E-Paper

সরকারে এলেও প্রতিশ্রুতি রাখতে লড়বেন দীপঙ্করেরা

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন স্কুল থেকে দুর্দান্ত রেজাল্ট নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে, কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে স্নাতক স্তরে ভর্তি হয়েছিলেন রাশিবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে। তার পরে স্নাতকোত্তর করেন।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:২৯
প্রচারে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।

প্রচারে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র।

‘‘আইপিএল-এর ভাষায় আমরা মহাগঠবন্ধনের ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল’ প্লেয়ার!’’ হাসি মুখে বলছিলেন দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। কী ভাবে? উত্তর মিলল, ‘‘বিরোধীদের মহাগঠবন্ধন নির্বাচনের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তা সরকারে আসার পরে যে পূরণ হবে, তা সিপিআই-এলএল লিবারেশন আন্দোলন করেও নিশ্চিত করবে বলে সাধারণমানুষ জানে।’’

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন স্কুল থেকে দুর্দান্ত রেজাল্ট নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে, কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে স্নাতক স্তরে ভর্তি হয়েছিলেন রাশিবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে। তার পরে স্নাতকোত্তর করেন। কিন্তু তত দিনে বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। সিপিআই-এমএল তখন বিহারে শক্ত ঘাঁটি গড়তে শুরু করেছে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে তাঁকে বাংলা থেকে পার্টির কাজ করতে বিহারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

চার দশক পরে পশ্চিমবঙ্গে বামেরা যখন ‘শূন্য’, তখন সিপিআই-এমএল লিবারেশনের বিহারে ‘স্ট্রাইক রেট’ সূর্যকুমার যাদবের থেকেও বেশি। তাই বঙ্গসন্তান হয়েও দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বিহারের রাজনীতির অন্যতম প্রধান চরিত্র। পাঁচ বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে লিবারেশন ১৯টি আসনে লড়ে ১২টি আসনে জিতেছিল। তিনটি আসন খুব সামান্য ব্যবধানে হাতছাড়া হয়। গত লোকসভায় তিনটি আসনে লড়ে দু’টিতে জিতেছে। এ বার লিবারেশন ২০টি আসনে লড়ছে। শুধু নিজের দল নয়। তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে মহাগঠবন্ধনের অন্য প্রার্থীদের জন্য প্রচারেও সিপিআই-এমএল লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের চাহিদা তুঙ্গে। কারণ, শুধু বামেদের মতাদর্শ নয়, সিপিআই-এমএল বিহারের বিরোধী জোটে জাতপাতের অঙ্কেও গুরুত্বপূর্ণ।

পটনায় বিধায়কদের আবাসনে সিপিআই-এমএলের ফ্ল্যাটের উপরে লাল ঝান্ডা ওড়ে। প্রচারের ব্যস্ততার ফাঁকে সেখানেই দীপঙ্কর বলেন, ‘‘দু’তিনটি জেলা নয়, বিহার জুড়ে আমাদের প্রভাব রয়েছে। কারণ দলের সামাজিক ভিত। দলিত, অতি অনগ্রসর শ্রেণির বা ইবিসি মানুষের সমর্থন।’’ নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে এনডিএ তা ভোটব্যাঙ্কে উচ্চবর্ণ থেকে ওবিসি, ইবিসি সমাজের মেলবন্ধন করেছে। বিরোধী জোটে ইবিসি সমাজের নেতা মুকেশ সাহনি, আই পি গুপ্ত-কে নিয়ে এসে তেজস্বী সেই জোটে ভাঙন ধরাতে চাইছেন। লিবারেশন সেই কৌশলের অন্যতম অক্ষ।

বিহারে লিবারেশনের প্রার্থী তালিকায় দলের পোড়খাওয়া নেতাদের সঙ্গে আছেন দিল্লির জহওরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি ধনঞ্জয়, পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা দিব্যা গৌতম। যিনি প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের খুড়তুতো বোন।

আশির দশক পর্যন্ত সিপিআই-এমএল ভোট বয়কট করত। তার পরে দলের নেতারা বুঝতে পারেন, দলের সমর্থক গরিব ভূমিহীন দলিতদের ভোটাধিকারই নেই। তা হলে ভোট বয়কট করে কী হবে? তার পরে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ থেকে বেরিয়ে নির্বাচনী রাজনীতিতে নামার সিদ্ধান্ত নেয় দল। দলিত, অনগ্রসরদের ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করে। দীপঙ্কর বলেন, ‘‘এত বছর পরে ভোটার তালিকায় সংশোধন বা এসআইআর-এর জন্য আবার সেই লড়াই লড়তে হল। আমরা সক্রিয় না হলে আরও বহু মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যেত।’’

আঠাশ বছর আগে লিবারেশনের তরুণ তুর্কি, জেএনইউ-র ছাত্র নেতা চন্দ্রশেখর প্রসাদ আরজেডি-র নেতা ‘সিওয়ানের ডন’ মহম্মদ শাহাবুদ্দিনের গুণ্ডাবাহিনীর হাতে খুন হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। আরজেডি এ বার শাহাবুদ্দিনের ছেলে ওসামা শাহাবকে প্রার্থী করেছে। এনডিএ-কে ক্ষমতাচ্যুত করতে লিবারেশন আরজেডি-র নেতৃত্বেই বিরোধী জোটে। দীপঙ্কর বলেন, ‘‘বিজেপি মুখে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর কথা বলে। কিন্তু ১০১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪৯ জনই উচ্চবর্ণের। যাঁদের জনসংখ্যায় ভাগ মাত্র ১৪-১৫ শতাংশ। পাঁচ বছর আগেই বিহারে পরিবর্তনহত। কোনও মতে এনডিএ সরকার গড়েছিল। গত পাঁচ বছরে অসন্তোষ আরও জমেছে। আমাদের লক্ষ্য এ বার এনডিএ-কে ১০০ আসনের নীচে আটকে রাখা।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bihar Assembly Election 2025 Bihar Dipankar Bhattacharya

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy