Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ব্যবধান কমাল ব্রিটেন, ফের প্রশ্নে কোভিশিল্ড

কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান কেন ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করা হল, তা নিয়ে গোড়া থেকেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২১ ০৬:৪৯
Share: Save:

কোভিশিল্ড প্রতিষেধক নিয়ে ফের বিতর্কে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

দিন দুয়েক আগে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার কোভিশিল্ড প্রতিষেধকের দু’ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। বলা হয়েছিল, ব্রিটেনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রতিষেধকের কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ওই সিদ্ধান্ত। কিন্তু এর পরেই ওই প্রতিষেধকের দুই ডোজ়ের ব্যবধান কমিয়ে আট সপ্তাহ করার কথা ঘোষণা করেছে ব্রিটেন। ফলে বেকায়দায় পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। প্রশ্ন উঠেছে, এ বার কি তা হলে ফের ব্রিটেনের দেখাদেখি কোভিশিল্ড প্রয়োগ নিয়ে পুরনো সিদ্ধান্তে ফিরবে কেন্দ্র? এ নিয়ে সরকার যে অস্বস্তিতে, তা আজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের বিবৃতিতে। রীতিমতো হাতজোড় করে আজ কোভিশিল্ড বিতর্কে ইতি টানার আর্জি জানিয়েছেন নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পল। তাঁর দাবি, যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বৈজ্ঞানিক তথ্যের উপরে ভিত্তি করেই নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি অর্থহীন।

কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান কেন ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করা হল, তা নিয়ে গোড়া থেকেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। সরকার যে কোনও চাপে পড়ে ওই সিদ্ধান্ত নেয়নি, তা জানিয়ে আজ মুখ খোলেন বিনোদ পল। তিনি বলেন, ‘‘এটি সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি সিদ্ধান্ত, যা বৈজ্ঞানিক গবেষণার উপরে ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছিল।’’ দু’দিন আগে কেন্দ্রের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে, ব্রিটেনে অক্সফোর্ডের টিকা প্রয়োগের ফলাফলের উপরে ভিত্তি করে সে দেশের সরকার রিস্ক প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে
ব্যবধান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তার ভিত্তিতে এ দেশেও দু’ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। আজ অবশ্য ব্রিটেনের গবেষণার সরাসরি উল্লেখ না-করে বিনোদ পল বলেন, ‘‘দেশীয় বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলি প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীদের নিয়ে গঠিত। ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজ়রি গ্রুপ অন ইমিউনাইজেশন’ (এনটিএজিআই) স্বাধীন ভাবে তথ্যের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ভুললে চলবে না, ওই গোষ্ঠীই অতীতে রোটাভাইরাস নির্মূল করা থেকে শুরু করে অন্য বেশ কয়েকটি টিকাদান কর্মসূচির বিষয়ে দেশকে পথ দেখিয়ে এসেছে।’’

প্রথমে কোভিশিল্ডের দুই ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান ছিল ২৮ দিনের। পরে তা বাড়িয়ে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ এবং শেষে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করা হয়। এ দেশে এখনও পর্যন্ত ১৮ কোটি মানুষ টিকা পেয়েছেন। তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ পেয়েছেন কোভিশিল্ড। দেশের নানা প্রান্তে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছে জনতা। আজ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম অভিযোগ করেন, কোভিশিল্ডের উৎপাদন সীমিত। সরকারের হাতে যথেষ্ট টিকা নেই। সেই কারণে ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে জোগান স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে সরকার। এতে আখেরে টিকাকরণ নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে। এই অভিযোগের জবাবে আজ বিনোদ পল বলেন, ‘‘যদি টিকার অভাবের কারণে ব্যবধান বাড়ানোর দরকার হত, তা হলে অনেক আগেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। বিশেষ করে যখন ব্রিটেন ব্যবধান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখনই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। কিন্তু তা করা হয়নি। পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক তথ্যের উপরে ভরসা রেখেছিলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।’’

দু’টি ডোজ়ের ব্যবধান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল, তার ব্যাখ্যায় পল জানান, প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ়ের মধ্যে ঠিকমতো ব্যবধান না-থাকলে সংক্রমণের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। এ নিয়ে যখন গবেষণা চলছিল, তখন প্রোটোকল ছিল, দুই ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান হবে চার থেকে ছয় সপ্তাহ। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেই প্রোটোকল মানা হয়নি। নির্দিষ্ট ব্যবধানে প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় পাননি অনেকে। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, দুই ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট গ্রহীতার শরীরে কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বরং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে।

ওই কেন্দ্রীয় কর্তার বক্তব্য, এ নিয়ে যথেষ্ট সংখ্যক প্রমাণ না-থাকায় তখনই চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে নিজস্ব গবেষণার ভিত্তিতে ব্রিটেন দু’টি ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে তিন মাস করে দেয়। সে দেশেও কয়েক লক্ষ মানুষের শরীরে ইতিবাচক প্রভাবই দেখা যায়। ফলে ভারত ও ব্রিটেনের গবেষণার প্রমাণের ভিত্তিতে বোঝা গিয়েছে যে, দুটি ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান বাড়লে সংক্রমণকে আরও ভাল ভাবে রুখে দেওয়া সম্ভব। যার ভিত্তিতে এ দেশে পরীক্ষা চালিয়ে ওই ব্যবধান বাড়ানোর পক্ষে সবুজ সঙ্কেত দেন বিজ্ঞানীরা। পলের দাবি, গোড়ায় বিজ্ঞানীদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ না-থাকলেও, বর্তমানে টিকাকরণের আওতায় আসা ১৮ কোটি ভারতীয়ের তথ্য বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজে সাহায্য করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE