E-Paper

সোনার বাংলার পরে জনগণমন, বিজেপি নেতা দেখলেন ব্রিটিশ-বন্দনা!

রবীন্দ্রনাথকে তিনি কাঠগড়ায় তুললেন ‘বন্দে মাতরম্’-এর গুণকীর্তন করতে গিয়ে, যার রচয়িতা আর এক বঙ্গসন্তান, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৪৬
সাংসদ বিশ্বেশ্বর হেগড়ে কাগেরি।

সাংসদ বিশ্বেশ্বর হেগড়ে কাগেরি। —ছবি : সংগৃহীত

নিশানা সেই রবীন্দ্রনাথ। আক্রমণে সেই বিজেপি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’-কে শুধুমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বলে দাগিয়ে দিয়ে সেটি গাওয়ার জন্য দেশদ্রোহের মামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। এ বার তাঁরই দলের সাংসদ বিশ্বেশ্বর হেগড়ে কাগেরি দাবি করে বসলেন, রবীন্দ্রনাথ-রচিত ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ লেখা হয়েছিল ব্রিটিশকে স্বাগত জানাতে! রবীন্দ্রনাথকে তিনি কাঠগড়ায় তুললেন ‘বন্দে মাতরম্’-এর গুণকীর্তন করতে গিয়ে, যার রচয়িতা আর এক বঙ্গসন্তান, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

বিশ্বেশ্বর এক কালে কর্নাটক বিধানসভার স্পিকারের দায়িত্ব সামলেছেন। কারওয়ারের হোন্নাভারাতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘বন্দে মাতরম্‌-কে জাতীয় সঙ্গীত করার দাবি উঠেছিল। কিন্তু পূর্বসূরিরা সিদ্ধান্ত নেন, এর সঙ্গে জনগণমনকেও জুড়ে দেওয়া হবে, যে গানটা কি না ব্রিটিশকে স্বাগত জানাতে রচনাকরা হয়েছিল।’’

মহা সমারোহে বন্দে মাতরম্-এর দেড়শো বছর পূর্তির উদ্‌যাপনে নেমেছে বিজেপি। আগামিকাল সকালে নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইনডোর স্টেডিয়ামে যার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দীর্ঘ নিবন্ধ লিখেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। লিখেছেন, ‘বন্দে মাতরম্‌’ ভারতের জাগরণের প্রথম মন্ত্র।... এই পবিত্র মন্ত্র মনে করিয়ে দেবে আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যকে।’

বিশ্বেশ্বরও স্বাধীনতা সংগ্রামে ‘বন্দে মাতরম্‌’-এর ভূমিকার কথা বলতে গিয়েই ‘জনগণমন নিয়ে মন্তব্যটি করে বসেছেন। তা শুনে কর্নাটকের মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা প্রিয়ঙ্ক খড়্গে এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘আর একটা দিন, আরএসএসের ওয়টস্যাপ-ইতিহাসের আর একটা পাঠ! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১১ সালে ভারতভাগ্যবিধাতা লিখেছিলেন। তার প্রথম স্তবকটি জনগণমন। ১৯১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর কলকাতায় কংগ্রেসের অধিবেশনে গাওয়া হয়েছিল। সেটি কোনও রাজাকে বন্দনা করে সৃষ্টি হয়নি। রবীন্দ্রনাথ নিজেও ১৯৩৭ এবং ১৯৩৯ সালে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, এই গান ভারতের ভাগ্যবিধাতার জয়গান— পঞ্চম, ষষ্ঠ বা কোনও জর্জের নয়।’

‘জনগণমন’-র রচনাকাল ১৯১১ সালের ডিসেম্বর। আর সেই মাসেই দিল্লিতে সম্রাট পঞ্চম জর্জের অভিষেক-সংবর্ধনা হয়। পুলিনবিহারী সেনকে একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘সে বৎসর ভারত সম্রাটের আগমনের আয়োজন চলছিল। রাজসরকারের প্রতিষ্ঠাবান আমার কোনো বন্ধু সম্রাটের জয়গান রচনার জন্যে আমাকে বিশেষ করে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। শুনে বিস্মিত হয়েছিলুম, সেই বিস্ময়ের সঙ্গে মনে উত্তাপেরও সঞ্চার হয়েছিল। তারই প্রবল প্রতিক্রিয়ার ধাক্কায় আমি জনগণমনঅধিনায়ক গানে সেই ভারতভাগ্যবিধাতার জয়ঘোষণা করেছি, পতন-অভুদ্যয়বন্ধুর পন্থায় যুগযুগধাবিত যাত্রীদের যিনি চিরসারথি, যিনি জনগণের অন্তর্যামী পথপরিচায়ক— সেই যুগ যুগান্তরের মানবভাগ্যরথচালক যে পঞ্চম বা ষষ্ঠ বা কোনো জর্জ্‌ই কোনোক্রমেই হতে পারেন না সে কথা রাজভক্ত বন্ধুও অনুভব করেছিলেন।’ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের পুত্র প্রিয়ঙ্ক সম্ভবত এই চিঠির কথাই উদ্ধৃত করেছেন। আর একটি চিঠিতে সুধারানী সেনকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘শাশ্বত মানব-ইতিহাসের যুগযুগধাবিত পথিকদের রথযাত্রায় চিরসারথি ব’লে আমি চতুর্থ বা পঞ্চম জর্জের স্তব করতে পারি, এরকম অপরিমিত মূঢ়তা আমার সম্বন্ধে যাঁরা সন্দেহ করতে পারেন তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আত্মাবমাননা।’ সেই সময়েও রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘গানটি নিয়ে দেশের কোনো কোনো মহলে দুর্বাক্যের উদ্ভব হয়েছে।’ বিজেপি নেতারা বুঝিয়ে দিলেন, ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে’।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Himanta Biswa Sarma Assam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy