Advertisement
E-Paper

গুলি-কার্ফু-মৃত্যু নিয়েই দিন কাটছে ভূস্বর্গের

বিমানবন্দরের প্রধান গেট দিয়ে বেরোতেই ধাক্কাটা লাগল! মনে হল যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে গিয়েছি! গোটা চত্বরটা জলপাই উর্দিতে গিজগিজ করছে। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় সাঁজোয়া গাড়ি। কোনও মতে একটা ট্যাক্সি ধরে বিমানবন্দরের মূল চৌহদ্দি পার হতেই আধাসেনার একটি দল ঘিরে ধরল ট্যাক্সি।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:১১
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বিমানবন্দরের প্রধান গেট দিয়ে বেরোতেই ধাক্কাটা লাগল!

মনে হল যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে গিয়েছি! গোটা চত্বরটা জলপাই উর্দিতে গিজগিজ করছে। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় সাঁজোয়া গাড়ি। কোনও মতে একটা ট্যাক্সি ধরে বিমানবন্দরের মূল চৌহদ্দি পার হতেই আধাসেনার একটি দল ঘিরে ধরল ট্যাক্সি। গাড়ির ভিতরে নজর ঘোরাতে ঘোরাতেই উড়ে এল প্রশ্ন— কোথায় যাবেন? কেন এসেছেন? ক’দিন থাকবেন? হাবভাব এমন যে, পারলে পরের বিমানেই ফেরত পাঠিয়ে দেয়!

বিমানবন্দরের বাইরে জম্মু-কাশ্মীর পর্যটন দফতরের সাইনবোর্ডে —‘ওয়েলকাম টু কাশ্মীর। দ্য প্যারাডাইস অন আর্থ’। সত্যি স্বর্গ!

বিমানবন্দর থেকে রাস্তা, অলিগলি সর্বত্র সেই পাথুরে মুখের জওয়ান, কার্বাইন, সাঁজোয়া গাড়ি দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, এ কেমন জন্নত! গোটা রাস্তায় লোক প্রায় নেই। পরে শুনলাম, দিল্লি থেকে সর্বদলীয় যে প্রতিনিধিদল আগামিকাল আসবে, তাদের সফর ভেস্তে দিতে হুরিয়তপন্থীরা বিমানবন্দর অভিযানের ডাক দিয়েছে। সে কারণেই কড়াকড়ির বহরটা একটু বেশি। সকাল থেকে কার্ফু জারি করেছে প্রশাসন।

একাধিক নাকা, কাঁটাতারের আঁকিবুকি, সিআরপিএফের রক্তচাউনি পেরিয়ে প্রেস কার্ডের দৌলতে লাল চকের কাছে নির্ধারিত হোটেলের গেটে যখন পৌঁছলাম, তখন গোটা চত্বর শুনশান। রাজ্যের রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র এটিই। শহরের ব্যস্ততম এলাকা। দেখে কে বলবে সকাল ন’টা!

হোটেলের লোহার গেট খোলার বিকট আওয়াজ পেয়ে ছুটে এলেন দ্বাররক্ষী। অবাক চাউনি। যেন ভিন্ গ্রহের প্রাণী দেখছেন! পর্যটক বুঝেই হাতের ব্যাগটা প্রায় কেড়ে নিয়ে দৌড় দিলেন রিসেপশনের দিকে।

রিসেপশনে পৌঁছে ফের খাক্কা! পর্যটক এসেছে, এই খবর পেয়ে কোনও মতে জামা গলাতে গলাতে ছুটে এসেছেন হোটেলের ম্যানেজার, শেখ মুজফ্‌ফর। যা বললেন, তাতে আবার ধাক্কা! মর্ত্যের জন্নতে অবস্থিত এই হোটেলে গত এক মাসের মধ্যে আমিই প্রথম এবং একমাত্র অতিথি! ছ’তলার এই বিশাল হোটেলে আমিই তাঁদের একমাত্র ‘গেস্ট’! তবে বাবুর্চির মুখ ব্যাজার! কেন? আমতা আমতা করে জানালেন, দু’মাস ধরে চলা কার্ফুর গুঁতোয় হোটেলের ভাঁড়ার বাড়ন্ত! তবে অভয় দিলেন, দুপুরে ভাত-ডাল খেয়ে কাটিয়ে দিন, রাতে ডিম ভাজাও জুটবে।

ভূস্বর্গে স্বাগত!

বিকেলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে মনে করে কার্ফু শিথিল করেছিল প্রশাসন। সন্ধ্যার মুখে ঝিলমে ছররা বুলেটে ক্ষতবিক্ষত এক তরুণের দেহ উদ্ধার এবং কাজিগুন্দে সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে আরও এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু ফের রাস্তায় নামাল জনতাকে। এবং তাদের থামাতে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস। এবং ফের কার্ফু!

দু’মাসের টানা কার্ফু-বন্‌ধ মৃত্যুকে সঙ্গী করেও কী করে লড়াই চালাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ? হোটেল ম্যানেজার শেখ মুজফ্‌ফর বলছিলেন, ‘‘প্রকৃতিগত কারণেই সঞ্চয়ের অভ্যাস রয়েছে আমাদের। যে কারণে সবার বাড়িয়ে অতিরিক্ত দু’-তিন মাসের রেশন জমা থাকে। তাই দিয়েই চলছে। কিন্তু শীত আসছে। তখন কী হবে? এই যদি আপনাদের কলকাতা বা বেঙ্গালুরুতে দু’মাস কার্ফু থাকত, তা হলে এতক্ষণে সরকার পড়ে যেত। এখানে আমরা বাঁচার তাগিদে রাস্তায় নামলেই দেশবিরোধী!’’ অভিমানী শোনাল বছর পঞ্চাশের মুজফ্ফরকে। সেই সঙ্গেই যোগ করলেন, ‘‘তবু এটা নিয়েই তো বেঁচে আছি আমরা!’’

জন্নতে বেঁচে থাকার অন্য লড়াই।

Fire Curfew Arms Victim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy