গত কাল সংখ্যাটা ছিল ৭৫ হাজার। আজ ৭৭ হাজার। ভারতে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় করোনার সংক্রমণের লেখচিত্র গত দু’দিন ধরে কার্যত নজিরবিহীন ভাবে ঊর্ধ্বমুখী।
আন্তর্জাতিক সমীক্ষক ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের হিসেবে, দেশে মোট কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪ লক্ষ পেরিয়েছে। ব্রাজিল দাঁড়িয়ে ৩৭.৬৪ লক্ষে। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী মেনেই সেপ্টেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণ-তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ভারতের উঠে আসার সম্ভাবনা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধির হিসেবে আজ নিয়ে টানা ২২ দিন আমেরিকা ও ব্রাজিলকে টেক্কা দিয়েছে ভারত।
দেশে করোনার সংক্রমণের গোড়ার দিকে বিরোধীদের আপত্তি উড়িয়েই সংসদ চলছিল। অভিযোগ উঠেছিল, মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের সরকার ফেলার জন্যই জবরদস্তি অধিবেশন জারি রেখেছিল মোদী সরকার। সেই সময়ে ২০ মার্চ কংগ্রেসের সাংসদ এইচ বসন্তকুমার লোকসভায় দাবি তুলেছিলেন, করোনাকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করা হোক। শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হোক। শাসক শিবিরের বেঞ্চ থেকে উড়ে আসা বিদ্রুপে ধামাচাপা পড়ে যায় তাঁর সেই দাবি। কন্যাকুমারীর ৭০ বছর বয়সি সাংসদ বসন্তকুমার আজ কোভিড আক্রান্ত হয়েই মারা গেলেন চেন্নাইয়ে। তাঁর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অসংবেদনশীলতার অভিযোগ আজ ফের তুলেছেন বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: ‘দৈবে’ দায় ঠেলে ফাঁপরে সীতারামন
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় আজ পঞ্জাব বিধানসভায় এক দিনের বিশেষ অধিবেশন বসে। তাতে যোগ দেওয়ার পরেই করোনা ধরা পড়েছে কংগ্রেস বিধায়ক নির্মল সিংহের। রাজ্যের অন্তত ২৩ জন বিধায়ক করোনা পজ়িটিভ হওয়ায় কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এ দিনের অধিবেশন বসেছিল। প্রতিটি বেঞ্চে এক জন বিধায়কের বসার ব্যবস্থা হয়েছিল। আপের একাধিক বিধায়ক পিপিই পরে এসেছিলেন। স্পিকার রানা কে পি সিংহ জানান, গত ২৫ অগস্ট করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল বলেই নির্মল আজ এসেছিলেন। আজ তিনি জ্বর ভাব বোধ করায় ফের পরীক্ষা করান। রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। প্রায় ১৫ মিনিট বিধানসভায় ছিলেন ওই বিধায়ক। তাঁর সংস্পর্শে কারা এসেছিলেন, তা খুঁজে বার করা হচ্ছে।
দিল্লিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮০৮ জন সংক্রমিত হওয়ার পরে অরবিন্দ কেজরীবাল সরকার জানিয়েছে, ৩০০ ডিসপেনসারি ও হাসপাতালে নিখরচায় কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে তারা। সংক্রমিতদের সংস্পর্শে কারা এসেছিলেন, তা খোঁজায় আরও জোর দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন জানিয়েছেন, পরীক্ষা বাড়ানো, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসা, বাইরে থেকে অনেকের চিকিৎসা করাতে দিল্লিতে আসার মতো নানা কারণে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে পরীক্ষার সংখ্যা দৈনিক ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজারে নিয়ে যাওয়াই সরকারের লক্ষ্য। নিজে কোভিড থেকে সেরে উঠেছিলেন জৈন। আজ এক ভিডিয়োতে তিনি বলেছেন, সেরে ওঠার পরে সবাই যেন রোজ যোগব্যায়াম করেন। সেই সঙ্গে হলুদ, আদা, তুলসি অথবা দুধ-হলুদের মিশ্রণ পান করতে বলেছেন তিনি। জৈনের বক্তব্য, এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, রক্ত দলা পাকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, দৈনিক সংক্রমণ বাড়লেও দৈনিক সুস্থের সংখ্যা ইদানীং একটানা ৫০ হাজারের উপরে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তা ৬০ হাজার পেরিয়েছে। অ্যাক্টিভ রোগীর চেয়ে সুস্থের সংখ্যা ১৮ লক্ষেরও বেশি। মোট সংক্রমিতের ২২ শতাংশ মাত্র অ্যাক্টিভ রোগী। সুস্থতার হার ৭৬.২৮ শতাংশ। গত পাঁচ মাসে যাঁরা কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি এখন সুস্থ। মৃত্যুহার ১.৮২ শতাংশে নেমেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ৪ কোটি ছুঁতে চলেছে, যার মধ্যে ১ কোটিরও বেশি পরীক্ষা হয়েছে গত দু’সপ্তাহে। দেশে প্রতি ১০ লক্ষে পরীক্ষার সংখ্যা এখন ২৮,৬০৭।