Advertisement
E-Paper

আগের কাজের জোরে জয় জামালের

তিন-চারমাস কোনও সরকারের কাজকর্ম বিচারের জন্য যথেষ্ট নয় বলে স্বীকার করেন তিনি। কিন্তু বিজেপি মন্ত্রিসভায় একজন ছাড়া অন্য কোনও দক্ষ মন্ত্রী নেই বলেও তিনি মনে করেন। দফতর পরিচালনা করতে হলে সময় নয়, দক্ষতাই বিচার্য বিষয় বলে তাঁর অভিমত।

শীর্ষেন্দু সী

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫৪

তিন-চারমাস কোনও সরকারের কাজকর্ম বিচারের জন্য যথেষ্ট নয় বলে স্বীকার করেন তিনি। কিন্তু বিজেপি মন্ত্রিসভায় একজন ছাড়া অন্য কোনও দক্ষ মন্ত্রী নেই বলেও তিনি মনে করেন। দফতর পরিচালনা করতে হলে সময় নয়, দক্ষতাই বিচার্য বিষয় বলে তাঁর অভিমত। তিনি বদরপুরের কংগ্রেস বিধায়ক জামালুদ্দিন আহমদ। তবু কাজ হয়নি বলে হইচই করার পক্ষপাতী তিনি নন। কারণ প্রথম বার বিধায়ক হওয়ার পর তিনি নিজেও প্রথম তিন বছরে এলাকায় তেমন কোনও কাজ করতে পারেননি। চারদিকে সমালোচনার ঝড় বইছিল। কিন্তু পরের দু’বছরে এত কাজ করলেন যে পরিবর্তনের তীব্র প্রতিকূল হাওয়াতেও তৃতীয়বার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন।

তাঁর দল অবশ্য তখন ক্ষমতায় ছিল। এখন তিনি বিরোধী বিধায়ক। তবু জামালুদ্দিন মনে করেন, কাজ করতে জানলে ও চাইলে শাসক-বিরোধী বলে কোনও ব্যাপার নেই। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন সরকারকে নিয়ে মুশকিলটা অন্য জায়গায়। কোনও অভিজ্ঞতা নেই মন্ত্রীদের। ১০-১৫ লক্ষ টাকার কাজের ফাইল ছাড়তেও পূর্তমন্ত্রী ১০ বার চিন্তা করছেন।’’ হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে দফায় দফায় সার্টিফিকেট দেন তিনি। বলেন, ‘‘কংগ্রেসের মন্ত্রী ছিলেন। তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে থেকে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।’’ বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে নিয়েও তিনি সংশয়ে রয়েছেন। কারণ সোনোয়ালের অভিজ্ঞতা বলতে, অল্প কিছুদিনের জন্য কেন্দ্রে ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা। ব্যস ওইটুকুই। তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রীর অধস্তন হিসেবে কাজ করা আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সব ক’টি বিভাগের দায়িত্ব সামলানোর মধ্যে যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। জামালবাবুর ধারণা, সে জন্য কিছুটা হলেও বেগ পেতে হবে সরকারকে। কংগ্রেসের বিধায়ক বলেই বিজেপি সরকার যে তাঁকে একেবারে কাজ করতে দেবে না এটাও মানতে নারাজ তিনি।

২০০১ সালে তিনি প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হন। সে বার ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। কিন্তু কংগ্রেসকে হারিয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েই তিনি নিজেকে কংগ্রেসের সহযোগী সদস্য হিসেবে ঘোষণা করেন। ২০০৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোটাররা তাঁকে সে বার প্রত্যাখ্যান করেন। জেতেন এআইইউডিএফ-র আনোয়ারুল হক। পরের নির্বাচনেই বদরপুরের ভোটাররা জামালবাবুকে ফের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেন। কিন্তু গত পাঁচ বছর তাঁকে যতটা না বিরোধী শক্তির মোকাবিলা করতে হয়েছে, তার চেয়ে বেশি লড়তে হয়েছে দলের ভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গেই। দলেরই মন্ত্রী সিদ্দেক আহমদের সঙ্গে তাঁর বিবৃতি যুদ্ধ চলেছে নিয়মিত। বার বার মন্ত্রিত্বের দাবি জানিয়ে ভোটের কয়েক মাস আগে সংসদীয় সচিবের দায়িত্ব পান। কিন্তু সে জায়গায় কোনও ছাপ রাখতে পারেননি। এর পরও প্রবল কংগ্রেস বিরোধী হাওয়ায় এ বার পুনর্নির্বাচিত হলেন তিনি। তাঁর নেতা গৌতম রায় হেরে গিয়েছেন, হেরেছেন চরম শত্রু হিসেবে চিহ্নিত সিদ্দেক আহমদও। এর মধ্যেই বরাক উপত্যকার কংগ্রেসের তিন বিধায়কের একজন বদরপুরের জামালুদ্দিন আহমদ।

জামালবাবুর কথায়, ‘‘কাজ করেছি, তার ফল পেয়েছি।’’ বদরপুরে গ্রামীণ রাস্তাঘাটের প্রভূত উন্নতি করেছিলেন তিনি। সে জন্যই এখন করিমগঞ্জ থেকে শিলচরের গাড়িগুলি গ্রামীণ পথ দিয়ে যাতায়াত করতে পারছে। গ্রামীণ রাস্তাগুলি যদি ঠিক না করতেন তাহলে করিমগঞ্জে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে কিছুই থাকত না। জাতীয় সড়কের যা হাল, তাতে জেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধই হয়ে যেত। তাঁর কথায়, ‘‘বদরপুরের গ্রামীণ পথগুলিই করিমগঞ্জের ‘লাইফলাইন’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’’ বিধায়ক দাবি করেন, ‘‘বদরপুরে এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে কোনও না কোনও কাজ আমি করিনি। গ্রামের প্রায় প্রতিটি রাস্তার উন্নয়ন করেছি। সেতুগুলি পাকা করেছি।’’

শুধু প্রচার বা অপপ্রচার নয়, কাজের মূল্যায়ন করেই বদরপুরের জনগণ তাঁকে তৃতীয়বারের জন্য বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত করেছেন বলে জামালবাবুর দাবি। তিনি বলেন, এআইইউডিএফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমল হেলিকপ্টার নিয়ে বদরপুরে ঝড় তোলার চেষ্টা করেছিলেন। ধোপে টেঁকেনি। অন্য দিকে, তাঁর পক্ষে কংগ্রেসের তেমন কোনও হেভিওয়েট নেতাও প্রচারে আসেননি। এরপরও তিনি জয়লাভ করেছেন নিজের কব্জির জোরে ও মানুষের সমর্থনে।

সে কারণেই এ বারও কাজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী তিনি। কংগ্রেস আমলের মতো এতটা উন্নয়ন করতে না পারলেও আন্দোলন করে জনগণের অধিকার ছিনিয়ে আনবেন বলেই অঙ্গীকার করছেন বদরপুরের কংগ্রেস বিধায়ক জামালুদ্দিন আহমদ।।

Jamaluddin Ahmad Congress MLA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy