টিভিতে নাম শোনা গিয়েছে বার বার। আশপাশ থেকে কয়েক বার তাদের চর ধরা পড়েছে বলেও শুনেছেন অনেকে। এ বার সরকারি সফরে প্রথম ভারতে আসা আইএসআই অফিসারকে দেখতে ভিড় জমালেন পঠানকোটের বাসিন্দারা।
পঠানকোট বায়ুসেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হানার তদন্তে ভারতে এসেছে পাঁচ সদস্যের পাক দল। ওই পাঁচ জনের মধ্যে রয়েছেন আইএসআই অফিসার তনভির আহমেদও। সীমান্ত শহর পঠানকোটে পাক চর ধরা পড়ার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু আইএসআইয়ের নাম বার বার শুনলেও তাদের কোনও অফিসারকে এমন সরকারি ভাবে ভারতে আসতে দেখেননি কেউই। তাই আজ পাক দলের আসার খবর পেয়ে কেউ কেউ বায়ুসেনা ঘাঁটির যতটা সম্ভব কাছে গিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন ‘আইএসআই কা বান্দা’টি কেমন দেখতে। জঙ্গিরা কোন পথে পাকিস্তানে ঢুকেছিল তা দেখাতে পাক দলটিকে সীমান্তের বামিয়াল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। তাই বামিয়ালের রাস্তাতেও ভিড় করেছিলেন অনেকে। তাঁরা পাক দলের কনভয় দেখতে পেয়েছেন কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি।
তবে পাক দলের আসা নিয়ে ইসলামাবাদের কাছে ‘আত্মসমর্পণের’ অভিযোগের ওঠায় কড়া সতর্কতা নিয়েছিল দিল্লি। অমৃতসর থেকে পাক গোয়েন্দাদের সড়কপথে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে আনা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, আকাশ থেকে ঘাঁটির চেহারা কেমন তা তাঁদের দেখতে দিতে চায়নি কেন্দ্র। ঘাঁটির যে অংশে যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টারের ও অন্য যন্ত্রপাতি রয়েছে তা ঢেকে দেওয়া হয়েছিল সাদা পর্দা দিয়ে। পাক গোয়েন্দাদের ঘাঁটিতে ঢোকানোও হয় নতুন ভাবে তৈরি একটি বিশেষ দরজা দিয়ে।
তাতে বিরোধীদের সমালোচনার ঝাঁঝ কমেনি। আজ বায়ুসেনা ঘাঁটির বাইরে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস ও আপ সমর্থকরা। কংগ্রেসের দাবি, পাক গুপ্তচরদের গোটা ঘাঁটি ঘুরে দেখার সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্র। দিল্লির মন্ত্রী ও আপ নেতা কপিল মিশ্রের দাবি, ‘‘৩৫ বছরে এই প্রথম বোঝাতে চাইছি যে আইএসআই সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না। যারা ভারতবাসীকে খুন করেছে তারাই আবার তদন্তে এসেছে। এটা দেশের অপমান।’’
বিরোধীদের আক্রমণ সামলাতে তাই আজ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও এনআইএ প্রধান শরদ কুমারকে আসরে নামায় মোদী সরকার। বিজেপি সভাপতি সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, ‘‘পাক দলটিকে সব জায়গায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই প্রথম পাকিস্তান সত্যিই তদন্তের চেষ্টা করছে। তদন্তের ফল পরে জানা যাবে।’’ আবার এনআইএ প্রধান শরদ কুমার বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘পাক তদন্তকারীরা আমাদের যুক্তির বিরোধিতা করেননি। আমাদের দেওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণও উড়িয়ে দেননি। আগামিকাল আমরা পঠানকোট নিয়ে পাকিস্তানি তদন্তের গতিপ্রকৃতি জানতে চাইব।’’ শরদ জানিয়েছেন, তাঁরা মৌলানা মাসুদ আজহারকে জেরা করতে দেওয়ার দাবি জানাবেন।
পঠানকোটে সিভিল হাসপাতালের মর্গে রাখা জঙ্গিদের দেহগুলি অবশ্য আজ পরীক্ষা করে দেখেননি পাক গোয়েন্দারা। তবে তাঁদের তরফে জঙ্গিদের ডিএনএ নমুনা চাওয়া হয়েছে বলে এনআইএ সূত্রে খবর। পাল্টা দাবি হিসেবে হামলার ঠিক আগে যে জঙ্গি পাকিস্তানে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিল তার পরিবারের ডিএনএ নমুনা চেয়েছে ভারত। মোদী সরকার যতই সহযোগিতার ঝান্ডা ওড়াক, ইতিমধ্যেই বিরূপ সুর শোনা গিয়েছে পাক সংবাদমাধ্যমে। তাদের দাবি, পাক গোয়েন্দারা যা সাক্ষ্যপ্রমাণ চেয়েছিলেন তা দিতে রাজি হচ্ছে না ভারত।
কাজের কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে তাই সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে দিল্লিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy