Advertisement
E-Paper

নোট উধাওয়ের সঙ্গে ছুটিও উধাও, শীতেও ঘাম ছুটছে নেতাদের

কোথায় সমুদ্র সৈকত! কোথায় ক্রুজ-ভ্রমণ বা অরণ্য সাফারি। গোপন উড়ানে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া নেই। বাংলো অথবা ফার্ম হাউসে রাতভর পার্টিও বন্ধ। তার বদলে? গোটা দেশ থেকে আসা কর্মীদের সঙ্গে নিরন্তর বৈঠক। উত্তরাখণ্ড থেকে রাজস্থান, গোয়া থেকে উত্তরপ্রদেশ— মাইক হাতে মুখে ফেনা তুলে বক্তৃতা।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৫
আত্মঘাতী কৃষকের পরিবারের সঙ্গে রাহুল গাঁধী। সোমবার রাজস্থানের বরানে। ছবি: পিটিআই

আত্মঘাতী কৃষকের পরিবারের সঙ্গে রাহুল গাঁধী। সোমবার রাজস্থানের বরানে। ছবি: পিটিআই

কোথায় সমুদ্র সৈকত! কোথায় ক্রুজ-ভ্রমণ বা অরণ্য সাফারি। গোপন উড়ানে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া নেই। বাংলো অথবা ফার্ম হাউসে রাতভর পার্টিও বন্ধ।

তার বদলে?

গোটা দেশ থেকে আসা কর্মীদের সঙ্গে নিরন্তর বৈঠক। উত্তরাখণ্ড থেকে রাজস্থান, গোয়া থেকে উত্তরপ্রদেশ— মাইক হাতে মুখে ফেনা তুলে বক্তৃতা। বড়দিনে কেক এবং ক্যারল সরিয়ে রেখে ভজন এবং তুলসী গাছের ভেষজ গুণসংকীর্তন! এ বারের শীতে শুধু পুরনো নোটই বাতিল হয়নি! তার জেরে বাতিল হয়ে গিয়েছে বড়দিনে রাজনীতির কুশীলবদের চিরাচরিত ছুটির আমেজও।

রাহুল গাঁধীকেই ধরা যাক। মাঝে মাঝেই তাঁর আচমকা ছুটিতে চলে যাওয়ার অভ্যাস কিছু দিন আগে অবধিও আক্রমণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাহুল যে কোথায় তার হদিশ দিতে পারতেন না কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির তাবড় নেতারাও। নোট বাতিল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে সেই রাহুলকে দেখা যাচ্ছে নিরন্তর ময়দানে, রাজপথে। ছুটি নেওয়া দূরস্থান, গোটা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন সনিয়া-পুত্র। প্রতিদিনের কর্মসূচি আগে থাকতে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে নীচের সারির নেতাদের। রাষ্ট্রপতি ভবনে নোট বাতিলের জন্য দুপুরে দরবার করে সেখান থেকেই সটান গোয়া যাওয়ার বিমান ধরছেন। রাতে ফিরে এসেই রাকাবগঞ্জ রোডে দলের ‘ওয়ার রুমে’ বসছেন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে কী ভাবে নোট বাতিল নিয়ে মোদীর উপর চাপ আরও বাড়ানো যায়, তার জন্য কৌশল তৈরি করছেন গভীর রাত পর্যন্ত।

অথচ কংগ্রেসের ঐতিহ্যই হল, যখনই গাঁধী পরিবারের নেতারা ছুটি কাটাতে যান, কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন পরের সারির নেতারা। তাঁরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েন পর্যটন অথবা বাৎসরিক পার্টিতে। এ বছর স্বাভাবিক ভাবেই তা সম্ভব হচ্ছে না।

ছুটি কপালে নেই বিজেপি নেতাদেরও। নোট বাতিলের পর ফি বছরের মতো ধামাকা-দার পার্টি করতে সাহস পাচ্ছেন না কোনও নেতাই। পার্টির শান বাড়াত যে অর্থ, এত দিন তা আসত নগদেই। এখন গোপন ফিসফাস, মোদীর নির্দেশে ইডি-র নাকি নজরদারি রয়েছে নেতাদের জীবনযাত্রার উপর। ফলে সিঙ্গল মল্টের ফোয়ারা অনেকটাই ফিকে। বরং বিরোধীদের সম্মিলিত আক্রমণ সামলাতে দ্বিগুণ সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। সনাতন সংস্কৃতির চর্চা চালিয়ে যেতেও বলা হয়েছে। ফলে ছুটি তো নেইই, আমোদ-আহ্লাদের সুযোগও উধাও অমিত শাহ, গডকড়ী, রাজীবপ্রতাপ রুডিদের। বাধ্যতামূলক ভাবেই ২৫ ডিসেম্বর সন্ধেটা বিজেপি নেতাদের কেটেছে বাজপেয়ীর বাড়ি ভজন শুনে! আবার ওই দিনটাই সরকার তুলসী দিবস ঘোষণা করায়, কিছু নেতাকে সকালে তুলসি সংকীর্তনেও ব্যস্ত থাকতে হয়েছে!

জানুয়ারির গোড়ায় দিল্লিতে বিজেপি-র জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। বিভিন্ন রাজ্য থেকে দলে দলে প্রতিনিধিরা আসবেন। স্বাভাবিক ভাবেই সেই রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজনেও বছরের শেষ সপ্তাহটা পাগলপারা দশা থাকছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতাদের। বুধবার অরুণ জেটলির জন্মদিন। কিন্তু যা পরিস্থিতি তাতে ‘নমো’ ‘নমো’ করেই জন্মদিনটা সারতে হবে তাঁকে!

এর মাঝখানে নেতাদের প্রবল চাপ কিছুটা লাঘব করতে মুম্বই থেকে সিনে-দাওয়াই নিয়ে এসেছেন মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেত্রী সাইনা এন সি। আমির খানের ‘দঙ্গল’ ছবিটি দেখানোর আয়োজন করেছেন তিনি মহাদেব অডিটোরিয়ামে। লালকৃষ্ণ আডবাণী, অমিত শাহ, নিতিন গডকড়ীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ডেকেছেন কিছু কংগ্রেস নেতাকেও। তাঁর বক্তব্য, কিছুক্ষণের জন্য স্নায়ুর চাপ কমাতে মিলেমিশে সিনেমা দেখতে আসুন!

যদিও এই দাওয়াইয়ে কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয়ে খোদ নেতারাই।

Demonetisation Politicians Forget Holidays Rahul Gandhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy