ছবি পিটিআই।
দিল্লিতে দাহকার্যের জন্য কাঠ নেই। মৃতদেহের দীর্ঘ লাইনের ছবি আতঙ্কিত করে চলেছে দেশবাসীকে। কেরল, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্রেও ছবিটা বিশেষ অন্য রকম নয়। পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়ে গিয়েছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের দাপট।
এই পরিস্থিতিতে মানুষের মনে ‘ইতিবাচক শক্তি’ আনতে ‘পজ়িটিভিটি আনলিমিটেড’ শীর্ষক একটি টেলিভিশন সম্মেলন করবেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। চার দিনের এই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তারা হলেন, উইপ্রোর আজিম প্রেমজি, সুধা মূর্তি, শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর, নির্মল সন্ত আখাড়ার জ্ঞানদেব প্রমুখ।
প্রশ্ন উঠছে, অক্সিজেন নিয়ে এই সুতীব্র হাহাকার, শ্মশানে নৈরাজ্য, ওষুধের অনটন, বেডের অভাব—মানুষের এই চূড়ান্ত দুঃসময়ে সঙ্ঘের কর্মীরা কোথায়। বিশেষত যখন সমাজসেবার মাধ্যমে মানুষের পাশে থাকার কথাই প্রচার করে আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবার। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এই অভিযোগের মুখে দাঁড়িয়ে কিছুটা সাফাই দিতেই এই ‘অসীম ইতিবাচক’ তোড়জোড়।
অনুষ্ঠানটি শুরু হবে মে মাসের ১১ তারিখ। শেষ দিন অর্থাৎ ১৪ তারিখ জাতির উদ্দেশে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে বক্তৃতা দেবেন মোহন ভাগবত। সংঘের ‘কোভিড রেসপন্স টিম’ (সিআরটি)-এর আহ্বায়ক গুরমিত সিংহ বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য, জনতার মনোবল চাঙ্গা করা এবং একসঙ্গে এই বিপদের মোকাবিলা করা। আমরা যে শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করব--- এই আশা জোগানো।”
কিন্তু কোভিডের বিরুদ্ধে জয় কি শুধুমাত্র ‘ভোকাল টনিক’-এ পাওয়া সম্ভব? তার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন, পর্যাপ্ত প্রতিষেধক, উন্নত চিকিৎসা পরিকাঠামো — যার অভাবে মানুষ মরে যাচ্ছেন। আরএসএস-র তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, সিআরটি-র বেশ কিছু উদ্যোগের কথা। জানানো হয়েছে, প্রায় শ-পাঁচেক বেড সম্বলিত নিভৃতবাসের কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে যেখানে সাময়িক অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কোভিড রোগীদের জন্য খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা ছাড়াও, ৮০৩টি প্লাজমা প্রদানকেন্দ্র, ১৩০০টি সিটি স্ক্যান মেশিন সেখানে রয়েছে। সিআরটি একটি হেল্পলাইনের ব্যবস্থা করেছে যেখানে ১৩০ জন চিকিৎসক এবং ১২০০ জন স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। তবে প্রশ্ন উঠছেই, অতিমারিতে মানুষের বিপুল অসহায়তার সামনে এই উদ্যোগ কত টুকু?
সঙ্ঘ সূত্রে খবর, আর এসএস-এর রাজ্যস্তরের প্রচার বিভাগ প্রত্যেক দিন বিভিন্ন ‘সাফল্যের কাহিনি’ সংগ্রহ করে তা প্রচার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছে। দেশ জুড়ে চলছে এই উদ্যোগ। সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবালে সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে ভারত-বিরোধী অংশ। আর সে কারণেই আলোচনা এবং বক্তৃতার মাধ্যমে দেশবাসীর মধ্যে ‘ইতিবাচক ঢেউ’ তুলতে চাইছে আরএসএস।
কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী এই প্রসঙ্গে বলেন, “আরএসএস ভারতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার বাইরে আর কিছু করে বলে তো মনে হয় না। খুশি হতাম যদি দেখতাম, মোহন ভাগবত রাস্তায় নেমে শ্মশানে দাহর ব্যবস্থা, অক্সিজেন ওষুধ, প্রতিষেধকের জোগান নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানাতেন, প্রশ্ন তুলতেন। কিন্তু তিনি ভণ্ড দেশপ্রেমী। তাই জাতীয় বিপর্যয়ের সময়েও রাজনীতি করে চলেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy