পহেলগাম কাণ্ডের অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের নতুন করে অক্ষ ঝালিয়ে নেওয়ার বিষয়টি বিচলিত করে রেখেছিল দিল্লিকে। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান-সহ একটি প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর করা দিয়ে যার শুরু। অতি সম্প্রতি পনেরো বছরের বরফ কাটিয়ে পাকিস্তানের বিদেশসচিব আম্মা বালোচ বাংলাদেশ সফর করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতা বাড়ানোর যৌথ ঘোষণা করেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ জানালেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ককে ‘গভীর’ করার জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ককে আরও উন্নত করতে ঢাকা এবং ইসলামাবাদ আন্তরিক ভাবে উদ্যোগী হয়েছে বলেও জানান আসিফ। ভারত এবং পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি এবং উদ্ভূত উত্তেজনার পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও ‘দৃঢ়’ করার বার্তা দিলেন তিনি। বিষয়টি দিল্লির চোখ এড়ায়নি। বাংলাদেশের জমিকে ব্যবহার করে অতীতের মতো ফের ভারত সীমান্তে আঘাত হানবার কোনও বড় পরিকল্পনা পাকিস্তান করতে পারে বলে ইতিমধ্যেই সতর্কতা নিচ্ছে তারা।
এরই মধ্যে গোয়েন্দা সূত্রে আসা একটি খবর উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সূত্রের বক্তব্য, ভারত-বিরোধিতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি উপদেষ্টা আসিফ নজরুল পহেলগাম কাণ্ডের একদিন পর লস্কর-ই-তইবার অন্যতম স্থানীয় (বাংলাদেশের) নেতার ইজ়হারের সঙ্গে দেখা করেছেন। এই বৈঠক সম্পর্কে বিশদ কিছু এখনও জানা যায়নি। তবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্বের প্রশ্নে এই ধরনের খবর খুবই অস্বস্তিকর বলেই জানাচ্ছে সরকারি সূত্র। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বাড়বাড়ন্ত হওয়া মৌলবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়বে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশের মাটিতে এই ইজ়হারের নাশকতার প্লট রচনার অতীত ইতিহাস রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ২০০৯ সালে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে একটি হামলার ঘটনাকে অঙ্কুরে বিনাশ করা হয়েছিল, যার নেপথ্যে ইজ়হার ছিল বলে অভিযোগ। ২০১০ সালে বাংলাদেশের তৈরি হওয়া দেওবন্দি ইসলামিক গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলাম-এর সঙ্গে এই ব্যক্তি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে বলেও গোয়েন্দাদের কাছে খবর। বাংলাদেশের অন্তত ২০টি সন্ত্রাসবাদী কাণ্ডে অভিযুক্ত ইজ়হার হাসিনা সরকারের নিরাপত্তা শাখার নজরদারি তালিকায় ছিল। সে গা ঢাকাও দিয়েছিল। নতুন জমানায় তাকে আবার সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে বলে খবর।
অন্য দিকে গত শুক্রবার ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি অনুষ্ঠানে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বকে আরও ‘গভীর’ করার বার্তা দিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছেন সাউথ ব্লকের। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং সে দেশের সাধারণ মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ককে ইসলামাবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। দু’দিনের সফরে রবি-সোমবার ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী ইশাক দারের। পহেলগাম কাণ্ডের পর সেই সফর পিছিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব যে বাড়ছে, সেটা বুঝিয়ে দিয়েই ইসলামাবাদে বাংলাদেশি দূতাবাসের অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করলেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)