ভারত-চিন ভূকৌশলগত জটিলতার মধ্যে বেজিং সফররত বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আজ দেখা করলেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে। গলওয়ানের স্মৃতিকে আপাতত পিছনে রেখে চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ইতিবাচক গতি আনাই লক্ষ্য বলে জানাচ্ছে বিদেশ মন্ত্রক। তবে সদ্য পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে চিনের পক্ষপাত, ভারতকে কোণঠাসা করতে বাংলাদেশ, পাকিস্তানকে নিয়ে সার্ক-এর সমান্তরাল অক্ষ গঠনের চেষ্টা সম্পর্ককে কত দূর সহজ হতে দেবে, তা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে সংশয় রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, চিনের মতো প্রতিবেশীর সঙ্গে সীমান্ত-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঙ্কট থাকবেই। কিন্তু শীর্ষ স্তরে আলোচনা ছাড়া ভিন্ন রাস্তাও নেই। অন্য দিকে, রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা আজ খড়্গহস্ত হয়েছেন মোদী সরকারের চিন নীতি নিয়ে।
জয়শঙ্করের বক্তব্য, শি-কে তিনি ভারত-চিন ‘দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার অগ্রগতির’ বিষয়ে জানান। তাঁদের ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জয়শঙ্কর লেখেন, ‘রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তরফ থেকে প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির বিষয়ে তাঁকে অবহিত করেছি।’
বিদেশমন্ত্রী চিনে গিয়েছেন এসসিওবিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে। সেখানে পাকিস্তানের নাম না করে তাঁর বক্তব্য, “পহেলগাম হামলা সুপরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীরের অর্থনীতিকে আঘাত করে ধর্মীয় বিভাজন বাড়াতে। আমরা এখানে উপস্থিত কেউ কেউ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য। সেখানে কঠোর ভাষায় ওই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করা হয়েছে। যারা এই সন্ত্রাসের অর্থ জুগিয়েছে, আয়োজন করেছে ও যুক্ত থেকেছে, তাদের অবিলম্বে শাস্তিদেওয়ার বিষয়টি বলেছে পরিষদ।” তিনি উল্লেখ করেন, “এসসিও সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও মৌলবাদেরসঙ্গে লড়াইয়ের জন্য তৈরি হয়েছিল।” এসসিও-র আর এক সদস্য পাকিস্তানআজ দিনের শুরুতেই চিনের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বমূলক সম্পর্কের’ উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে।
সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান থেকে ভারত এবং চিনের সেনা অনেকটা সরে এলেও সম্পর্কের কালো মেঘ কাটেনি বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় সরাসরি পাকিস্তানকে সাহায্য করার অভিযোগ ছাড়াও তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মের গুরু দলাই লামার উত্তরাধিকার নিয়ে চিন যে ভাবে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে, তাতে সম্পর্কের ফের অবনতি হতে পারে।
আজ কংগ্রেস মোদী সরকারের চিন নীতি ও জয়শঙ্করের চলতি সফরকে নিশানা করেছে। দলের নেতা রাহুল গান্ধীর কথায়, “আমার ধারণা, চিনের বিদেশমন্ত্রী ভারতে এসে নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করবেন ভারত-চিন সম্পর্কের বর্তমান পদক্ষেপগুলি নিয়ে! বিদেশমন্ত্রী এখন পুরোদস্তুর সার্কাস চালাচ্ছেন, ভারতের বিদেশনীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে।” তার আগে দলের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘বিদেশমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শি-র শেষ বৈঠকের পরে অপারেশন সিঁদুরের সময়ে চিন পুরোপুরি পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে। তারা ভারতের উপর ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান-সহ বিভিন্ন যুদ্ধ সরঞ্জাম পরখ করে দেখেছে।’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)