ললিত মোদী-কাণ্ডে নরেন্দ্র মোদী সরকার যখন এমনিতেই ‘ব্যাকফুট’-এ, তখন জমি বিল এবং পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) নিয়ে সরকারকে আরও চাপে ফেলতে চাইছে কংগ্রেস।
জমি বিল এবং পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি বিল, দু’টিই এখন সংসদীয় কমিটিতে। ওই কমিটিতে দুই বিলের বিরুদ্ধে যত রকম সম্ভব প্রশ্ন ও শর্ত তুলে সরকারকে কোণঠাসা করতে কোনও কসুর করছেন না কংগ্রেস নেতারা। এক দিকে জমি বিল নিয়ে আলোচনার জন্য তৈরি যৌথ কমিটিতে বিজেপি-র সদস্য ও কৃষক সংগঠনগুলিকে সামনে রেখে সরকারকে নিশানা করছে কংগ্রেস। অন্য দিকে পণ্য-পরিষেবা কর চালুর জন্য সংবিধান সংশোধনী বিলে পাঁচটি কঠিন শর্ত রেখেছে কংগ্রেস। যে-সব শর্ত মানতে গেলে কার্যত নতুন বিল তৈরি করতে হবে অরুণ জেটলিকে।
ললিত মোদীকে সুষমা স্বরাজ ও বসুন্ধরা রাজের সাহায্য নিয়ে বিতর্ক তৈরির পরে সোমবার জমি বিলের সংসদীয় কমিটির বৈঠক বসতে চলেছে। এ দিন কমিটির সামনে নিজের মতামত জানাবে সঙ্ঘ-পরিবারের কৃষক সংগঠন ভারতীয় কিসান সঙ্ঘ। শুরুতে জমি বিলের কড়া বিরোধিতা করলেও অমিত শাহর সঙ্গে সংগঠনের নেতাদের বৈঠকের পরে তাঁরা কিছুটা সুর নরম করেছেন। লোকসভায় বিল পাশের আগে মোদী সরকারও বেশ কিছু শর্ত মেনে নিয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা চাইছেন, কমিটিতে প্রশ্ন তুলে নতুন করে কিসান সঙ্ঘের সঙ্গে সরকারের বিবাদ উসকে দিতে। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪০০ সংগঠন কমিটির সামনে নিজের মতামত জানিয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র দু’টি বণিকসভা বাদে বাকি ৩৯৮টি ক্ষেত্রেই কোনও না কোনও ভাবে জমি বিলে আপত্তি রয়েছে। কিসান সঙ্ঘ কী বলে, আমরা তা শুনতে চাইছি। কৃষক স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি না-দেখলে তাঁদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।’’ সোমবার কে এন গোবিন্দাচার্য-ও কমিটির কাছে নিজের মতামত জানাবেন, মোদী সরকারের এক বছরের মাথায় যিনি সরকারের নিন্দা করে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, কমিটিতে বিজেপি-র অনেক সাংসদও সরকারি বিলের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। তার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসও জমি বিলের কড়া বিরোধিতা করছে। কিসান সঙ্ঘ বা গোবিন্দাচার্যরা জমি বিলের বিরুদ্ধে একটি কথাও বললে সেটাকেই বড় হাতিয়ার করতে চাইছেন কংগ্রেস নেতারা। আরএসএস-ও জমি বিলের বিভিন্ন শর্ত নিয়ে আরত্তি তুলেছে।
একই ভাবে জিএসটি-বিল নিয়েও রাজ্যসভার সিলেক্ট কমিটিতে কংগ্রেস নেতারা এমন সব শর্ত রেখেছেন, যা মানতে গেলে নতুন করে সংবিধান সংশোধনী বিল তৈরি করতে হবে বলে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের মত। বহু রাজ্য জিএসটি বিলে নীতিগত সমর্থন জানালেও ক্ষতিপূরণের দাবির বিষয়ে এখনও সরব। বিলে বলা হয়েছে, জিএসটি চালুর পরে রাজ্যগুলির রাজস্ব আয় কমে গেলে ক্ষতিপূরণ দেবে কেন্দ্র। প্রথম তিন বছর একশো ভাগ, চতুর্থ বছরে শতকরা ৭৫ ভাগ এবং পঞ্চম বছরে ৫০ ভাগ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কংগ্রেসের প্রধান দাবি, পাঁচ বছর ধরেই পুরো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তা বিলেই উল্লেখ করতে হবে। মহারাষ্ট্র, গুজরাত, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো যে-সব রাজ্যে কারখানা বেশি, যেখানে পণ্য উৎপাদন বেশি হয়, সেই সব রাজ্যের আশঙ্কা ছিল, জিএসটি চালু হলে তাদের রাজস্ব কমবে। কারণ যেখানে পণ্য কেনা হয়, সেখানেই জিএসটি আদায় হবে। এ জন্য ওই রাজ্যগুলিকে ১ শতাংশ হারে বাড়তি কর বসানোর অনুমতি দিয়েছেন জেটলি। কংগ্রেসের দাবি, বাড়তি কর বসানো যাবে না। অন্য তিনটি দাবি হল: প্রথমত, জিএসটি-র হার ১৮ শতাংশের বেশি হবে না। এবং বিলে তা-ও উল্লেখ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, তামাক ও বিদ্যুৎকে জিএসটি-র আওতায় আনতে হবে। তৃতীয়ত, কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ নিষ্পত্তির নিরপেক্ষ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
এই পাঁচটি শর্ত মেনে নেওয়া কতখানি সম্ভব, তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা যথেষ্ট সন্দিহান। কিন্তু তাঁদের যুক্তি, সংবিধান সংশোধনী বিল শুধু সংসদে পাশ করালেই হবে না। তাতে সিংহভাগ রাজ্যেরও সিলমোহর দরকার। কাজেই কংগ্রেসের সমর্থন না-পেলে রাজ্যসভা বা রাজ্য স্তরে এই বিল ছাড়পত্র পাবে না। সব শর্ত মেনে ফের বিল তৈরি করতে হলে ২০১৬-র ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালু করা যাবে না। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘ওই সময়সীমা মোদী সরকারের নিজের তৈরি। তা না-মানলেই বা কী ক্ষতি? ইউপিএ সরকারও এমন সময়সীমা তৈরি করেছিল। কিন্তু বিজেপি জিএসটি বিলকে আড়াই বছর সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আটকে রেখেছিল।’’ জমি বিলের ভবিষ্যৎ? কংগ্রেসের রসিক নেতার জবাব, ‘‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বরঞ্চ নতুন ‘অর্ডিন্যান্স’ ফ্যাক্টরি তৈরি করুক। কারণ জমি বিলে অর্ডিন্যান্স ছাড়া উপায় নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy