বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির পরিমাণ কোনও ভাবেই ৪৯ শতাংশের বেশি হবে না। তা সে বিদেশি সংস্থার প্রত্যক্ষ লগ্নিই হোক বা বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নি। বিমায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে শেষ পর্যন্ত এই রফাতেই পৌঁছেছে বিজেপি ও কংগ্রেস। এই রফাসূত্র মেনেই চন্দন মিত্র নেতৃত্বাধীন রাজ্যসভার সিলেক্ট কমিটি রিপোর্ট পেশ করতে চলেছে। পরশুই রাজ্যসভায় রিপোর্ট পেশ করতে পারে চন্দন মিত্রর কমিটি। বিলটি লোক সভায় পাশ হয়ে রয়েছে। আগামী ২৪ ডিসেম্বর অধিবেশন শেষ হওয়ার আগেই রাজ্যসভায় বিলটি পাশ করিয়ে নিতে চাইবে মোদী সরকার। তাতে জানুয়ারিতে বারাক ওবামার ভারত সফরের আগেই বিমায় বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দেওয়ার পথে আর কোনও বাধা থাকবে না বলেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের আশা।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ আজ জেটলি বলেন, “সংসদে বিল পাশ হলে বিমা ক্ষেত্রের পরিধি বাড়বে।” এখন দেশের অধিকাংশ মানুষেরই কোনও জীবনবিমা নেই। তাঁরাও বিমার আওতায় আসবেন বলে জেটলির আশা। আজই ব্রিটিশ বিমা সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড লাইফের চেয়ারম্যান জেরি গিমস্টোন, কোটাক মহীন্দ্রা ব্যাঙ্কের শীর্ষকর্তা উদয় কোটাকের সঙ্গে বৈঠক করেন জেটলি। সেখানেই তিনি জানিয়ে দেন সিলেক্ট কমিটির রিপোর্ট চূড়ান্ত হওয়ায় পর সরকার এখন দ্রুত বিমা বিল পাশ করাতে বদ্ধপরিকর।
বিমা বিল লোকসভায় পাশ হয়ে গেলেও রাজ্যসভায় আটকে ছিল কংগ্রেস ও অন্যদের বিরোধিতায়। আলোচনার জন্য সেটি পাঠানো হয় সিলেক্ট কমিটিতে। কংগ্রেসের মূল আপত্তি ছিল প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির পাশাপাশি বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলিকেও লগ্নির অনুমতি দেওয়া নিয়ে। কারণ বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি তাদের লাভক্ষতি বুঝে যখন খুশি নিজেদের টাকা তুলে নিতে পারে খুব সহজে। সে ক্ষেত্রে অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা থাকছে। কংগ্রেস তাই দাবি তোলে, বিদেশি আর্থিক সংস্থাকে লগ্নির অনুমতি দেওয়া যাবে না। একই আপত্তি জানায় তৃণমূলও।
সিলেক্ট কমিটিতে রফা হয়েছে, প্রত্যক্ষ লগ্নি ও আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নি মিলিয়ে বিমা ক্ষেত্রে মোট বিদেশি লগ্নির সীমা ৪৯ শতাংশই থাকবে। কংগ্রেসের আনন্দ শর্মারা জানিয়েছেন, এতেই তাঁরা সন্তুষ্ট। মূল বিলে আরও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের প্রস্তাব করেছে চন্দন মিত্র কমিটি। এক, ভারতীয় মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা বিলেই নির্দিষ্ট করা থাক। আমলাদের ইচ্ছেমাফিক যেন তাতে বদল করার সুযোগ না থাকে। দুই, স্বাস্থ্য বিমা সংস্থাগুলির ন্যূনতম পুঁজির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা করা হোক।
কংগ্রেস ও বিজেপির এই সমঝোতার পরে সিলেক্ট কমিটিতে চূড়ান্ত রিপোর্ট গৃহীত হওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা ছিল না। আজ সেই অনুযায়ীই সিলেক্ট কমিটির ১৫ সদস্যের মধ্যে ১১ জনই বিলের পক্ষে সায় দেন। যার মধ্যে বিজেপি, কংগ্রেস ছাড়াও রয়েছে বিএসপি, এডিএমকে, অকালি দল, বিজু জনতা দল। তৃণমূল, সিপিএম, জেডি(ইউ) এবং সমাজবাদী পার্টি আপত্তি তুলে পৃথক নোট পেশ করেছে। তাতে অবশ্য আশঙ্কার কিছু দেখছে না বিজেপি। কারণ রাজ্যসভায় এই চার দলের সদস্যের সংখ্যা মোট ৫০। তাই একজোট হয়েও তাদের পক্ষে রাজ্যসভায় বিল পাশ ঠেকানো মুশকিল।
গত এক সপ্তাহ ধরে সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির কুকথা নিয়ে বিরোধীরা যে রাজ্যসভা অচল করে রেখেছিল, তাতেও আজ ইতি টানতে সমর্থ হয়েছে সরকার পক্ষ। ন’টি দল একজোট হয়ে মন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে সরব হয়েছিল। সরকার তা না মানায় প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবি ওঠে। প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতেও কাজ হয়নি। আজ অচলাবস্থা কাটাতে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন অরুণ জেটলি ও বেঙ্কাইয়া নায়ডু। ঠিক হয়, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারি একটি বিবৃতি পেশ করবেন। সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘স্বীকৃতি’ দিয়ে সকলকে শালীনতা বজায় রাখার ব্যাপারে সতর্ক করা হবে। তাতে আপত্তি জানায় তৃণমূল, বহুজন সমাজ পার্টি, জেডি(ইউ)-এর মতো দল। বিরোধীদের সঙ্গে চলে দর কষাকষি। ‘স্বীকৃতি’র বদলে ‘প্রশস্তি’ শব্দের প্রস্তাব দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। তাতেও বিরোধীরা রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ‘অবগত’ শব্দটিতে রাজি হন বিরোধীরা।
এক সপ্তাহ লাগাতার রাজ্যসভা অচল রাখার পর আজ বিরোধীরা কেন মেনে নিল? বিরোধীদের যুক্তি, আরও অনেক বিষয় রয়েছে। সাধ্বী প্রশ্নে তৈরি হওয়া বিরোধী ঐক্য বিমা বিলে এসে এ ভাবে ভেস্তে যাওয়ায় রাজ্যসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েন অবশ্য বিঁধেছেন কংগ্রেসকে। তাঁর প্রশ্ন, “কংগ্রেস হঠাৎ সান্টা ক্লস হয়ে কেন বিজেপিকে এই বড়দিনের উপহার দিতে চাইছে?” তবে ডেরেকের দাবি, “এই গোটা ঘটনায় সব থেকে বড় সাফল্য হল ন’টি বিরোধী দল একজোট হওয়ার ঘটনা। সংসদের ভিতরে সরকারকে চাপে রাখতে এই ঐক্য ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।” মোদী সরকারের এক মন্ত্রীর কটাক্ষ, “ঐক্য আর রইল কোথায়? দুপুর পর্যন্ত জোট থাকলেও বিকেলে সিলেক্ট কমিটির বৈঠকেই তো বাম, তৃণমূল, জেডি(ইউ) ও সপা পাশে পেল না অন্যদের!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy