে বলেছিলেন, প্রাণের ভয় দেখিয়ে তাঁকে দিয়ে কয়েকশো মৃতদেহ কবর বা পুড়িয়ে দেওয়ানো হয়েছিল ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে। যার মধ্যে ছিল প্রচুর মহিলা ও শিশুর শব। দেহে যৌন নির্যাতন, শ্বাসরোধ বা অ্যাসিডে পোড়ার মতো চিহ্ন। বলেছিলেন, তিনি ধর্মস্থল মন্দিরের সাফাইকর্মী ছিলেন। ইদানীং তাঁরই এক প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক নিকটাত্মীয়াকে যৌন নির্যাতন করায় বিবেকের দংশনে স্বীকারোক্তি দিতে এসেছেন। চিন্নায়ার জবানবন্দি নেওয়া হয় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে। পরিবারকে দেওয়া হয় পুলিশি নিরাপত্তা।

চিন্নায়ার এই দাবির পরেই সুজাতা ভাট নামে সিবিআইয়ের অবসরপ্রাপ্ত এক স্টেনোগ্রাফার অভিযোগ করেন, তাঁর মেডিক্যাল পড়ুয়া মেয়ে অনন্যা ২০০৩ সাল থেকে নিখোঁজ। চিন্নায়ার বলা নিহতদের মধ্যে সে-ও থাকতে পারে। জয়নাথ নামে স্থানীয় এক জন সমাজকর্মী দাবি করেন, তিনিও নাকি বছর পনেরো আগে নিজের চোখে একটি কিশোরীর দেহ বেআইনি ভাবে পুঁতে দিতে দেখেছিলেন।

গত ১৯ জুলাই বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে রাজ্য সরকার। কমবেশি ১৭টি জায়গায় তল্লাশি চলে। যার মধ্যে নেত্রবতী নদী আর জঙ্গলও ছিল। শ্রমিক দিয়ে এবং যন্ত্র নিয়ে মাটির ২৫ ফুট পর্যন্ত গভীরে খুঁড়ে ফেলা হয়। কয়েকটি জায়গায় মানুষের হাড়গোড় মেলে। কিন্তু চিন্নায়া যে দাবি করেছিলেন, ফরেন্সিক পরীক্ষার ফল অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার সঙ্গে মেলেনি। তদন্তকারীদের দাবি, যে খুলিটি তিনি প্রধান প্রমাণ বলে থানায় নিয়ে এসেছিলেন সেটিও ভুয়ো বলে জানার পরেই সন্দেহের তির পুরো ঘুরে যায়। জেরার চিন্নায়া মিথ্যা স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, তিনি নাকি এই ষড়যন্ত্রে বোড়ে মাত্র। আরও বৃহত্তর ষড়যন্ত্র ও তার আরও বড় বড় মাথা রয়েছে। এর পরে আজই তাঁকে গ্রেফতার করে ১০ দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

এ দিকে, কিছু দিন আগে সুজাতা একটি ইউটিউব সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন যে অনন্যা নামে কোনও মেয়ে ছিল না তাঁর। ধর্মস্থল মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জমি-বিবাদের জের ধরে দুই সমাজকর্মী জোর করে তাঁকে দিয়ে ওই অভিযোগ করিয়েছিলেন। এ পর্যন্ত ওই দু’জন প্রতিক্রিয়া দেননি। এ দিকে সুজাতা একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে আজ ফের বলেছেন, ওই ইউটিউবার নাকি চাপ দিয়ে ওই সমস্ত কথা বলতে বাধ্য করেছিলেন তাঁকে। অনন্যা নামে সত্যিই তাঁর মেয়ে ছিল, এখন দাবি তাঁর।

বিজেপির গোড়ায় বক্তব্য ছিল, ‘অতিবামপন্থী শক্তি’র চাপের মুখে সরকার রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত তদন্তের নাম করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভাবাবেগে আঘাত করতে চায়। তারা ‘ধর্মযুদ্ধ’ নাম দিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি নেয়। নিরপেক্ষ অবস্থান স্পষ্ট করে বিবৃতি দিতে হয় রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরকে। চিন্নায়ার গ্রেফতারির পর তাদের অভিযোগ, এর নেপথ্যে বিরাট অর্থের খেলা আছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

arrest Mass Burials Karnataka

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy