নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার তারিখ এগিয়ে আসছে। বিহারে ‘মহাগঠবন্ধনে’র অভ্যন্তরে চূড়ান্ত সমঝোতা-সূত্র এখনও অধরা!
বিরোধীদের মহাজোটের প্রধান দুই শরিক আরজেডি এবং কংগ্রেসের মধ্যে কিছু আসনের টানাপড়েন এখনও মেটেনি। সূত্রের খবর, দফায় দফায় আলোচনা চালিয়েও মীমাংসা-সূত্র বার করা যায়নি। অন্য দিকে আবার তিন বাম দলের চাহিদা মতো আসন ছাড়তেও তেজস্বী যাদবেরা নারাজ। এর মধ্যেই আরজেডি-র উপরে চাপ বাড়িয়ে রাখার কৌশল নিয়ে অন্তত ২৫টি আসনের প্রার্থী বাছাই সেরে ফেলেছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, দিল্লিতে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির (সিইসি) বৈঠকে বিহারের প্রায় ২৫টি আসনের প্রার্থীদের নাম বেছে নেওয়া হয়েছে। গত বার মহাজোটে ৭০টি আসন লড়ে ১৯টিতে জিতেছিল কংগ্রেস। প্রথম দফায় সিইসি যে তালিকায় সিলমোহর দিয়েছে, তার মধ্যে গত বারের জেতা সব আসনই আছে। তার সঙ্গে কয়েকটি বাড়তি আসনের প্রার্থীও বেছে রাখা হয়েছে। কংগ্রেস সূত্রে ইঙ্গিত, এ বার বিহারে অন্তত ৫৫টি আসনের জন্য আরজেডি-র সঙ্গে দর কষাকষি চালিয়ে যাওয়া হবে। বিহারের রাজ্য নেতৃত্ব কমপক্ষে ৬০টি আসনে প্রার্থী দিতে চান। তবে তেজস্বীরা নমনীয়তা দেখালে কংগ্রেসও সে রকম পদক্ষেপ করবে।
মহিলাদের জন্য সহায়তার প্রকল্প ঘোষণা বিহার প্রদেশ কংগ্রেসের। পটনায়। —নিজস্ব চিত্র।
কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিধানসভা নির্বাচনের জন্য এআইসিসি-র নিযুক্ত তিন সিনিয়র পর্যবেক্ষক অশোক গহলৌত, ভূপেন্দ্র বঘেল ও অধীর চৌধুরী পটনায় যাচ্ছেন আজ, বৃহস্পতিবারই। বিহারে নীতীশ কুমারের সরকারের বিরুদ্ধে ‘চার্জশিট’ পেশ করবে কংগ্রেস। তার পরে গহলৌত, অধীরদের দলের বৈঠকের পাশাপাশি বিরোধী জোটের সমন্বয়ের কাজেও অংশগ্রহণ করার কথা। বিহার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ রাম বলেছেন, সমঝোতার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরেই ছেড়েছেন। এরই মধ্যে কংগ্রেসের এক বিধায়ক ইস্তফা দিয়ে বিজেপির দিকে পা বাড়ানোয় দলের অস্বস্তিও বেড়েছে।
ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় বসে নেই শাসক এনডিএ শিবিরও। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের নির্বাচন কমিটির বৈঠকে ১১০টি আসনে লড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রার্থীদের নাম পাঠানো হচ্ছে দিল্লিতে। তবে এনডিএ শিবিরেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতন রাম মাঁঝি তাঁর দল ‘হম’-এর জন্য ১৫টি আসনের দাবি করে জটিলতা বাড়িয়ে রেখেছেন। পিছু হটবেন না বলে সুর চড়িয়ে রেখেছেন চিরাগ পাসওয়ানও।
আরজেডি নেতা তেজস্বীর অবশ্য দাবি, বিহারে এ বার পরিবর্তন আসছেই। মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন এবং জনতার মনোভাব বুঝেই মহাজোটের সব শরিক পদক্ষেপ করবে। একটি সূত্রের ইঙ্গিত, নিজের জেতা আসন রাঘোপুরার পাশাপাশি মধুবনী জেলার ফুলপারস থেকেও এ বার প্রার্থী হতে পারেন তেজস্বী। ওই আসন এখন জেডিইউয়ের দখলে।
মহাজোটে সমঝোতা চূড়ান্ত করতে পটনায় রয়েছেন সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন এবং সিপিআইয়ের দুই সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এবং ডি রাজা। লিবারেশন গত বার ১৯টিতে লড়ে ১১টি আসন জিতেছিল। আরজেডি ১৯টি আসনই লিবারেশনকে দিতে চায়। কিন্তু লিবারেশন অন্তত ৩০ আসনের নীচে নামতে রাজি নয় এখনও। সিপিআইয়ের রাজাও বলেছেন, ‘‘গত বার আমরা ৬টি আসনে লড়েছিলাম। এ বারের আসন বাড়ানোর কথা বলে দলের রাজ্য নেতৃত্ব আগেই তালিকা দিয়েছেন। আমরা চাই, সম্মানজনক রফা হোক।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)