Advertisement
০৮ মে ২০২৪

অস্বস্তির কালো তালিকা নিয়ে সতর্ক কংগ্রেসও

সুইস ব্যাঙ্কে যাঁদের কালো টাকা গচ্ছিত রয়েছে, তাঁদের নাম প্রকাশিত হলে কংগ্রেসই অস্বস্তিতে পড়বে বলে হুমকি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আজ সুপ্রিম কোর্টে নরেন্দ্র মোদী সরকার হলফনামা দিয়ে তিনটি নাম জানিয়েছে। এই তিনটি নাম হল, ডাবর ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর প্রদীপ বর্মণ, রাজকোটের ব্যবসায়ী পঙ্কজ চিমনলাল লোধিয়া এবং গোয়ার খনি সংস্থা টিম্বলো। বিদেশি ব্যাঙ্কে প্রদীপ ও লোধিয়ার ব্যক্তিগত ও টিম্বলো সংস্থার অ্যাকাউন্টে কালো টাকা গচ্ছিত আছে বলে কেন্দ্রের দাবি। হলফনামায় টিম্বলো সংস্থার পাঁচ পরিচালকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৭
Share: Save:

সুইস ব্যাঙ্কে যাঁদের কালো টাকা গচ্ছিত রয়েছে, তাঁদের নাম প্রকাশিত হলে কংগ্রেসই অস্বস্তিতে পড়বে বলে হুমকি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আজ সুপ্রিম কোর্টে নরেন্দ্র মোদী সরকার হলফনামা দিয়ে তিনটি নাম জানিয়েছে। এই তিনটি নাম হল, ডাবর ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর প্রদীপ বর্মণ, রাজকোটের ব্যবসায়ী পঙ্কজ চিমনলাল লোধিয়া এবং গোয়ার খনি সংস্থা টিম্বলো।

বিদেশি ব্যাঙ্কে প্রদীপ ও লোধিয়ার ব্যক্তিগত ও টিম্বলো সংস্থার অ্যাকাউন্টে কালো টাকা গচ্ছিত আছে বলে কেন্দ্রের দাবি। হলফনামায় টিম্বলো সংস্থার পাঁচ পরিচালকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কংগ্রেস বা অন্য কোনও দলের নেতার নাম প্রকাশ করেনি কেন্দ্র।

দীর্ঘদিন ধরে কালো টাকার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন রাম জেঠমলানী। মোদী সরকারের এই তিনটি নামের তালিকাকে তিনি ‘পর্বতের মূষিক প্রসব’ আখ্যা দিয়েছেন। কংগ্রেস ও অন্য বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, মোদী সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বেছে বেছে নাম প্রকাশ করছে। কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেন, “কালো টাকা উদ্ধার নিয়ে তা হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হম্বিতম্বিই সার! লোকসভা ভোট প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কেন্দ্রে সরকার গঠনের একশো দিনের মধ্যে বিদেশের ব্যাঙ্কে গচ্ছিত সব কালো টাকা উদ্ধার করবেন।” খুরশিদের প্রশ্ন, “এত ঢক্কানিনাদের পর কেন মাত্র তিন জনের নাম প্রকাশ হল? কেন আটশো জনের তালিকা প্রকাশ করছে না সরকার?” তৃণমূলও বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, কালো টাকার বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে বিজেপি ভয় পাচ্ছে।

মোদী সরকারের দাবি, কেন্দ্র কারও নাম লুকোতে চায় না। সব নামই প্রকাশিত হবে। বিদেশি ব্যাঙ্কে কালো টাকার মালিকদের নামের তালিকা ফ্রান্স ও জার্মানির কাছ থেকে মিলেছে। আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, যাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলেছে বা আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, তাঁদের নামই আদালতে প্রকাশ করা যাবে। কালো টাকার রহস্য উদ্ধারে তৈরি বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’-কেও এ বিষয়ে তথ্য জানানো হবে।

প্রদীপ বর্মণ ও পঙ্কজ লোধিয়ার দাবি, বিদেশি ব্যাঙ্কে তাঁদের কালো টাকা নেই। প্রদীপ বর্মণ ডাবরের অন্যতম পরিচালক। দু’বছর আগে তিনি সংস্থার এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টরের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁর নাম প্রকাশ্যে আসার পরেই শেয়ার বাজারে ডাবরের শেয়ারের দাম পড়তে শুরু করে। ডাবর সংস্থার মুখপাত্রের দাবি, প্রদীপ বর্মণ বিদেশে থাকার সময়ে আইন মেনেই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। আয়কর দফতরকে তা জানানো হয়েছে। করও মেটানো হয়েছে। রাজকোটের ব্যবসায়ী পঙ্কজ লোধিয়ার দাবি, তাঁর সুইস অ্যাকাউন্টই নেই। টিম্বলো সংস্থার অন্যতম পরিচালক রাধা টিম্বলো জানিয়েছেন, তাঁদের সংস্থায় কয়েক বার আয়কর হানা হয়েছে। তবে হলফনামা দেখার পরেই তাঁরা মন্তব্য করবেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এডিআরের (অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম) দাবি, ভোটের সময় এই টিম্বলো সংস্থা কংগ্রেস ও বিজেপি, দু’দলকেই মোটা টাকা চাঁদা দিয়েছিল। বিজেপিকে দেওয়া হয়েছিল প্রায় ১.৮৩ কোটি টাকা, কংগ্রেসকে ৬৫ লক্ষ টাকা। আগে মোদী সরকার হলফনামা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল, বিদেশি ব্যাঙ্কে যাঁদের কালো টাকা রয়েছে, আইনি জটিলতার জন্য তাঁদের নাম প্রকাশ সম্ভব নয়। ইউপিএ সরকারও ঠিক এই যুক্তিতেই অতীতে ২৯টির বেশি নাম প্রকাশ করেনি। এর পরেই বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়ে কেন্দ্র। লোকসভা ভোটের প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে মোদী সরকার সুর পাল্টে ফেলায় প্রশ্ন ওঠে, মোদী সরকারও কি কাউকে আড়াল করতে চাইছে? আজ অবশ্য কেন্দ্রের তরফেই সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়েছে, “তথ্য গোপনের কোনও উদ্দেশ্য সরকারের নেই। বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কালো টাকার মালিকদের নিয়ে তথ্য মিলেছে। কর ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণ হলে তবেই সেই তথ্য প্রকাশ হবে।”

মোদী সরকারকে কালো টাকার মালিকদের নাম প্রকাশের চ্যালেঞ্জ জানালেও কংগ্রেস নেতৃত্ব কিছু সাবধানীও। কারণ কানাঘুষো চলছে ওই তালিকায় সত্যি সত্যিই চার জন কংগ্রেস নেতা বা তাঁদের পরিবারের সদস্যের নাম রয়েছে। এঁদের মধ্যে এক জন প্রাক্তন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী প্রীণীত কৌর বলেও খবর। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি তাই আজ আগে থেকেই বলে রেখেছেন, “কোনও ব্যক্তির নাম থাকলে তার দায় দলের নয়।” প্রীণীত আবার পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহর স্ত্রী। অমরেন্দ্র জেটলিকে হারিয়ে লোকসভায় এসেছেন। প্রীণীত আজ স্বীকার করেছেন, ২০১১ সালে তিনি আয়কর দফতরের নোটিশ পেয়েছিলেন। তবে তাঁর দাবি, “বিদেশের কোনও ব্যাঙ্কে আমার কখনও কোনও অ্যাকাউন্ট ছিল না। এখনও নেই। তাই সেখানে টাকা রাখারও প্রশ্ন নেই।”

আজ কেন্দ্রের তরফে সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হয়েছে, এত দিন সুইস সরকার তথ্য দিতে রাজি না হলেও এ বার তা দিতে চেয়েছে। ভারতের আয়কর দফতর যে সব মামলায় নিজেদের তদন্ত শেষ করেছে, সে সব ক্ষেত্রে সুইস ব্যাঙ্কও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তথ্য দিতে রাজি।

তথ্য দেওয়া না হলে তার কারণও জানানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE