পদপিষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেল তামিলনাড়ুতে। শনিবার সে রাজ্যের করুর জেলায় অভিনেতা বিজয় (থলপতি বিজয় বলে সমধিক পরিচিত)-এর জনসভায় মাত্রাতিরিক্ত ভিড়কেই এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। শনিবার রাতেই জানা গিয়েছিল জনসভায় পদপিষ্ট হয়ে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার ভোরে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন জানান, ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে রয়েছে শিশু। আছেন মহিলারাও। প্রসঙ্গত, জনপ্রিয় তামিল অভিনেতা বিজয় সম্প্রতি সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছেন। তৈরি করেছেন নতুন দল তামিলাগা ভেটরি কাজ়াগম (টিভিকে)। শনিবার ওই দলের জনসভা ছিল চেন্নাই থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে করুরে। মুখ্য বক্তা ছিলেন বিজয়ই।
পদপিষ্টের ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫১ জন। মধ্যরাতেই আহতদের সঙ্গে দেখা করতে কারুরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজে যান স্ট্যালিন। আহতদের কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। স্ট্যালিন জানিয়েছেন, তামিলনাড়ু সরকার মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১০ লক্ষ টাকা দেবে। আহতদের পরিবার পিছু দেওয়া হবে এক লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্ট্যালিন এই প্রসঙ্গে বলেন, “তদন্তে সত্য উঠে আসবে। আমি রাজনৈতিক উদ্দেশে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। সত্য প্রকাশ্যে আসার পরেই কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।”
প্রত্যাশার থেকে অনেক বেশি ভিড় এবং জনসভায় বিজয়ের দেরি করে আসাকেই পদপিষ্টের ঘটনার জন্য দায়ী করেছে পুলিশ। তামিলনাড়ু পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিজি জি ভেঙ্কটরমন জানান, “সভার উদ্যোক্তারা ১০ হাজার লোকের জমায়েতের জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু তার তিন গুণ লোক সভায় যোগ দিয়েছিলেন।’’ ওই পুলিশ আধিকারিকের সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেন, “এর আগে টিভিকে-র জনসভায় কখনও এত লোক হয়নি। কিন্তু এ বারের ভিড় প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ছিল। ১০ হাজার মানুষের সমাগম হবে, এমনটা ধরে নিয়ে আমাদের কাছে বড় মাঠের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু প্রায় ২৭ হাজার মানুষ জড়ো হন ওই মাঠে।”
তা ছাড়া পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বিজয় নির্ধারিত সময়ের অনেকটা পরে সভাস্থলে পৌঁছেছিলেন। তাঁকে দেখার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। তামিলনাড়ু পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, দুপুর ৩টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সভা করার অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। বিজয়কে দেখার জন্য বেলা ১১টা থেকেই জনসভার মাঠে আসতে শুরু করেন তাঁর অনুরাগীরা। বিজয় প্রচার-গাড়িতে ওঠেন সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। তামিলনাড়ু পুলিশের ডিজি-র কথায়, “বিজয় সন্ধ্যা ৭টা ৪০-এ এসে পৌঁছোন। বহু ক্ষণ ধরে মানুষ জল এবং খাবার ছাড়াই অপেক্ষা করছিলেন।” বিজয় নিজে অবশ্য পুলিশি বন্দোবস্তের প্রশংসা করেছেন। তামিলনাড়ু পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ঠিক কী কারণে এই বিপর্যয়, তা তদন্তের পরেই প্রকাশ্যে আসবে।
সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিট নাগাদ পদপিষ্টের ঘটনাটি ঘটে। তার কিছু ক্ষণ আগেই বক্তৃতা করতে উঠেছিলেন বিজয়। সে সময় ডিএমকে-র প্রাক্তন মন্ত্রী সেন্থিল বালাজির বিরুদ্ধে একাধিক বাক্যবাণও ছুড়ছিলেন তিনি। তখনই আচমকা উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। প্রিয় অভিনেতাকে সামনে থেকে দেখতে একসঙ্গে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যান অনেকে। ভিড়ের মাঝে টাল সামলাতে না পেরে কেউ কেউ পড়ে যান। তাঁদের উপর দিয়েই এগোতে থাকেন বাকিরা। ধাক্কাধাক্কিতে একাধিক শিশুও অভিভাবকদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। জ্ঞানও হারান কেউ কেউ। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে মাঝপথে বক্তৃতা থামিয়ে দেন বিজয়। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। কিন্তু তত ক্ষণে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে সমাজমাধ্যমে বিজয় লেখেন, “এই পদপিষ্টের ঘটনায় আমি মর্মাহত। এই দুর্ঘটনায় আমি এতটাই শোকস্তব্ধ যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমি মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।”