Advertisement
E-Paper

বিগড়েছে মস্কোর মন, বেজায় চিন্তায় দিল্লি

ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে ভারতের ঘনিষ্ঠতম মিত্র ছিল রাশিয়া। গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়িয়ে চলার ফাঁকে দূরত্ব বেড়েছে তাদের সঙ্গে। এখন তো মস্কোর তালিবান-নীতি থেকে শুরু করে চিন-পাক আর্থিক করিডর নিয়ে তাদের ভূমিকা রীতিমতো উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে সাউথ ব্লককে।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩০
ফের কি দেখা যাবে এই ছবি?

ফের কি দেখা যাবে এই ছবি?

মিত্রকে আর পাশে পাওয়া যাচ্ছে না আগের মতো। প্রথমে এটা ছিল নিছক অস্বস্তি। ক্রমে ক্রমে সেটাই এখন রীতিমতো চাপ।

ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে ভারতের ঘনিষ্ঠতম মিত্র ছিল রাশিয়া। গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়িয়ে চলার ফাঁকে দূরত্ব বেড়েছে তাদের সঙ্গে। এখন তো মস্কোর তালিবান-নীতি থেকে শুরু করে চিন-পাক আর্থিক করিডর নিয়ে তাদের ভূমিকা রীতিমতো উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে সাউথ ব্লককে। দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য বন্ধু দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের এই অধোগতি নিয়ে বেজায় চিন্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এতটাই যে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে সমস্যার ক্ষেত্রগুলি খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে সক্রিয় হওয়ার জন্য বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করকে নির্দেশ দিয়েছেন মোদী। দরকারে বিদেশ মন্ত্রকের রাশিয়া-বিষয়ক ডেস্ককে ঢেলে সাজা এবং সে দেশের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ আরও বাড়ানোর কথাও ভাবছে কেন্দ্র।

বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, একটু দেরিতে টনক নড়েছে সাউথ ব্লকের। তিন মাস আগে, উরি-কাণ্ডের পরেই যথেষ্ট বেসুরে বাজতে শুরু করেছিল রাশিয়া। ভারত-পাক তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই ইসলামাবাদের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া চালায় তারা। এর পরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে যত বারই সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে একঘরে করার চেষ্টা করেছে নয়াদিল্লি, তত বারই শীতল মনোভাব নিয়েছে রাশিয়া। তা সে গোয়ায় ‘ব্রিকস’ সম্মেলনই হোক অথবা অমৃতসরে ‘হার্ট অব এশিয়া’র মঞ্চ।

এ বার প্রমাণ মিলল দিল্লি-মস্কো সম্পর্কের ভিত কতটাই নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ভারতের চক্ষুশূল ‘চিন-পাক আর্থিক করিডর’(সিপিইএস)-এর প্রতি মস্কো এখন প্রকাশ্যেই সমর্থন জানাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, বিতর্কিত এই প্রকল্পের সঙ্গে নিজেদের একটি প্রকল্পও জুড়ে নেওয়ার লক্ষ্যে দফায় দফায় আলোচনাও চালাচ্ছে মস্কো।

চিনের জিংজিয়াং থেকে পাকিস্তানের বালুচিস্তান পর্যন্ত প্রস্তাবিত ওই করিডর যাওয়ার কথা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে। এটা নিয়ে চিনের কাছে একাধিক বার আপত্তি জানিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লির আশঙ্কা, করিডরের নামে আর্থিক সাহায্য নিয়ে ইসলামাবাদ আসলে ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে সামরিক পরিকাঠামো বাড়াবে। এমনকী, চিনা অর্থের বড় অংশ চলে যাবে পাক জঙ্গি সংগঠনগুলির হাতে। আর্থিক করিডরের নামে আসলে তাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মদতপ্রাপ্ত সন্ত্রাসকেই উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। ভারতের এই আপত্তিতে কান দেয়নি চিন। এ বার বোমা ফাটালেন পাকিস্তানে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সে দেদভ। তিনি জানিয়েছেন, মস্কোর ‘ইউরেশিয়ান ইকনমিক প্রজেক্ট’-এর সঙ্গে চিন-পাকিস্তান করিডরকে কী ভাবে সংযুক্ত করা যায় তা নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা চলছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির মধ্যে। দেদভের কথায়, ‘‘চিন-পাকিস্তান আর্থিক করিডর পাক অর্থনীতির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই, আঞ্চলিক যোগাযোগের জন্যেও এটা জরুরি।’’

সম্প্রতি আফগান তালিবানের জঙ্গিপনাকে রাশিয়া ‘জাতীয় সামরিক-রাজনৈতিক আন্দোলন’ হিসেবে তুলে ধরাতেও ঘুম ছুটেছে সাউথ ব্লকের। বিন্দুমাত্র দেরি না করে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপের কথায়, ‘‘তালিবানের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ রাখতে হলে তা আন্তর্জাতিক শর্তাবলি মেনেই হতে হবে। সন্ত্রাস এবং আল কায়দার মতো সংগঠনের সংশ্রব পুরোপুরি ছাড়লে তবেই তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি সম্ভব।’’ বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাশিয়া হয়তো কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে চাইছে। তারা সম্ভবত আইএস-এর বিরুদ্ধে এদের কাজে লাগাতে চায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এখন কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনই আর বিচ্ছিন্ন নয়। প্রয়োজন ও সুযোগ বুঝে সকলেই এক ছাতার তলায় কাজ করে।’’ ভারতীয় গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, তালিবান প্রশ্রয় পেলে তাতে আল কায়দা, লস্কর-ই-তইবার মতো গোষ্ঠীগুলিও শক্তিশালী হবে। ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে এটা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘ব্রিকস সম্মেলনে আমাদের যথাসাধ্য দৌত্যের পরেও মস্কো লস্কর বা জইশ-ই-মহম্মদকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেনি। পাকিস্তান ও চিনকে সাহায্য করার পাশাপাশি রাশিয়ার নিজস্ব কোনও স্বার্থও এতে জড়িয়ে রয়েছে কি না, তা-ও আমরা খতিয়ে দেখছি।’’ এ বিষয়ে আমেরিকা কোন অবস্থান নেবে, এখনও তা স্পষ্ট নয়। আপাতত আমেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ক মধুর। নির্বাচনী প্রচারের সময়ে যে ভাবে রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার কথা বলেছেন ট্রাম্প, প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাঠে নামার পরে বাস্তব ছবিটা কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে এখনই ভবিষ্যৎবাণী করতে নারাজ ভারতীয় কূটনীতিকরা। এমনও হতেও পারে যে, ট্রাম্পের দৌত্যে নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা সহজ হয়ে গেল মস্কোর। তবে সেই ভরসায় বসে না থেকে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে তৎপরতা শুরু করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী।

Moscow India Narendra Modi Vladimir Putin China-Pakistan Economic Corridor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy