E-Paper

আজ শুনানি, ধৃত অধ্যাপকের পাশে বিরোধীরা

সোমবার মাহমুদাবাদের সমর্থনে এবং শাসক দলের এই ‘দ্বিচারিতা’র বিরুদ্ধে সরব হল বিরোধী শিবির। কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টি এই গ্রেফতারের নিন্দা করে প্রশ্ন তুলেছে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৫ ০৭:৩৩
সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

তাঁর খেদোক্তি ছিল, কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে যে ভাবে দক্ষিণপন্থীরা সাধুবাদ জানাচ্ছেন, সে ভাবে তাঁরা যদি গণপ্রহারে হত্যা বা যথেচ্ছ বুলডোজ়ার বা ঘৃণাভাষণের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেন! অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে এই কথাগুলো ফেসবুকে লেখার জন্য গ্রেফতার হতে হয়েছে। হরিয়ানা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেণু ভাটিয়া এফআইআর করে দাবি করেছেন, মাহমুদাবাদ নারী সেনানীদের অসম্মান করেছেন। আগামী কাল সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে।

তার আগে সোমবার মাহমুদাবাদের সমর্থনে এবং শাসক দলের এই ‘দ্বিচারিতা’র বিরুদ্ধে সরব হল বিরোধী শিবির। কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টি এই গ্রেফতারের নিন্দা করে প্রশ্ন তুলেছে, মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রী যখন সরাসরি সোফিয়াকে ‘জঙ্গিদের বোন’ বলে অপমান করেছিলেন, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও সেখানে পুলিশ চুপ কেন। মাহমুদাবাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমিতিও।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে লিখেছেন, “অপছন্দের কথাকে বিজেপি কতখানি ভয় পায়, এই গ্রেফতারি তার প্রমাণ।” খড়্গের মতে, যে ভাবে হিমাংশী নারওয়াল থেকে বিক্রম মিস্রীকে ট্রোল করা হয়েছে, যে ভাবে মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, এই গ্রেফতারিকে সেই পরম্পরাতেই বিচার করতে হবে। কংগ্রেস নেতা পবন খেরা লিখেছেন, “এই হচ্ছে মোদীর নতুন ভারত। এখানে হিংসা ছড়িয়ে নয়, হিংসার বিরুদ্ধে কথা বললে শিক্ষাবিদকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ সেনাবাহিনীকে অসম্মান করলেও বিজেপি মন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয় না।” একই সুরে সমাজবাদী নেতা অখিলেশ যাদবের অভিযোগ, “যারা ক্ষমতায় আছে তারা অন্যদের সম্পর্কে কুকথা বলেও পার পেয়ে যাবে। যারা সত্যি কথা বলবে, তারা গ্রেফতার হবে।”

মাহমুদাবাদ অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। পবন খেরা এও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, মাহমুদাবাদের মাতামহ ছিলেন পদ্মভূষণপ্রাপ্ত জগৎ এস মেহতা। তিনি ১৯৭৬-১৯৭৯ পর্যন্ত ভারতের বিদেশসচিবের দায়িত্ব সামলিয়েছিলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী সে সময় ছিলেন বিদেশমন্ত্রী। গত কাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাহমুদাবাদের বক্তব্য তাঁর নিজস্ব বলে বিষয়টি থেকে দূরত্ব রচনা করলেও আজ অধ্যাপকের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমিতি এবং ছাত্রদের একাংশ। সমিতি এই ‘পরিকল্পিত হয়রানি’র নিন্দা করে অভিযোগ তুলেছে, মাহমুদাবাদকে তাঁর দিল্লির বাড়ি থেকে সোনীপত নিয়ে যায় পুলিশ। লম্বা সেই যাত্রাপথে তাঁকে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি, ওষুধ খেতেও দেওয়া হয়নি। সমিতি তার সহকর্মীকে সমর্থন করে বলেছে, মাহমুদাবাদ শুধু একজন সম্মানিত এবং ছাত্রপ্রিয় শিক্ষক নন, তিনি অত্যন্ত দায়িত্বশীল নাগরিক। মাহমুদাবাদের সমর্থনে সোমবার যাদবপুরের শিক্ষক সমিতির (জুটা) সভাপতি পার্থপ্রতিম বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ওই অধ্যাপকের মন্তব্যে দেশের সার্বভৌমত্ব বা নারীর মর্যাদা ছিটেফোঁটা ক্ষুণ্ণ হয়নি। ওই শিক্ষককে হেনস্থা দেশের সাংবিধানিক অধিকারের অমর্যাদা বলে দাবি করে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিজানিয়েছে জুটা।

আগামী কাল সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে মাহমুদাবাদের জামিনের আবেদনের শুনানি হবে। অধ্যাপকের আইনজীবী কপিল সিব্বল এ দিন মৌখিক ভাবে মামলাটির দ্রুত শুনানির জন্য অনুরোধ করেন। বলেন, “দেশপ্রেমের ভাবাবেগের জন্য গ্রেফতার। প্লিজ এটা তালিকাভুক্ত হোক।” প্রধান বিচারপতি তাতে সায় দিয়ে আগামী কাল শুনানির দিন ধার্য করেছেন। রেণু ভাটিয়া অবশ্য তাঁর নিজের অবস্থানেই স্থিত। এ দিন তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, মহিলা কমিশন তলব করা সত্ত্বেও হাজিরা দেননি অধ্যাপক। কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে দেখা করেননি। রেণুর বক্তব্য, “উনি ক্ষমা চেয়ে নিলেন না কেন?”

অন্য দিকে নাগপুরে ফৈজ় আহমদ ফৈজ়-এর বিখ্যাত কবিতা অবলম্বনে ‘হম দেখেঙ্গে’ গানটি গাওয়ার জন্য একটি সাংস্কৃতিক সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছে পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, ভারত-পাক সংঘর্ষ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি কবির গান গাওয়া দেশদ্রোহিতার নামান্তর। প্রসঙ্গত ‘হম দেখেঙ্গে’ সেই গান, যা ইকবাল বানো ১৯৮৫ সালে লাহোর স্টেডিয়ামে গেয়েছিলেন কালো শাড়ি পরে। পাকিস্তানে তখন জিয়াউল হক শাড়ি পরা নিষিদ্ধ করেছিলেন ‘হিন্দু পোশাক’ বলে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Supreme Court of India Operation Sindoor Social Media Abuse arrest

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy