সংঘর্ষে আপাতত ছেদ পড়লেও জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) এখনও রয়েছে উত্তেজনা। এই আবহে বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনার তরফে উত্তেজনা প্রশমনে দ্বিপাক্ষিক সহমতের কথা জানানো হল। গত শনিবার ভারতীয় ও পাকিস্তানি সেনার ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস) স্তরের আলোচনায় উত্তেজনা প্রশমনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি আলোচনা হয়েছে বলে সেনার দাবি।
সেনা সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআর জানিয়েছে, আগামী রবিবার পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণরেখা ও পশ্চিম সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি বহাল থাকতে পারে। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ ঈশাক দারের দাবি, রবিবারও দুই দেশের ডিজিএমও-রা আবার হটলাইনে আলোচনা করবেন।
গত শনিবার বিকেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম সংঘর্ষবিরতির কথা ঘোষণা করেছিলেন। তর পরে ভারত এবং পাকিস্তান দু’দেশই পৃথক ভাবে বিবৃতি দিয়ে সংঘর্ষবিরতিতে সম্মতির কথা জানিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও পাক ফৌজ অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে এলওসি-তে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এই আবহে সোমবার বিকেলে ভারতীয় সেনার ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই পাক সেনার ডিজিএমও মেজর জেনারেল কাশিফ আবদুল্লার সঙ্গে হটলাইনে কথা বলেন। এর পরে কিছুটা শান্ত হয় পরিস্থিতি।
এলওসি এলাকায় সংঘর্ষবিরতি কার্যকর করতে ২০০৩ সালে একমত হয়েছিল নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারত ও পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতি চুক্তি পুনর্নবীকরণ করেছিল। খাতায়কলমে সেই নিয়ম অপারেশন সিঁদুর পর্যন্ত বহাল ছিল। কিন্তু, গত চার বছরে প্রায়শই দু’দেশের সেনা পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে। সূত্রের খবর, সংঘর্ষবিরতি চুক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ডিজিএমও-প্রতিনিধি স্তরে প্রত্যেক বৃহস্পতিবার একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হত। ওই ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এ ব্রিগেডিয়ার স্তরের অফিসারেরা অংশগ্রহণ করতেন।
পরবর্তী সময়ে ওই বৈঠক কিছুটা অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল। অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল সরাসরি ডিজিএমও পর্যায়ের আলোচনা। ঘটনাচক্রে, গত ২২ এপ্রিলের পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের ঠিক আগে এপ্রিলের গোড়ায় এলওসিতে শান্তি ফেরাতে দুই দেশই যোগাযোগ ও সমন্বয় বৃদ্ধিতে সক্রিয় হয়েছিল। এপ্রিলের প্রথম এবং দ্বিতীয় বার দুই সেনার ব্রিগেড কমান্ডার-স্তরের ফ্ল্যাগ মিটিং হয়েছিল নিয়ন্ত্রণরখার (এলওসি) চাকান-দা-বাগ ক্রসিং পয়েন্ট এলাকায়। যেখানে উভয় পক্ষই সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সহমত হয়। কিন্তু ২২ এপ্রিল বৈসরনে সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং ৬ মে তার জবাবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাক পঞ্জাবের সন্ত্রাসবাদী ডেরায় ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাত নতুন করে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করে।