E-Paper

ইন্ডিয়ায় শরিকি-দ্বন্দ্ব, ১৫ আসনে কি বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই

রবিবার গভীর রাতে বিহারের আরও ছ’টি বিধানসভা আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। আগামিকাল প্রথম দফার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:১২
(বাঁ দিকে) তেজস্বী যাদব এবং রাহুল গান্ধী (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) তেজস্বী যাদব এবং রাহুল গান্ধী (ডান দিকে)।

মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, দিল্লির পরে এ বার বিহার। ফের এক বার আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’য় শরিক-সংঘাত। পরিস্থিতি এমন যে, অন্তত ১৫টি আসনে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে চলেছে আরজেডি, কংগ্রেস, বাম দলগুলি। ঘরোয়া আলোচনায় ইন্ডিয়া নেতৃত্ব অবশ্য মেনে নিচ্ছেন, ফলেএনডিএ-বিরোধী ভোটারদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।

রবিবার গভীর রাতে বিহারের আরও ছ’টি বিধানসভা আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। আগামিকাল প্রথম দফার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এখন দেখার শেষ পর্যন্ত বন্ধুত্বের শর্ত মেনে শরিক দলের প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন, না কি পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোট-ময়দানে থাকবেন। বিরোধী শিবিরের ওই ছন্নছাড়া দশারমধ্যে আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে বিহারে প্রচারে নামছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ।

গত কাল পর্যন্ত জল্পনা থাকলেও, আজ বিহার কংগ্রেসের সভাপতি রাজেশ রামের বিরুদ্ধে দলের নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সুরেশ পাসোয়ানকে কুটুম্বা আসন থেকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরজেডি। আজ পাসোয়ান বলেন, ‘‘কুটুম্বা থেকে লড়ছি। আগামিকাল আমি মনোনয়ন পত্র সেখান থেকে জমা দিতে চলেছি। বিহারের একাধিক আসনে মহাজোটের প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে ভাগ্য পরীক্ষায় নামছে। কুটুম্বা হল সে রকম একটি আসন।’’ ভোটে বিরোধী শিবির ‘মহাগটবন্ধন’-এর মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তেজস্বী যাদবকে সামনে রেখে এগোনো হোক— এমনটাই গোড়া থেকে চাইছিলেন আরজেডি নেতৃত্ব। সূত্রের মতে, দলকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেন রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি তথা দলিত নেতা রাজেশ ও বিহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাহুল গান্ধী ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা কৃষ্ণ অল্লাভারু।

আরজেডি নেতৃত্বের মতে, মূলত ওই দু’জনের কারণেই তেজস্বীকে জোটের নেতা হিসেবে তুলে ধরার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তার পরেই রাজেশের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আরজেডি। অন্য দিকে রাজেশ আজ সমাজমাধ্যম এক্স-এ লেখেন, ‘দলিতকে আর দমন করে রাখা যাবে না। সে মাথাও নত করবে না। এরপর বিপ্লব হবে’। গোড়ায় ‘ইন্ডিয়া’র তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছিল, এখন শরিক দলের প্রার্থীরা একই আসনে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেও, পরে আলোচনার ভিত্তিতে তা প্রত্যাহার করা হবে। ফলে আগামিকালই স্পষ্ট হয়ে যাবে, মহাজোটের প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে নাম প্রত্যাহার করে নিলেন, না কি একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াইজারি রেখে আখেরে এনডিএ-র সুবিধে করে দিলেন। কংগ্রেসের টিকিট বিতরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের অভ্যন্তরেই। শেষবেলায় কংগ্রেসে টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়ে দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গকে চিঠি দিয়েছেন বিহার কংগ্রেসের মুখপাত্র আনন্দ মাধব। টিকিট না পাওয়ায় আনন্দের অভিযোগ, ‘‘যে ভাবে টিকিট বিলি হয়েছে, পরিস্থিত যা তাতে দল দশটি আসনও পাবে কি না সন্দেহ।’’

বিহার কংগ্রেসের আর এক বর্ষীয়ান নেতা তারিক আনোয়ারের মতে, ‘‘যাদের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন ব্যক্তিকে টিকিট না দিয়ে অযোগ্যদের টিকিট দেওয়া হয়েছে।’’ কোন যুক্তি, কোন পদ্ধতি মেনে টিকিট বিতরণ করা হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এরই মধ্যে উত্তর বিহারের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে ২৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছেন হায়দরাবাদের এমআইএম দলের নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি। তাঁর দল প্রার্থী দেওয়ায় উত্তর বিহারে এনডিএ-বিরোধী মুসলিম ভোট ভাগ হতে চলেছে বলেই মনে করছেন রাজনীতিকেরা।

কেবল কংগ্রেসই নয়, টিকিট বণ্টন নিয়ে গোলমাল আরজেডি-তেও। আজ রাবড়ি দেবীর বাসভবনের সামনে মধুবন বিধানসভা এলাকার আরজেডি নেতা মদন শাহ রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়ে, নিজের কুর্তা ছিঁড়ে চূড়ান্ত নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করেন! পাঁচ বছর আগে মধুবন কেন্দ্রে আরজেডি প্রার্থী মদন অল্প ভোটে হেরেছিলেন বিজেপির কাছে। এ বার তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি। লালু-রাবড়িদের বাড়ির কাছে এসে তাঁর অভিযোগ, টিকিট দেওয়ার জন্য জেলার নেতারা দু’কোটি ৭০ লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন। মেয়েদের বিয়ে স্থগিত রেখে তিনি টাকার জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি। কাঁদতে কাঁদতেই মদনের দাবি, হয় তাঁকে টিকিট দেওয়া হোক, নয়তো টাকা ফেরত দেওয়া হোক! অন্য দিকে তিনি যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও টিকিট না পাওয়া অন্যকে দেওয়ায় পারিহার কেন্দ্র থেকে নির্দল হিসেবে লড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন আরজেডির মহিলা শাখার সভাপতি রিতু জায়সওয়াল।

বিরোধীদের ছন্নছাড়া দশায় স্বভাবতই উৎসাহিত বিজেপি। দলের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী নিতিন নবীনের বক্তব্য, ‘‘যাদের মূল কথা হল পরিবারবাদ, সেই দলগুলির মধ্যে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা স্বাভাবিক।’’ আজ বিহার বিজেপি সভাপতি দিলীপ জায়সওয়াল জানিয়েছেন, দীপাবলির উৎসব শেষ হলেই বিহারে ফের প্রচারে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২৪ অক্টোবর সমস্তিপুর ও বেগুসরাইয়ে জনসভার করার কথা রয়েছে মোদীর। চলতি মাসে বিহারে মোট চারটি জনসভা করবেন তিনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bihar INDIA Alliance

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy