শুধু পাকিস্তান নয়, ভারতীয় বায়ুসেনার কাছেও পথ বদলের অনুমতি চেয়েছিল ইন্ডিগোর শ্রীনগরগামী বিমান। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। একপ্রকার বাধ্য হয়েই বজ্রগর্ভ মেঘের মধ্যে বিমান প্রবেশ করাতে হয় পাইলটকে। যার ফলে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং সামনের দিকে ‘নাকের অংশ’ ভেঙে যায়। শুক্রবার বিবৃতি দিয়ে এমনটাই জানাল ভারতের অসামরিক বিমান চলাচল নিয়ামক সংস্থা ডিজিসিএ। ওই বিমানের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পেরেছে, সে দিন ঠিক কী ঘটেছিল। বিবৃতিতে সে কথা জানানো হয়েছে। ডিজিসিএ-র বিবৃতি উদ্ধৃত করেছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই।
গত বুধবার ২০০-র বেশি যাত্রী নিয়ে দিল্লি থেকে শ্রীনগরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ইন্ডিগোর ৬ই২১৪২ বিমান। পথে খারাপ আবহাওয়ার সম্মুখীন হয় বিমানটি। শ্রীনগরে অবতরণের সময়ে বিমানের ‘নাক’ ভেঙে যায়। কোনও রকমে বিমানটি অবতরণ করে শ্রীনগর বিমানবন্দরে। ঘটনাচক্রে এই বিমানেই ছিল তৃণমূলের একটি প্রতিনিধিদল। তবে বিমানের সকল যাত্রী সুরক্ষিত আছেন। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল, তদন্ত করে দেখছে ডিজিসিএ। তারা বিবৃতিতে বলেছে, শ্রীনগরে যাওয়ার পথে পঠানকোটের উপরে শিলাবৃষ্টি এবং তীব্র ঝড়ের মুখে পড়ে ওই বিমান। কর্মীদের বয়ান অনুযায়ী, প্রথমে ভারতীয় বায়ুসেনার নর্দার্ন কন্ট্রোলে পথবদলের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। বাঁ দিকে আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে সরতে চেয়েছিল বিমানটি। কিন্তু বায়ুসেনা অনুমতি দেয়নি। এর পর লাহৌরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পাইলট। খারাপ আবহাওয়া এড়াতে পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা-ও খারিজ করে দেওয়া হয়।
চরম বিপদের মুখে যাত্রীরা, তাও ভারতীয় বিমানকে আকাশে ঢুকতে দিল না পাকিস্তান
ডিজিসিএ জানিয়েছে, দিল্লি থেকে ওড়ার পর পঠানকোটের কাছাকাছি পৌঁছে অদূরেই একটি বজ্রগর্ভ মেঘ দেখতে পান পাইলট। তার ধারেকাছে গেলেই যে বিমান ভয়ানক ভাবে দুলতে শুরু করবে, ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা হবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত ছিল। তখনই পথ বদলের অনুমতি চাওয়া হয়। দু’দিক থেকেই আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর পাইলট বজ্রগর্ভ মেঘের মধ্যে দিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন।
আরও পড়ুন:
মেঘের মধ্যে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বিমানটি বিপজ্জনক ভাবে দুলতে শুরু করে। উচ্চতারও তারতম্য হয়। ডিজিসিএ-র বিবৃতি অনুযায়ী, কখনও বিমানটি উপরে উঠছিল, পরমুহূর্তেই আবার নেমে যাচ্ছিল। একসময়ে সাড়ে আট হাজার ফুট নেমে গিয়েছিল বিমানটি। এর ফলে বিমানের গতিও কখনও বাড়ছিল, কখনও কমছিল। জরুরি পরিস্থিতি জারি করেন পাইলট। এই সময়ে বিমানের ‘অটোপাইলট’ প্রযুক্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ‘ম্যানুয়ালি’ বিমান চালিয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ অতিক্রম করেন পাইলট। অবতরণের মুখে ‘নাকের’ অংশ ভেঙে যায়। তবে যাত্রীদের কারও আঘাত লাগেনি।
উল্লেখ্য, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। তার পাল্টা হিসাবে ভারতের জন্য পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। এখনও তা খোলেনি। মনে করা হচ্ছে, তার ফলেই ইন্ডিগোর বিমানটিকে আকাশসীমায় প্রবেশের অনুমতি দেয়নি লাহৌর এটিসি।