Advertisement
E-Paper

বাবা-মায়ের জন্মস্থানের তথ্য নিয়ে এনপিআর বৈঠকে আপত্তি

নয়াদিল্লিতে জনগণনা এবং এনপিআরের কাজ খতিয়ে দেখার বৈঠকে কেন্দ্রের এই জবাব অবশ্য বিরোধীদের সব সংশয়ের অবসান ঘটাতে পারেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:২২
এনপিআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।—ছবি এএফপি।

এনপিআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।—ছবি এএফপি।

জাতীয় জনগণনা পঞ্জি (এনপিআর) তৈরির সময় বাবা-মায়ের জন্মতারিখ ও জন্মস্থান কেন জানাতে হবে— প্রশ্ন তুললেন একাধিক কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যের মুখ্যসচিবেরা। এ বারের এনপিআরে এই দু’টি প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলির আপত্তির মুখে কেন্দ্রের ব্যাখ্যা, এনপিআরে তথ্য দেওয়া আবশ্যিক নয়। কেউ না-চাইলে তথ্য না-ও দিতে পারেন। কেন্দ্র গোড়া থেকেই এই দাবি করছে। আজ কার্যত সরকারি ভাবে এ কথা জানানো হল।

নয়াদিল্লিতে জনগণনা এবং এনপিআরের কাজ খতিয়ে দেখার বৈঠকে কেন্দ্রের এই জবাব অবশ্য বিরোধীদের সব সংশয়ের অবসান ঘটাতে পারেনি। তাঁদের আশঙ্কা, বাবা-মায়ের জন্মতারিখ ও জন্মস্থান জানতে চাওয়ার পিছনে আসল কারণ হল, ভবিষ্যতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) তৈরির পথ খুলে রাখা। সে-ক্ষেত্রে যাঁদের বাবা-মা ভারতে জন্মাননি, তাঁরা গোড়াতেই সন্দেহভাজন বলে চিহ্নিত হয়ে যাবেন।

তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘যে মুহূর্তে কেউ বলবেন যে, তিনি বাবা-মায়ের জন্মভিটে কোথায় জানেন না, সেই মুহূর্তে তিনি সন্দেহের তালিকায় চলে যাবেন। আর পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে যাঁরা বাবা-মায়ের জন্মভিটে ও-পার বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ) বলে জানাবেন, তাঁদের সন্দেহজনক তালিকার অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে পূর্ণমাত্রায়। ফলে বিপদ উভয় ক্ষেত্রেই।’’

এই তথ্য জানানো ঐচ্ছিক হলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলেই মনে করছেন বিরোধীদের অনেকে। কারণ, প্রথমত, বাবা-মায়ের জন্মস্থান কোথায় জানা নেই, এই কথা কেন্দ্রের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে তাঁদের আশঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রশ্নোত্তরের শেষে প্রত্যেক নাগরিককে হলফনামা দিতে হবে যে, তিনি জেনেশুনে ঠিক তথ্য জানালেন। রেজিস্ট্রার জেনারেল অ্যান্ড সেন্সাস কমিশনার অব ইন্ডিয়া (আরজিসিসিআই)-র কর্তাদের মতে, পরে তথ্যগত গরমিল ধরা পড়লে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং তাঁকে জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে। যার সর্বোচ্চ পরিমাণ ১ হাজার টাকা।

পশ্চিমবঙ্গ, কেরল-সহ মোট ১৩টি রাজ্য এখনও পর্যন্ত এনপিআর হতে দেবে না বলে সরব। আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ডাকা বৈঠকে রাজস্থানের মুখ্যসচিব ডিবি গুপ্ত বাবা-মায়ের জন্মস্থান সংক্রান্ত প্রশ্নটি এনপিআরের প্রশ্নমালা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘‘বহু নাগরিক তাঁদের বাবা-মায়ের জন্মস্থান না-ই জানতে পারেন।’’ জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘কোনও নাগরিক চাইলে ওই প্রশ্নের উত্তর না-ও দিতে পারেন। কারণ এনপিআরে উত্তর দেওয়া ঐচ্ছিক।’’ কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া হয় জরিমানার বিষয়টি।

আগামী ১ এপ্রিল দেশ জুড়ে শুরু হচ্ছে জনগণনার প্রথম পর্বের কাজ। এই সময়েই এনপিআর সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরজিসিসিআই। রাজ্যগুলিতে সেই কাজের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আজ বৈঠক ডাকা হয়েছিল।

এনপিআর নিয়ে বহু রাজ্যের বিরোধিতা সত্ত্বেও আজকের বৈঠকে তাদের ইতিবাচক প্রতিনিধিত্ব দেখে উৎসাহিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের কর্তাদের মূল্যায়ন হল, আপত্তি থাকলেও মোটের উপরে জনগণনার সঙ্গে এনপিআরের কাজ করতে অধিকাংশ রাজ্যই নিমরাজি। বিজেপি সূত্রের মতে, এনপিআর প্রথম হয়েছিল ইউপিএ আমলে। এখন সেই এনপিআর হতে দিতে নীতিগত ভাবে আপত্তি করা কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলির পক্ষে সমস্যার। তাই বিরোধিতা সত্ত্বেও অধিকাংশ রাজ্যের মুখ্যসচিব ও প্রতিনিধিরা আজ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্রের খবর, এ দিন জনগণনা সংক্রান্ত বৈঠকের সময়ে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ডিরেক্টর (সেন্সাস) বিশ্বনাথ। অবশ্য জনগণনা সংক্রান্ত কাজে হতে দিতে রাজ্যের শাসক দলের আপত্তি নেই। আপত্তি রয়েছে এনপিআরের কাজে। কারণ তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করেন, এনপিআর হল এনআরসির প্রথম ধাপ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ আজ দিল্লিতে থাকলেও বৈঠকে হাজির ছিলেন না। রাজ্য সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের একটি শুনানিতে হাজিরা দিতে তিনি দিল্লি এসেছিলেন। রাতের বিমানে কলকাতা ফিরে যান।

পশ্চিমবঙ্গের ধাঁচেই এনপিআর-এর বিরোধিতা করে বিধানসভায় প্রস্তাব এনেছে বাম-শাসিত কেরল ও কংগ্রেস-শাসিত পঞ্জাব। কিন্তু আজকের বৈঠকে তাদের সে-ভাবে বিরোধিতা করতে দেখা যায়নি বলেই কেন্দ্রের দাবি। ফলে এনপিআর নিয়ে কেন্দ্র-বিরোধী লড়াইয়ে পশ্চিমবঙ্গ খানিকটা একলা হয়ে পড়ল, দাবি করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা।

NPR National Population Registration Congress BJP MHA RGCCI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy