রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অপমান করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী—অভিযোগ তুলল কংগ্রেস।
আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাঙালি আবেগ উস্কে দিতে প্রধানমন্ত্রী দু’দিন আগে বন্দে মাতরম্-এর সার্ধশতবর্ষ পূর্তির মঞ্চ থেকে কংগ্রেসকে নিশানা করে বলেছিলেন, ১৯৩৭ সালে বন্দে মাতরম্-এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্তবক বাদ দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই দেশভাগের বীজ বপন করা হয়। বন্দে মাতরম্ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন্তব্যকে তুলে ধরেছিলেন তিনি। নাম না করে জওহরলাল নেহরুর বিরুদ্ধে বন্দে মাতরম্-এর প্রথম দু’টি স্তবক গ্রহণ করে বাকি স্তবক বাদ দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। ইঙ্গিত করেছিলেন, মুসলিমদের চাপে ওই স্তবকগুলি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
আজ কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ যুক্তি দিয়েছেন, ১৯৩৭ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর কলকাতাতেই কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির (সিডব্লিউসি) বৈঠক বসেছিল। সেই বৈঠকে গান্ধীজি, নেহরু, বল্লভভাই পটেল ছাড়াও ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু, রাজেন্দ্র প্রসাদ, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। সিডব্লিউসি তার পরে বন্দে মাতরম্ নিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে। সেই বিবৃতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর পরামর্শে প্রভাবিত ছিল। এই প্রসঙ্গে গান্ধীজির রচনাবলীর সংশ্লিষ্ট অংশও তুলে ধরে জয়রামের অভিযোগ, “সিডব্লিউসি-র সঙ্গে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও অপমান করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যা করেছেন, তা স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতো। তবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু নেই। কারণ আরএসএস মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেয়নি।”
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বন্দে মাতরম্-কে জাতীয় গান হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে, তাতে পৌত্তলিকতার বিষয়ে মুসলিমদের আপত্তি নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। তার পরে প্রথম দু’টি স্তবক গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী সে দিকেই ইঙ্গিত করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণ ও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের আগে বাঙালি আবেগ ছুঁতে চেয়েছিলেন। এর আগে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘রবীন্দ্রজীবনী’-র সংশ্লিষ্ট অংশ তুলে ধরে জয়রাম রমেশ দেখিয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথ নিজে এ বিষয়ে চিঠি লিখে নেহরুকে তাঁর মত জানিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে তিনি প্রথম দু’টি স্তবককে গ্রহণ করার পক্ষে মত দেন। ইতিহাসবিদ সব্যসাচী ভট্টাচার্যের ‘বন্দে মাতরমের জীবনী’ থেকে উদ্ধৃত করে জয়রাম দেখিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ প্রথম ১৮৯৬ সালে কংগ্রেসের অধিবেশনে বন্দে মাতরম্ গেয়েছিলেন। তার পরে বন্দে মাতরম্ নিয়ে তিনিই নির্ণায়ক ভূমিকা নেন, যা ১৯৩৭ সালে কংগ্রেসের সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হয়েছিল। জয়রামের অভিযোগ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ইতিহাস বিকৃত করছেন। তাঁর উচিত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত দেশের মানুষের রোজকার সমস্যা নিয়ে রাজনৈতিক লড়াই করা। মোদীর আর্থিক নীতির ফলে অসাম্য বেড়েছে, বেকারত্ব বেড়েছে, বিদেশ নীতি ভেঙে পড়ছে। কিন্তু তিনি শুধু দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে কালিমালিপ্ত করায় ব্যস্ত।’’
এই বিতর্কের আবহেই এ বারে বঙ্কিমচন্দ্রের কলকাতার বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্য সরকারকে নিশানা করল বিজেপি। এ দিন বঙ্কিমচন্দ্রের পরিবারের বর্তমান দুই সদস্য, সজল চট্টোপাধ্যায় ও সুমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে সল্টলেকে বিজেপির দফতর থেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “৫ নম্বর প্রতাপ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে বঙ্কিমচন্দ্রের বাসভবনে তৈরি গ্রন্থাগারে তালা ঝোলানো থাকে। গত ৭ নভেম্বর সেখানে থাকা মূর্তিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যাতে মালা না-দিতে পারেন, সে জন্য সামনের রাস্তা খুঁড়ে ফেলা হল।” শমীকের দেখানো একটি ভিডিয়োতে দেখা যায়, বঙ্কিমচন্দ্রের মূর্তিতে কাপড় মেলা রয়েছে। শমীক বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। কেন্দ্রের কোনও দফতরের পক্ষে বাড়িটি পরিচালনা করা সম্ভব হলে, অবশ্যই তা করা হবে।”
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেছেন, “বিরোধী দলনেতা-সহ বিজেপি নেতারা কাগজ দেখে বন্দে মাতরম্ গাইছিলেন। ফলে, তাঁদের জন্য বাসভবনের তালা খোলার দরকার নেই! যাঁদের পূর্বসূরিরা স্বাধীনতা সংগ্রামে ছিলেন না, তাঁরা হঠাৎ বলছেন বন্দে মাতরম্।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)