Advertisement
E-Paper

২৪ ঘণ্টা জ্বলছে চুল্লি-চিতা, তবুও লাশের স্তূপ জমছে দিল্লির শ্মশানে

শহরের প্রাণকেন্দ্র লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকাতেই যেহেতু অবস্থিত নিগম বোধ শ্মশান ঘাটটি, সেখানেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মৃতদেহ এসে পৌঁছচ্ছে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২০ ১৭:৩৪
পাশাপাশি জ্বলছে চিতা। ছবি: এএফপি।

পাশাপাশি জ্বলছে চিতা। ছবি: এএফপি।

করোনা সংক্রমিত দেহ কাঠের চিতায় তুললে ছড়াতে পারে সংক্রমণ। সেই আশঙ্কায় এত দিন শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক চুল্লিতেই দেহ সৎকার চলছিল। তাতে কুলাতে না পেরে সম্প্রতি কাঠের চিতায় দেহ তোলার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে দিল্লির নিগম বোধ শ্মশান কর্তৃপক্ষকে। দিনভর চিতার আগুন ও ধোঁয়ায় চোখে জ্বালা ধরে গেলেও, সব দেহ সৎকার করে উঠতে পারছেন না শ্মশানকর্মীরা।

জানুয়ারির শেষ থেকে এখনও পর্যন্ত নোভেল করোনার প্রকোপে ভারতে ৬ হাজার ৬৪২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র দিল্লিতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৭০৮ জন। তবে মৃত্যুসংখ্যা বেড়ে চললেও, কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, সব শ্মশানে তাঁদের দাহ করা যাচ্ছে না। নিগম বোধ ছাড়া অন্য তিনটি শ্মশান এবং দু’টি কবরস্থানেই তাঁদের দাহ করতে হচ্ছে।

তবে শহরের প্রাণকেন্দ্র লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকাতেই যেহেতু অবস্থিত নিগম বোধ শ্মশান ঘাটটি, বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গ থেকে সেখানেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মৃতদেহ এসে পৌঁছচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ২৪ ঘণ্টা শ্মশান খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিগম বোধ কর্তৃপক্ষ। ছ’টির মধ্যে তিনটি বৈদ্যুতিক চুল্লি কাজ করছে সেখানে। গত সপ্তাহে কাঠের চিতাতেও করোনায় মৃতদের তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও সব দেহ সৎকার করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গিয়েছে।

জ্বলন্ত চিতার পাশ দিয়েই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আরও একটি মৃতদেহ। ছবি: এএফপি।

আরও পড়ুন: ঠিক মতো পরীক্ষা হলে ভারত ও চিনে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে, দাবি ট্রাম্পের​

আরও পড়ুন: কোভিড রোগীদের ফেরাতে পারবে না দিল্লির হাসপাতাল, কড়া বার্তা কেজরীবালের​

শ্মশান ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সুমনকুমার গুপ্ত জানান, মৃতদেহ নিয়ে শ্মশানে ঢোকার মুখে মৃতের পরিবারের সকলকে জীবাণুমুক্তকরার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সামাজিক দূরত্ব মেনে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে অনেকটা সময়ও লেগে যায়। তার জন্য উদ্বেগ নিয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্মশানে অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের। কিন্তু এ ছাড়া অন্য উপায় নেই বলে জানান তিনি। সুকুমার গুপ্তের কথায়, ‘‘সকলেই চান চটজলদি সব কিছু মিটিয়ে ফেলতে। কিন্তু এই মুহূর্তে তিনটি মাত্র বৈদ্যুতিক চুল্লি কাজ করছে। তাই সময় লেগে যায়।’’হাসপাতাল ও মর্গগুলিতে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায়, কোনও কোনও সময় একটি অ্যাম্বুল্যান্স চার-পাঁচটি দেহ নিয়ে শ্মশানে হাজির হয় বলেও জানান তিনি। সেই সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় শ্মশান কর্মীদের। গত দু’মাসে নিগম বোধ শ্মশানে ৫০০-র বেশি দেহ দাহ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সুকুমার গুপ্ত।

সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক অ্যাম্বুল্যান্স কর্মী জানান, এমনও হয়েছে যে অ্যাম্বুল্যান্সে একাধিক দেহ নিয়ে শ্মশানে পৌঁছেছেন তিনি। কিন্তু ভিড় থাকায় সঙ্গে সঙ্গে দেহগুলি দাহ করা যায়নি। এমন অবস্থায় হাসপাতালে দেহ ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই রাতে মৃতদেহ সমেত অ্যাম্বুল্যান্স শ্মশানে ফেলে রেখেই বাড়ি ফিরে যান তিনি। পর দিন সকালে ফের অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে যান।

নিগম বোধ শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দেহ ঢোকানো থেকে চিতাভষ্ম বার করা, গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় দু’ঘণ্টা সময় লাগে বলে জানা গিয়েছে। চিতায় সৎকার করলে, কাঠ বয়ে আনা, চিতা সাজানো মিলিয়ে সময় লাগে আরও বেশ খানিকটা। সে ক্ষেত্রে শ্মশানকর্মীরাই মৃতদেহে ঘি লাগানো, গলায় গাঁদা ফুলের মালা পরানোর কাজ সারেন।

চিতায় সৎকারের সময় পরিবারের দু’চার জন সদস্যকেই সেখানে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বৈদ্যুতিক চুল্লিতে মৃতদেহ দাহ করার সময়, মুখে মাস্ক পরে, কাচের দেওয়ালের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় মৃতের পরিবারের লোকজনকে। নিগম বোধ ঘাটে এক সঙ্গে চারটি চিতায় দেহ দাহ করা যায়। প্রতিটি চিতা পিছু চার জন করে শ্মশানকর্মী মোতায়েন থাকেন।

নিগম বোধ ঘাটে কর্মরত সঞ্জয় শর্মা নামের এক শ্মশানকর্মী জানান, এই সঙ্কটের সময়ও মৃতদেহগুলিকে যাতে সম্মানের সঙ্গে দাহ করা যায়, সেদিকে নজর রাখেন তাঁরা। তবে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর।

Coronavirus COVID-19 Nigambodh Ghat Delhi Coronavirus in India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy