প্রতীকী ছবি।
সীমান্তে চিনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে আরও এক পা এগোলো ভারত।
হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুর থেকে মানালি হয়ে এ বার সরাসরি লেহ পর্যন্ত রেললাইন পাতার সিদ্ধান্ত নিল প্রতিরক্ষা ও রেল মন্ত্রক। আজ ৪৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই লাইনের সমীক্ষার কাজ শুরু করার সবুজ সঙ্কেত দেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। ওই লাইন তৈরি হয়ে গেলে লাদাখের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে মূল ভূখণ্ডের। জরুরি পরিস্থিতিতে সেনা ও রসদ দ্রুত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে চিন-পাকিস্তান লাগোয়া সীমান্তে। পর্যটকেরাও ট্রেনে চড়েই সরাসরি পৌঁছতে পারবেন লেহ-লাদাখ এলাকায়। তবে ধস ও ভূমিকম্পপ্রবণ ওই জমিতে কোন পথে, কী প্রযুক্তির সাহায্যে লাইন পাতা হবে, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ রেলের কাছে।
সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রেলেরই অধীনস্থ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রাইটসকে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, বিলাসপুর থেকে মান্ডি-কুলু-মানালি হয়ে খোকসার, কেলং, প্যাং হয়ে লেহ পৌঁছবে ওই লাইন। একই সঙ্গে চলছে শিমলা থেকে বেরি হয়ে বিলাসপুরের সঙ্গে রেল লাইন পাতার কাজও। ওই কাজ শেষ হলে দিল্লি-কালকা লাইনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হবে বিলাসপুর-লেহ লাইনকে। ২০১৯ সালের মধ্যে রাইটসকে সমীক্ষা রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে রেল। এই সমীক্ষার জন্য যে ১৫৮ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা, তা বহন করছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ট্রেন চলাচল শুরু হলে পৃথিবীর সর্ব্বোচ্চ রেলপথের শিরোপা পাবে এই লাইনটি। বর্তমানে যার অধিকারী চিনের কুইনঘাই-তিব্বত রেলওয়ে।
আরও পড়ুন: শিশু-হাতের চকলেটে লাভ বাজি কারখানার
বিলাসপুর থেকে লেহ পর্যন্ত প্রায় পাঁচশো কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন তৈরি হবে শিবালিক, গ্রেট হিমালয় ও জাঁসকর পাহাড়ের বুক চিরে। ওই এলাকায় পাহাড়ের উচ্চতা ৬০০ মিটার থেকে ৫৩০০ মিটার পর্যন্ত। রেল জানিয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে প্রায় ৩৩০০ মিটার উপরে চলবে ওই প্রকল্প রূপায়ণের কাজ। গোটা এলাকাটি সিসমিক জোন ৪ ও ৫-এর মধ্যে পড়ে। ফলে এই প্রকল্পে রেল টানেল, সেতু কিংবা লাইন পাতার ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের সম্ভবনাকে মাথায় রেখেই সমীক্ষায় নামছে রাইটস।
আরও একটি বিষয় থাকছে। এই রেললাইন পাতা হলে হিমালয়ের ওই এলাকার পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদের। ২০১৩ সালে কেদারনাথে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের পরেই হিমালয়ে এ ভাবে নির্মাণকাজ বন্ধ করার দাবি উঠেছিল। যদিও রেল এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে এখন বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
প্রকল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতিকূল প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে অহরহ চলবে, তা মেনে নিচ্ছে রেলও। এক রেলকর্তার কথায়, ‘‘বর্ষায় ধস আর শীতে বরফে ওই এলাকা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়েযায় মূল ভূখণ্ড থেকে। তাই বিশেষ করে শীতকালে কী ভাবে প্রবল বরফপাত ও বরফের ধস এড়িয়ে লাইন চালু রাখা যায়, সেটাও বড় পরীক্ষা রেলের কাছে।’’
পাকিস্তান বা চিনের সঙ্গে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সীমান্তে যাতে দ্রুত সেনা ও রসদ পৌঁছনো যায়, তার জন্য ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ লাইন পাতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এর মধ্যে জম্মুর সঙ্গে শ্রীনগরের রেললাইন পাতার কাজ অনেকটাই হয়েছে। লাইন পাতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে অসমের মিসামারি থেকে অরুণাচল-চিন সীমান্তবর্তী তাওয়াং পর্যন্ত। হিমাচলের বিলাসপুর থেকে লেহ-লাদাখ পর্যন্ত লাইন পাতার কাজ শেষ হলেই এক ধাক্কায় পাকিস্তান ও চিন সীমান্তের কাছে পৌঁছবে ভারতীয় রেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy