বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে সুপরিকল্পিত ভাবে নাক গলিয়ে বৃহত্তর ভারত-বিরোধিতার নকশা তৈরি করছে ইসলামাবাদ।
সাউথ ব্লক তথ্য পেয়েছে যে, কূটনীতির অপব্যবহার, ধর্মীয় মৌলবাদের প্রসার এবং গোপন কিছু কার্যকলাপের মাধ্যমে ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তানের দূতাবাস তাদের সক্রিয়তা ক্রমশই বাড়াচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, পাক হাই কমিশনের প্রেস সচিব ফাসি উলহা খান এই ঘটনাগুলির কেন্দ্রে রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থায় নিজস্ব নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। বাংলাদেশের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এরশাদুল বারী মামুন এবং আইনি উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে বার্তা বিনিময় চালিয়ে যাচ্ছেন এই পাক কর্তা। হাসিনা সরকারের আমলে সন্ত্রাসের দায়ে যারা কারারুদ্ধ হয়েছিল, সম্প্রতি একে একে তাদের মুক্তির নেপথ্যে এই পাক কর্তার কতটা প্রভাব রয়েছে, সেই প্রশ্ন জোরালো হয়ে উঠেছে। কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, খান তাঁর ‘প্রয়োজনের’ কথা জানিয়েছেন নজরুলকে। এর পরে নজরুল, মামুনের মাধ্যমে রেহাই করিয়েছেন জঙ্গি-যোগে ধৃতদের। বিএনপি নেতা কামারুজ্জামান সোহাগের নামও এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে উঠে আসছে। জানা যাচ্ছে, জামায়াত এবং তার ছাত্র শাখা ইসলামি ছাত্র শিবিরের মধ্যে আইএসআই কর্তারা এমন মৌলবাদী গোষ্ঠী তৈরি করতে পেরেছেন, যাদের পাকিস্তানের স্বার্থে প্রয়োজন। ইসলামি ছাত্র শিবির ইতিমধ্যেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীর মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কট্টর মৌলবাদীদের একটি বড় অংশকে দীক্ষিত করেছে।
সূত্রের খবর, বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাই কমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ এখন খুবই সক্রিয়। অন্তর্বর্তী সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ ভিআইপি প্রোটোকল দিয়েছে বলে খবর। গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে সেখানকার কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করেছেন মারুফ। ৫ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহে এক সমাবেশে গিয়েছেন। সেখানে ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান। ৬-৭ ফেব্রুয়ারি পাক দূত সস্ত্রীক ‘অবকাশ যাপনে’ যান কক্সবাজারে। নামে অবকাশ যাপন হলেও এই সফরে রোহিঙ্গাদের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ বৈঠক হয়। আবার ২৪ ফেব্রুয়ারি তিন সদস্যের দল নিয়ে তিনি চট্টগ্রামে যান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে সেখানে উর্দু বিভাগ খোলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। দুপুরে চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে কয়েক জন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তির সঙ্গে তিনি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পুরো সফরেই মূলত জামায়াত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘ সাক্ষাৎ করেছেন পাক কর্তা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)