অমিত শাহের হস্তক্ষেপে অবশেষে বিহারে আসন জটিলতা কাটল এনডিএ শিবিরের।
গত রবিবার আসন ভাগাভাগিতে কেবল ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্র পাওয়ার পর থেকেই বেসুরে বাজছিলেন রাষ্ট্রীয় লোকমঞ্চ দলের নেতা উপেন্দ্র কুশওয়াহা। একে প্রয়োজনের তুলনায় আসন কম পাওয়া, উপরন্তু বৈশালি জেলার মহুয়া বিধানসভা আসনটি কেন শরিক দল এলজেপি-র চিরাগ পাসোয়ানকে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানাতে দেখা যায় কুশওয়াহাকে। যে কারণে গত কাল দুপুরে এনডিএ-তে ‘অল ইজ ওয়েল’ বলে বার্তা দিলেও, রাতভর রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পরে সেই কুশওয়াহা জানান, “অল ইজ নট ওয়েল ইন এনডিএ (এনডিএ-তে সব কিছু ঠিক নেই)।”
শাসক শিবিরে মনোমালিন্যের ফায়দা নিতে তৎপর হয় বিরোধী জোটও। সূত্রের মতে, কংগ্রেসের একটি অংশের পক্ষ থেকে কুশওয়াহাকে বিরোধী জোটে আসার আহ্বান জানানো হয়। পরিস্থিতি বুঝে উপেন্দ্র কুশওয়াহাকে তড়িঘড়ি দিল্লি ডেকে পাঠান অমিত শাহ। কুশওয়াহাকে পাহারা দিয়ে দিল্লি নিয়ে আসেন বিহার বিজেপির নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। বেলা ১১টায় দিল্লি নেমেই ওই দুই নেতা শাহের সঙ্গে দেখা করতে যান। সূত্রের মতে, উপেন্দ্র আসার পাঁচ মিনিট আগে বেরিয়ে যান শাহ। ফলে দেখা হয় বিকেলে। বৈঠকও হয় দুই নেতার। বিজেপি জানিয়েছে, অমিত শাহের হস্তক্ষেপে বর্তমান জটিলতা কাটে। মহুয়া আসনের দাবি ছাড়তে রাজি কুশওয়াহা। পরিবর্তে রাজ্যসভার সাংসদ কুশওয়াহার মেয়াদ আরও এক দফা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি ছাড়াও দলের কোনও শীর্ষ নেতাকে বিহার বিধান পরিষদের নেতা করার আশ্বাস দিয়েছেন শাহ। রাজনীতিকদের মতে, ওই শর্ত মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না উপেন্দ্রের কাছে। উপেন্দ্র-পর্ব মিটতেই আজ দ্বিতীয় তালিকায় ১২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। আলিনগর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন লোকসঙ্গীত শিল্পী মৈথিলী ঠাকুর।
আসন নিয়ে মন কষাকষি থামার ইঙ্গিত দিয়েছেন জেডিইউ নেতৃত্বও। আজ এলজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে চিরাগের অংশে থাকা একাধিক আসনের উপর দাবি ছেড়ে দেন নীতীশেরা। পরে বিকেলে ৫১টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে নীতীশের দল। এ দিকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে উদ্ভূত জটিলতা ও দলের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আগামিকাল বিহার যাচ্ছেন অমিত শাহ। বিজেপি ছাড়াও অন্য শরিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনী প্রচারের রণকৌশল চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।
‘আমার বুথ সব থেকে শক্তিশালী’ কর্মসূচিতে আজ বিহারের দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি রাজ্যের প্রতিটি ঘরে কর্মীদের যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, “রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার যে প্রকল্পগুলি চালাচ্ছে, মানুষ কী ভাবে তার সুবিধা পাচ্ছে, সেই বিষয়গুলি বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সকলের কাছে তুলে ধরতে হবে।” পাশাপাশি নতুন প্রজন্ম, যাঁরা নব্বইয়ের দশকে লালুপ্রসাদ যাদবের আমলে জঙ্গলরাজ দেখেননি, তাঁদের কাছে সেই অতীতকে প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরার পরামর্শ দেন মোদী। তিনি বলেন, “যখন বিহারে মাওবাদ চরমে ছিল, সেই সময়ের ব্যাপারে আজকের যুব সমাজের কোনও ধারণা নেই। তাঁদের সে বিষয়টি জানাতে হবে। যারা মাওবাদকে নতুন করে হাওয়া দিতে পারে, এমন শক্তিকে কোনও ভাবেই যে ক্ষমতায় আনা যাবে না, তা লোককে বোঝাতে হবে।”
বিশেষ করে ভাইফোঁটার দিন পুরুষ বুথ কর্মীদের নিজেদের বুথে মহিলা কর্মীদের জন্য ভাইফোঁটার ব্যবস্থা ছাড়াও লাখপতি দিদি ও ড্রোন দিদিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভোটের দিন দলের মহিলা কর্মীদের দলবদ্ধ ভাবে গান গাইতে গাইতে ভোট দিতে যাওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)