E-Paper

‘ট্রাম্প-সর্বস্ব’ নীতি বদলে নয়া কৌশল চায় দিল্লি

আগামী দিনে, আমেরিকা-নীতিকে ‘ট্রাম্প সর্বস্বতা’ থেকে বার করে এনে সে দেশের সঙ্গে বহুমুখী সংযোগবিন্দু তৈরি করার জন্য উঠে পড়ে লাগতে চলেছে ভারত।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৫ ০৭:৫০
(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

পহেলগাম সন্ত্রাস নিয়ে পাকিস্তানের ভূমিকাকে তুলে ধরতে আমেরিকাতেও রওনা হচ্ছে শশী তারুরের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক প্রতিনিধি দল। তবে অন্য দেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনে দৌত্যের ফারাক রয়েছে। সে দেশের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ বন্ধে মধ্যস্থতার ধারাবাহিক দাবি এবং কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ ঘোর অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে মোদী সরকারকে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সেই অস্বস্তি কাটাতে যেমন ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অবস্থান (ভারত-পাকিস্তান একান্তই দ্বিপাক্ষিক বিষয়) স্পষ্ট করছেন, তা বজায় থাকবে। পাশাপাশি আগামী দিনে, আমেরিকা-নীতিকে ‘ট্রাম্প সর্বস্বতা’ থেকে বার করে এনে সে দেশের সঙ্গে বহুমুখী সংযোগবিন্দু তৈরি করার জন্য উঠে পড়ে লাগতে চলেছে ভারত। রাজনৈতিক যে প্রতিনিধি দলটি ওয়াশিংটন যাচ্ছে, তাদের সেই ভাষ্যকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রাম্প থাকাকালীন হোয়াইট হাউসের দক্ষিণ এশিয়া নীতির মোকাবিলায় একাধিক কৌশলের কথা ভাবছে সাউথ ব্লক। প্রথমত, এ কথাই মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে ট্রাম্পের বক্তব্যবাণে অস্থির হয়ে সে দেশের সঙ্গে সার্বিক বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। নব্বইয়ের দশকে ক্লিন্টন প্রশাসনও কাশ্মীরের প্রসঙ্গটিকে তাদের নীতির কেন্দ্রে রেখেছিল। সে সময়েও বিস্তর জটিলতা সামলেছিল ভারত। দ্বিতীয়ত, প্রত্যহ ট্রাম্পের সঙ্গে পাল্টা জবাবের খেলা চালিয়ে গেলে হিতে বিপরীত হবে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে ভারত আগের তুলনায় অনেকটাই বেশি পোক্ত। তৃতীয়ত, ট্রাম্প শক্তিশালী ঠিকই, কিন্তু ট্রাম্প মানেই আমেরিকা, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমেরিকার প্রশাসনে আরও অনেক শক্তিশালী কেন্দ্র রয়েছে। আমেরিকান কংগ্রেস, রাজনৈতিক শ্রেণি, নাগরিক সমাজ, সংবাদমাধ্যম সর্বোপরি সে দেশের বাণিজ্য মহল। আমেরিকার বাণিজ্যমহল সে দেশের নীতি নির্ধারণে যে বড় ভূমিকা রাখে তার প্রমাণ সাম্প্রতিক অতীতে বারবার পেয়েছে নয়াদিল্লি। সে দেশের বহুজাতিক সওদাগরি সংস্থাগুলির সঙ্গে ভারতীয় সংস্থা এবং সরকারের সংযোগ আসন্ন বাণিজ্যচুক্তির কারণে এমনিতেও বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। চতুর্থ, আমেরিকা ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার ঠিকই কিন্তু তারাই যে একমাত্র কৌশলগত মিত্র নয়, সে বার্তাটি দেওয়া। ইউরোপের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যসম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। পহেলগাম কাণ্ডের পর ফ্রান্স, গ্রিস ও ডেনমার্কের মতো দেশ পাশে থেকেছে নয়াদিল্লির।

কূটনৈতিক মহল এ কথাও বলছে, ট্রাম্প নিঃসন্দেহে কিছুটা ক্ষতি করে দিয়েছেন ভারতের ঘোষিত কৌশলগত অবস্থানের। তবে সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, সেই ক্ষত পূরণ করে আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। কারণ, ট্রাম্প কোনও একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকবেন না বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি আমেরিকার জন্য অধিক লাভজনক বিষয়ে ঝুঁকবেন। তা ছাড়া, বাস্তবে ট্রাম্পের কোনও দাবিই বাস্তবায়িত হবে না, কারণ কোনও মূল্যেই ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না, কোনও তৃতীয় রাষ্ট্রকেও ডাকবে না মধ্যস্থতার জন্য। এটাও উল্লেখ করা হচ্ছে, ট্রাম্প কৃতিত্ব দাবি করে আট বার এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করলেও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত ছাড়া গতি নেই ওয়াশিংটনের।

কূটনৈতিক মহল বলছে, ট্রাম্পের ‘বন্ধুত্বে’ মোহিত থাকার কারণেই হোক বা অন্য কারণ, ভারত ট্রাম্প প্রশাসনের অন্য ক্ষমতাবিন্দুগুলিতে যথেষ্ট পরিমাণে প্রবেশ করতে পারেনি এখনও। তাঁর বাণিজ্য সহচরদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোরও চেষ্টা করেনি। ভারতীয় দূতাবাস বিপুল অর্থের বিনিময়ে সম্প্রতি ট্রাম্পের এক প্রাক্তন সহকর্মীকে নিয়োগ করেছে। সূত্রের খবর, বছরে ১৮ লক্ষ ডলার পারিশ্রমিকে নিযুক্ত জেসন মিলার নামের এই কর্তা ভারতের বাণিজ্য নীতিগুলিকে ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কেন্দ্রগুলির সামনে নিয়ে এসে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন বলে স্থির হয়েছে। আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, বিষয়টি নতুন কিছু নয়। পরিস্থিতির প্রয়োজনে গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকেই বিভিন্ন সরকার জনসংযোগের জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়োগ করে। ২০০৭ সালে পরমাণু চুক্তির সময়ে ভারতের অবস্থানকে পোক্ত করার সময়েও কিছু সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছিল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump Pahalgam Shashi Tharoor

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy