Advertisement
E-Paper

ভোটের কিস্তিমাতে বাজেটের চার ঘুঁটি

আনন্দের সহযোগী যেমন সূর্যশেখর, মোদীর তেমনই জেটলি।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ১৭:৪৯
কৃষি, কর্মসংস্থান, রফতানি এবং পরিকাঠামো। দাবার ছকের এই চার ‘ঘুঁটি’ দিয়েই লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে কিস্তিমাত করতে চান মোদী-জেটলি।

কৃষি, কর্মসংস্থান, রফতানি এবং পরিকাঠামো। দাবার ছকের এই চার ‘ঘুঁটি’ দিয়েই লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে কিস্তিমাত করতে চান মোদী-জেটলি।

ভোটের লড়াই দাবার টুর্নামেন্ট হলে নরেন্দ্র মোদী কবেই ‘গ্র্যান্ডমাস্টার’ খেতাব পেয়ে যেতেন! কিন্তু গ্র্যান্ডমাস্টারদেরও কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হয়।

মোদীর সামনেও এবার কঠিন লড়াই— ২০১৯-এর লোকসভা ভোট। আরও পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রীর গদিতে থাকতে ১ ফেব্রুয়ারির বাজেটে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছেন তিনি। কারণ আগামী বছরের লোকসভা ভোটের আগে এটাই শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। আমজনতার মন জয় হোক বা অর্থনীতিতে রোশনাই— এটাই শেষ সুযোগ।

বিশ্বনাথন আনন্দের সহযোগী যেমন সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়, নরেন্দ্র মোদীর তেমনই অরুণ জেটলি। মোদী ও তাঁর অর্থমন্ত্রী বাজেটের দাবার ছকে চারটি ঘুঁটি বেছে নিয়েছেন। কৃষি, কর্মসংস্থান, রফতানি এবং পরিকাঠামো। এই চার ঘুঁটি দিয়েই লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে কিস্তিমাত করতে চান মোদী-জেটলি।

এই চারটি ঘুঁটিই কেন?

মোদী সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, এবারের বাজেটে যে কৃষি এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে জোর দেওয়া হবে, গুজরাত ভোটের ফল প্রকাশ হতেই সেই দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। গুজরাতের শহরে ভাল ফল করলেও, গ্রামে বিজেপির রথ হোঁচট খেয়েছিল। টের পাওয়া গিয়েছিল, শুধু মধ্যপ্রদেশ বা রাজস্থান নয়, মোদী-অমিত শাহর ঘরের মাঠেও গ্রামের গরিব চাষিরা চটে রয়েছেন। ফসলের ন্যায্য দাম, কৃষি ঋণ মকুবের দাবি তাঁদেরও স্লোগান।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী চকোলেট খেতে চাইতেই পারেন, কিন্তু...

নরেন্দ্র মোদী ২০২২-এর মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কিন্তু তাঁর পরিসংখ্যান মন্ত্রকই বলছে, এ বছর কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ২.১ শতাংশে আটকে থাকবে। মোদী সরকারের তিন বছরে কৃষিতে গড় বৃদ্ধি মাত্র ১.৭%। তা দিয়ে যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয় না, তা বলার জন্য অর্থনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

বাধ্য হয়ে জেটলিকে মোদীর নির্দেশ, গ্রামের হাল ফেরানোর দাওয়াই খুঁজতে হবে। বাজেটে তাই কৃষি বিকাশ যোজনা, সেচ, গ্রামীণ পরিকাঠামো থেকে শুরু করে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে দরাজ হাতে টাকা ঢালতে চলেছেন জেটলি। ফসলের বাজার দর ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের থেকেও নেমে গেলে সেই ফারাকটুকু ভর্তুকি দিয়ে মিটিয়ে দেওয়ার প্রকল্পও ঘোষণা হতে পারে।

দ্বিতীয় ঘুঁটি কর্মসংস্থান, নতুন চাকরি। যে ক্ষেত্রে মোদী সরকার নিদারুণ ব্যর্থ। বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদীর জমানায় বছরে ২ লক্ষ চাকরিও হচ্ছে না। মোদীর ভুলে যাওয়ার কথা নয়, ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্নে বুঁদ হয়ে দেশের তরুণ-তরুণীরাই তাঁকে দল বেঁধে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু চাকরি, রোজগার না পেলে সেই তরুণ প্রজন্মই যে রাহুল গাঁধীর দিকে ঝুঁকবেন, বলা বাহুল্য। মোদী-জেটলি তাই জোর দিচ্ছেন বস্ত্র শিল্পের মতো ক্ষেত্রে। যেখানে অনেক বেশি সংখ্যায় শ্রমিক-কর্মী নিয়োগ হয়। এই ক্ষেত্রগুলিকে বাজেটে কিছু সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হতে পারে। আরও অর্থ ঢালা হবে স্কিল ডেভেলপমেন্ট বা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণেও।

পি চিদম্বরমের মতো কংগ্রেসের নেতারা প্রশ্ন তুলছেন, চাকরি হবেই বা কোথা থেকে? বৃদ্ধির হার যে ৬.৫ শতাংশে নেমে আসতে চলেছে। নতুন পুঁজি হচ্ছে না। নতুন লগ্নিও দূর অস্ত। থমকে থাকা প্রকল্পের সংখ্যা হাজার ছুঁইছঁই।

উল্টো দিকে শিল্পমহলের যুক্তি, লগ্নি করে হবেটা কী? এমনিতেই কারখানায় যা তৈরি হচ্ছে, বাজারে ততখানি চাহিদা নেই। কারখানাগুলোর যা ক্ষমতা, তার অনেক কম উৎপাদন হচ্ছে। তা হলে নতুন কারখানা তৈরি করে হবেটা কী?

আরও পড়ুন: বেনজির বিপদ, দেশে কর্মসংস্থান কমছে

এই সমস্যার সমাধান করতেই রফতানি চাঙ্গা করতে ও পরিকাঠামোয় টাকা ঢালবেন জেটলি। দেশের বাজারে চাহিদা নেই। তাই বিশ্বের বাজার ধরতে রফতানিতে উৎসাহ দেবেন। তাতে আর্থিক বৃদ্ধি বাড়বে, নতুন চাকরির সুযোগও তৈরি হবে। আর বেসরকারি লগ্নির অভাব মেটাতে, ভবিষ্যতে লগ্নির পথ তৈরি করতে পরিকাঠামোয় টাকা ঢালা ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই।

কিস্তিমাত হবে তো! সে জবাব পেতে অবশ্য বছর খানেক অপেক্ষা করতে হবে।

Budget Union Budget Central Budget Budget 2018 Budget 2018-19 Agriculture Narendra Modi Arun Jaitley বাজেট ২০১৮
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy