বিজেপি সভাপতি বেছে নেওয়ার প্রশ্নে একাধিক শর্ত রেখেছিল আরএসএস। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, শর্ত বেঁধেও কিন্তু অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নিতিন নবীনের বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি হওয়া আটকাতে পারল না সঙ্ঘ। সূত্রের মতে, চলতি সপ্তাহ থেকে শুরু খর বা মল মাস কেটে গেলেই সভাপতি পদের নিয়মমাফিক নির্বাচন হবে। তার পরেই জাতীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন নিতিন। তত দিন ক্ষমতায় থাকছেন জে পি নড্ডাই।
আজ দিল্লির বিজেপি নেতৃত্ব সকাল থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন নিতিনকে স্বাগত জানানোর। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের পাশে বড় বড় কাটআউটে স্থান করে নেয় নিতিনের ছবি। কুয়াশার কারণে পটনা থেকে আজ আসতে দেরি হয় নিতিনের। তাঁকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত। বিজেপির সদর দফতরে নিতিনকে স্বাগত জানান বর্তমান সভাপতি জে পি নড্ডা ও স্বয়ং অমিত শাহ। বিকেলেই নিজের দায়িত্ব বুঝে নেন নিতিন। রাতে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। এ দিকে দায়িত্ব নিয়েই আসন্ন পশ্চিমবঙ্গ-অসমের নির্বাচন প্রসঙ্গে নিতিন বলেন, ‘‘দল সাংগঠনিক ভাবে এতটাই শক্তিশালী যে, আমরা পশ্চিমবঙ্গেও জিতব।’’
এক বছরের বেশি সময় ধরে নড্ডার উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার কাজ জারি থাকলেও, কোনও নামেই ঐকমত্য হচ্ছিল না আরএসএস ও বিজেপির। সূত্রের মতে, গত শুক্রবার আন্দামানে সাভারকরের স্মৃতিতে হওয়া অনুষ্ঠানের সময়ে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বৈঠকেই সম্ভবত নিতিনের নাম চূড়ান্ত হয়। বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, নিতিন জাতীয় রাজনীতিতে অপরিচিত হলেও, আরএসএসের দলীয় সভাপতি বেছে নেওয়ার সব শর্ত পূরণ করেছেন। বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘‘আরএসএস চেয়েছিল, নতুন সভাপতি যেন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হয়। এ ক্ষেত্রে নিতিনের বয়স মাত্র ৪৫ বছর। সংগঠনের লোক। ছত্তীসগঢ় ও সিকিমে দলের ভাল ফলের পিছনে নিতিনের ভূমিকা ছিল।’’
নিতিন দ্বাদশ শ্রেণি পাশ। তবে বিহারে মন্ত্রী থাকায় প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। সেই বিষয়টি পক্ষে গিয়েছে। পরোক্ষে আরএসএসের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে নিতিনের। নিতিনের বাবা নবীন কিশোর সিন্হা আরএসএসের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। মোহন ভাগবত পটনায় ক্ষেত্রীয় প্রচারক হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময়ে নবীন কিশোরের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল তাঁর। বিজেপি সূত্রের মতে, তাই অমিত শাহেরা নিতিনের নাম প্রস্তাব করায় তাতে আপত্তি জানায়নি আরএসএস।
জে পি নড্ডার উত্তরসূরি হিসেবে আরএসএস এমন এক জনকে চেয়েছিল, যিনি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং প্রয়োজনে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম হবেন। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে ‘আনকোরা’ তথা ‘নবীন’ নিতিন ভবিষ্যতে সভাপতি হিসেবে অমিত শাহদের সিদ্ধান্তের সামান্যতম বিরোধিতা যে করতে পারবেন না, তা দল ও আরএসএস নেতৃত্বের কাছে স্পষ্ট। রবিবারইউত্তরপ্রদেশের বিজেপি সভাপতি পঙ্কজ চৌধরির নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়। তিনিও সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পরিবর্তে অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ। ওই নিয়োগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিতিনের নাম ঘোষণা থেকে স্পষ্ট, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে দলে নিজের প্রভাব ক্রমশ বাড়িয়েচলেছেন শাহ। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ অখিলেশ যাদবের মতে, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে, কাউকে ক্ষমতাথেকে হটাতে চেয়েও পারছেন না বিজেপির অঘোষিত দু’নম্বর। তাই সেই ব্যক্তির ক্ষমতা ক্রমশ খর্ব করা হচ্ছে।’’ সূত্রের মতে, যাবতীয় ঘুঁটি সবই সাজানো হচ্ছে ২০২৯ সালের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন, সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)