অপারেশন সিঁদুরে প্রবল ভাবে মুখ পুড়েছিল পাকিস্তান সেনার। আর তাই পিঠ বাঁচাতে সেনাপ্রধান নিজেকে পাক বাহিনীর সর্বোচ্চ সম্মান এবং সংঘর্ষে নিহত পাক সেনাদের মরণোত্তর সম্মান প্রদান করেছিলেন বলে দাবি করলেন ভারতের ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই। তাঁর দাবি, “পাকিস্তানের মরণোত্তর সম্মান দেওয়ার তালিকা থেকেইস্পষ্ট, অপারেশন সিঁদুরে একশোর বেশি পাকিস্তানি সেনার মৃত্যু হয়।”
আজ নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ট্রুপ কন্ট্রিবিউটিং কান্ট্রিজ়’-এর একটি আলোচনাসভায় ঘাই জানান,পহেলগাম হামলার পরেই পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। ঘাইয়ের কথায়, “সকলেই বুঝতেপারছিলেন প্রত্যাঘাত অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু আমরা প্রয়োজনীয় সময় নিয়েছিলাম। এপ্রিল ২২ থেকে ৬-৭ মে— এই সময়ে নানা ধরনের ঘটনা ঘটছিল আর আমরা আমাদের নিশানা চূড়ান্ত করছিলাম। শেষে একাধিক লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে থেকে শেষ চূড়ান্ত লক্ষ্য বেছে নিয়েছিল সেনা।” তাঁর কথায়, অপারেশন সিঁদুর কেবল দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করা ছিল না। যে বিপদ তৈরি হয়েছিল, তাতে প্রতিবেশী দেশের জটিল ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ সত্ত্বেও সরাসরি আঘাত হানা হয়েছিল। সেনার লক্ষ্যই ছিল সন্ত্রাসবাদের পাঁজরে আঘাত করা।
ঘাইয়ের মতে, ওই অভিযানের ফলে পাকিস্তান ও তার সেনাবাহিনীর মনোবল সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ঘাই বলেন, ‘‘ভারতের আক্রমণে পাকিস্তান সেনা ও তাদের সেনাপ্রধান উভয়েই প্রবল চাপে পড়ে যান। সে কথা আমরা সকলেই জানি। সে সময়ে তাঁর নিজের এবং বাহিনীর ছবি পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজন ছিল। ফলে তাদের পক্ষে যত দূর করা সম্ভব ছিল, যত দূর তাদের জ্ঞান রয়েছে, তা-ই করেছে। সেটা কাপুরুষতাই হোক না কেন।’’
অপারেশন সিঁদুরের দু’সপ্তাহের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল সম্মানে ভূষিত করে ইসালামাবাদ। পাশাপাশি অপারেশন সিঁদুরে যে সেনা-কর্মীরা মারা যান, তাঁদেরমরণোত্তর পদক দিয়েও সম্মান জানায় পাক সেনা। সম্ভবত আজ নাম না করেভারতীয় সেনার ডিজিএমও সেই বিষয়টিই বোঝাতে চেয়েছেন। ঘাইবলেন, ‘‘পাকিস্তান সম্ভবত অনিচ্ছাকৃতভাবেই তাদের স্বাধীনতা দিবসের দিন (১৪ অগস্ট) মরণোত্তর পদকপ্রাপ্ত সেনাদের তালিকা প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেই তালিকা থেকে এখন আমাদের মনে হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষে সে সময়ে একশোর বেশি পাক সেনা মারা গিয়েছে।’’
পহেলগাম হামলার প্রায় ৯৬ দিন পরে ওই ঘটনায় যুক্ত জঙ্গিরা নিহত হয়। একাধিক বার তখন প্রশ্ন ওঠে, অপারেশন সিঁদুর হয়ে গেল, কিন্তু জঙ্গিদের কেন ধরা গেল না? তা হলে কি নিরাপত্তাবাহিনীর নজর এড়িয়ে তারা পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে? আজ সে প্রশ্নের জবাবে ঘাই বলেন, ‘‘উপত্যকার ওই পরিবেশে জঙ্গিদের খোঁজা ছিল খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার মতো। আমাদের ৯৬ দিন সময় লেগেছে ঠিকই। কিন্তু আমরা জঙ্গিদের বিশ্রাম করতে দিইনি। ওদের তাড়িয়ে বেড়িয়েছি। শেষে যখন জঙ্গিদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হল, তখন ওরা রীতিমতো ক্লান্ত, দুর্বল। শরীরে অপুষ্টির ছাপ, দৌড়নোর শক্তি হারিয়েছে। আমরা যে মুহূর্তে ওদের দেখা পাই, তৎক্ষণাৎ ওদের নিকেশ করি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)