—প্রতীকী ছবি।
জটিলতা একটি শব্দকে ঘিরে।
আপাতত সেই শব্দটিই ভারত ও পাকিস্তানের সচিব পর্য়ায়ের আলোচনা শুরুর পথে প্রধান বাধা। উরিতে হামলা— তার পর ভারতের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। দু’দেশের মধ্যে এখন অবশ্য প্রথা মোতাবেক পর্দার আড়ালে ‘ট্র্যাক-টু’ আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু বিদেশসচিব পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে শব্দচয়নকে ঘিরে। যা নিয়ে বিতর্ক, সেই শব্দটি হল ‘দ্বিপাক্ষিক’। পাকিস্তান বলছে, আলোচনার নাম দেওয়া হোক, ‘সার্বিক’ বা ‘সুসংহত’ আলোচনা। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘কম্পোজিট ডায়লগ’। অতীতে যেমন বলা হতো। কিন্তু ভারত বলছে ‘না’। কাগজে-কলমে লিখে দিতে হবে, এই আলোচনার নাম হচ্ছে ‘দ্বিপাক্ষিক’ আলোচনা।
নরেন্দ্র মোদী নাটকীয় ভাবে চলে গিয়েছিলেন লাহৌরে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করতে। তার পর থেকেই এই বিবাদের শুরু। মোদীর সফরের পরে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ পাকিস্তানে পৌঁছন ‘ফলো-আপ’ বৈঠক করতে। সে সফরে সুষমার সঙ্গে নওয়াজ শরিফের মা ও গোটা পরিবারের অনেক আড্ডাও হয়েছিল। কিন্তু যেই না দু’দেশের বিদেশসচিবের পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়, তখনই দু’পক্ষের বিবাদ বাধে ওই শব্দটি নিয়ে। সুষমার সামনেই দুই বিদেশসচিবের কথা কাটাকাটি হয় ‘দ্বিপাক্ষিক’ শব্দটি নিয়ে। কিন্তু এই শব্দটির মধ্যে এমন কী লুকিয়ে রয়েছে, যা জন্ম দিচ্ছে সংঘাতের? সে দিন কিন্তু দু’পক্ষের কেউই এ নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি।
এখন যদিও বিষয়টি নিয়ে সরাসরি মুখ খুলছেন ভারত-পাকিস্তানের কূটনীতিকরা। বিদেশসচিব জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘দ্বিপাক্ষিক মানে দ্বিপাক্ষিক। সেখানে কোনও তৃতীয় পক্ষ থাকবে না।’’ দিল্লিতে কর্মরত পাকিস্তানের হাই কমিশনার আব্দুল বাসিতের মন্তব্য, ‘‘পাকিস্তানের আশঙ্কা, দ্বিপাক্ষিক মানে হুরিয়তের সঙ্গে আমাদের সরকার স্বাধীন ভাবে কথা বলতে পারবে না। গেরোটা এখানেই।’’ বাসিতের যুক্তি, ‘‘হুরিয়তের সঙ্গে কথা বলা পাকিস্তানের কাশ্মীর নীতির অঙ্গ। তাই আমাদের আশঙ্কা, দ্বিপাক্ষিক শব্দটি মেনে নিলে ভবিষ্যতে হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলার অজুহাতে বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক ভেস্তে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকবে ।’’
নরেন্দ্র মোদী জমানায় পাক নীতিতে উত্থান-পতন একেবারে প্রকট। মোদীর শপথে নওয়াজকে আমন্ত্রণ থেকে শুরু করে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ পর্ব। তবে অন্য সরকারগুলির থেকে মোদী জমানায় তফাত একটি বিষয়ে। হুরিয়তের ব্যাপারে মোদী অনেক বেশি কঠোর নীতি নিয়েছেন। কাশ্মীর অগ্নিগর্ভ। বহু জায়গায় এখনও কার্ফু জারি রয়েছে। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবার এবং জগমোহনের নীতিকে সরকার বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারত সরকার মনে করছে, হুরিয়তের সঙ্গে পাকিস্তানিদের আলোচনা কাশ্মীর পরিস্থিতি সমাধানে সাহায্য করবে না। উল্টে আরও জটিল করে তুলবে।
গোলার শব্দে সীমান্ত উত্তাল। সার্ক বাতিল। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের আলোচনা যদিও শুরু হয়েছে সন্ত্রাস নিয়ে। কিন্তু বিদেশসচিব পর্যায়ের আলোচনা হবে কি না, তা নির্ভর করছে একটি শব্দের উপরে। শব্দটি হল ‘দ্বিপাক্ষিক’। অর্থাৎ আলোচনায় হুরিয়তের থাকা বা না থাকা। পাকিস্তানের বক্তব্য, সন্ত্রাস নিয়ে তারা যখন আলোচনায় রাজি, তখন ভারতও হুরিয়তের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারটি মেনে নিক। কিন্তু তাতে গুরুত্ব দিচ্ছে না মোদী সরকার। ভারত চাইছে, আলোচনা ‘দ্বিপাক্ষিক’ করাটা বাধ্যতামূলক হোক। হুরিয়তকে নিয়ে মোদী সরকারের যে কঠোর অবস্থান, তার পিছনে রয়েছে বুরহান ওয়ানির মৃত্যুকে ঘিরে কাশ্মীরের অস্থিরতা ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হুরিয়তের নেতিবাচক অবস্থান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy