ধর্নায় সামিল মেঘা। ইয়াসির ইকবালের তোলা ছবি।
বয়সের হিসেবে সে এখন সবে ষোলো। কিন্তু দিন ক্ষণের সেই হিসেব আর এখন কে-ই বা রাখছে! গত চার মাসে একের পর এক ঘটনা, প্রচারের আলো— নিমেষে পাল্টে দিয়েছে তার চেনা গণ্ডি। ১৬তেই তাই অনেকটা পরিণত শোনায় মেঘা সিংহের গলা।
গত এপ্রিলে দিল্লির যন্তর মন্তরে আম আদমি পার্টির জনসভায় নিম গাছে উঠে গলায় ফাঁস দেন রাজস্থানের কৃষক গজেন্দ্র সিংহ। সকলের চোখের সামনেই মৃত্যু হয় তাঁর। আজ সেই যন্তর মন্তরেই সিপিএমের কৃষক সভার ধর্নায় হাজির গ়জেন্দ্রর মেয়ে মেঘা।
বাবা আত্মহত্যা করেছিলেন না কি এটা নিছকই দুর্ঘটনা, অথবা গাছে উঠে গলায় ফাঁস দিতে কেউ তাঁকে প্ররোচিত করেছিল কি না— এত দিনেও কাটেনি সেই রহস্য। কিন্তু মেঘা জানিয়ে দিল, পিছু হটে লাভ নেই। তার কথায় ‘‘কোনও কৃষকেরই আত্মহত্যা করা উচিত নয়। সমস্যা থাকলে লড়াই করতে হবে।’’
দেশ জুড়ে কৃষক আত্মহত্যার প্রতিবাদে আজ সকাল থেকে ধর্নায় বসেছিল মেঘা। ছিলেন গজেন্দ্রর বাবা বান্নি সিংহও। ছেলের মৃত্যুর কারণ নিয়ে এ দিন আর মুখ খুলতে চাননি বান্নি। কিন্তু জানিয়েছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচিত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো। সেই দাবি নিয়েই দু’দিনের ধর্না শুরু করেছে কৃষক সভা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘দেশের ৯০ শতাংশ কৃষকের আড়াই হেক্টরেরও কম জমি রয়েছে। সরকারি সমীক্ষাই বলছে, ৩৫ হাজার কৃষক পরিবারের মাসে গড় আয় সাড়ে ৬ হাজার টাকারও কম। কৃষকদের ঋণ দেয় না ব্যাঙ্ক। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে হয়। ফসল নষ্ট হয়ে গেলে সেই ঋণ শোধ করতে না পারার যন্ত্রণাতেই আত্মহত্যা করছেন কৃষকরা।’’ দেশের অন্য প্রান্তের মতোই ধর্নায় সামিল হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের আত্মঘাতী কৃষকদের পরিবারও। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দিল্লিতে, সেই সময় ধর্নায় পশ্চিমবঙ্গের আত্মঘাতী কৃষকদের পরিবারের উপস্থিতি স্বাভাবিক ভাবেই বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। আজ যন্তর মন্তরে বর্ধমানের আত্মঘাতী কৃষক লালু মাঝির ছেলে বিনোদ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। বিনোদের বক্তব্য, ‘‘বাবার আত্মহত্যার পরে তিন বছর কেটে গেলেও কোনও সরকারি সাহায্য জোটেনি। মাথার উপর আরও ৫ হাজার টাকার দেনা ঝুলছে। বীজ কেনার জন্য দেনা করেছিলেন বাবা।’’
কেন আত্মহত্যা করতে হল লালু মাঝিকে? বিনোদের দাবি, আড়াই বিঘা জমিতে আলু চাষ করলেও ফসল হয়েছিল মাত্র আধ বিঘা জমিতে। সেই চাপ নিতে না পেরেই আত্মহত্যা করেন তাঁর বাবা। বাবার মৃত্যুর পরে বিনোদ ও তাঁর ভাই, দু’জনকেই পড়াশোনা ছেড়ে মজুরের কাজে নামতে হয়েছে। কিন্তু সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি কেউ। আগামিকালও ধর্নায় বসবেন বিনোদ। থাকার কথা মেঘারও। যন্তর মন্তরের সেই নিম গাছটাকেই কি খুঁজে ফিরবে তার চোখ?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy