নীতি আয়োগ তৈরির সময় অর্থনীতিবিদ রাজীব কুমার যুক্তি দিয়েছিলেন, নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য সংসদে নতুন আইন আনা হোক। তা হলে নীতি আয়োগ যে সুপারিশই করুক, তা রূপায়ণের আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে। আজ নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব নিয়ে সেই রাজীব কুমারকেই ঢোঁক গিলতে হল এই প্রশ্নে। তিনি যুক্তি দিলেন, মেধার উৎকর্ষের জোরেই নীতি আয়োগের সুপারিশ কার্যকর হবে।
যোজনা কমিশন ভেঙে দেশের ভোল বদলাতে, ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া’ বা নীতি আয়োগ তৈরি করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। অরবিন্দ পানগড়িয়ার বদলে আজ তার উপাধ্যক্ষের পদে এলেন অর্থনীতিবিদ রাজীব কুমার। কিন্তু নীতি আয়োগ শুরুর আড়াই বছর পরেও তার কাজ ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্নটা রয়েই গেল। ভাবা হয়েছিল, নীতি আয়োগ একই সঙ্গে ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’-এর কাজ করবে। উদ্ভাবনী পরিকল্পনা জোগাবে মোদী সরকারকে। কিন্তু অর্থনীতিবিদ থেকে বিশেষজ্ঞদের দাবি— নীতি আয়োগ গত আড়াই বছরে তেমন কোনও পরিকল্পনাই জোগাতে পারেনি। এমনকী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও নীতি আয়োগের সাহায্য নিতে উৎসাহ দেখাননি।
এ দিকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই নীতি আয়োগের অধ্যক্ষ। পরিচালন পর্ষদে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের রাখা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের পাশাপাশি রাজ্যগুলির মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরিতেও নীতি আয়োগ কাজ করবে। অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন— নীতি আয়োগের কাজ তা হলে কি কেন্দ্রের হয়ে রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয়? না কি ভাবনা জোগানো? যোজনা কমিশন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তৈরি করত। তা তুলে দেওয়ার পর এখন নীতি আয়োগ তিন, সাত ও পনেরো বছরের পরিকল্পনা তৈরি করছে। যা দেখে সমালোচকরা বলছেন ‘নতুন বোতলে পুরনো মদ’।
আজ আবার উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে রাজীব কুমারের যুক্তি, নীতি আয়োগের আর্থিক বৃদ্ধি সম্পর্কেও পূর্বাভাস করা উচিত। তাঁর যুক্তি, নীতি আয়োগ এক দিকে কেন্দ্রের উপদেষ্টার কাজ করবে। রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় রেখে তাদের লক্ষ্য ছুঁতেও সাহায্য করবে। তাঁর ভাবনা, উত্তর-পূর্ব, গঙ্গাতীরবর্তী, সমুদ্র উপকূলবর্তী, হিমালয়স্থিত— এই ভাবে রাজ্যগুলিকে ভাগ করে পৃথক নীল নকশা তৈরি হবে। তিন মাসে তিনি প্রত্যেকটি রাজ্য সফর করবেন।
নতুন দায়িত্ব নিয়েই আজ নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন রাজীব। তাঁর যুক্তি, এপ্রিল থেকে জুনে বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার জন্য নোট বাতিলকে দায়ী করা চলে না। কারণ নগদের সমস্যা ছিল ডিসেম্বর পর্যন্ত। জানুয়ারি
থেকেই নতুন নোটের জোগান শুরু হয়েছিল। জিএসটি চালুর আগে মজুত করা পণ্য ছাড় দিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। ফলে কারখানার উৎপাদন কমাতেই বৃদ্ধির হার কমেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বরেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশর উপরে চলে যাবে বলে তাঁর দাবি। তাঁর যুক্তি, ‘‘মনমোহন সিংহ যদি বলেন, তিনি ২ শতাংশ বৃদ্ধি কমে যাবে বলেছিলেন। আর সেটাই মিলে গেল, তা হলে ভুল হবে!’’ রাজীবের দাবি, দেশীয় শিল্পমহল লগ্নি করতে শুরু করেছে। এখন লগ্নিকারীদের ভূমিকাকে মর্যাদা দেওয়া ও তাদের লগ্নির সুরক্ষা দেওয়াটা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy