E-Paper

আদানির জন্যই তড়িঘড়ি পরমাণু বিল, বিরোধী-প্রশ্ন

দেশের পরমাণু বিদ্যুৎ ক্ষেত্র বেসরকারি সংস্থার জন্য খুলে দিয়ে এবং পরমাণু চুল্লি সরবরাহকারী বিদেশি সংস্থাগুলিকে যে কোনও দুর্ঘটনা থেকে দায়মুক্ত করে দিয়ে মোদী সরকার সংসদে ‘শান্তি’ বিল এনেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৩১
গৌতম আদানি।

গৌতম আদানি। — ফাইল চিত্র।

আদানি গোষ্ঠী নভেম্বরে ঘোষণা করেছিল, পরমাণু বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে লগ্নি করবে। ডিসেম্বর মাসেই মোদী সরকার পরমাণু বিদ্যুৎ ক্ষেত্র বেসরকারি সংস্থার জন্য খুলে দেওয়ার জন্য সংসদে বিল আনছে! এ’টি নিছক কাকতালীয় কি না, তা নিয়ে আজ লোকসভায় কংগ্রেস প্রশ্ন তুলে দিল।

দেশের পরমাণু বিদ্যুৎ ক্ষেত্র বেসরকারি সংস্থার জন্য খুলে দিয়ে এবং পরমাণু চুল্লি সরবরাহকারী বিদেশি সংস্থাগুলিকে যে কোনও দুর্ঘটনা থেকে দায়মুক্ত করে দিয়ে মোদী সরকার সংসদে ‘শান্তি’ বিল এনেছিল। বিরোধীরা এই বিল সবিস্তারে আলোচনার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বা যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলেছিল। সেই দাবি অগ্রাহ্য করে মোদী সরকার আজ লোকসভায় এই বিল পাশ করিয়ে দিয়েছে। মোদী সরকারের এই তাড়হুড়ো দেখে কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি গোড়াতেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘সরকারি সম্পদ লিজ়ে নিয়ে ব্যবসা করে সাম্রাজ্য গড়ে তোলা আদানি গোষ্ঠী নভেম্বর মাসেই পরমাণু বিদ্যুৎ ক্ষত্রে পা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিসেম্বরে বেসরকারি সংস্থাকে পরমাণু বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে লগ্নির ছাড়পত্র দিয়ে সরকার বিল আনছে। এ কি কাকতালীয়?” অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, এখন ৮.৮ গিগাওয়াট পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। ২০৪৭-এ তা ১০০ গিগাওয়াটে নিয়ে যাওয়া, যাতে পেট্রল-ডিজ়েল আমদানির উপরে নির্ভরতা কমানো সম্ভব হয়, সে জন্যই পরমাণু বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বেসরকারি লগ্নি প্রয়োজন।

ইউপিএ সরকারের আমলে ভারত-আমেরিকা পরমাণু চুক্তির পরে অসামরিক পরমাণু দায়বদ্ধতা আইন তৈরি হয়েছিল। যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল, পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে যদি পরমাণু চুল্লিতে ত্রুটির ফলে দুর্ঘটনা ঘটে, তা হলে সেই চুল্লি সরবরাহকারী বিদেশি সংস্থাগুলিকে তার দায় নিয়ে পুরো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মোদী সরকারের যুক্তি, এই আইনি দায়ের ফলেই গত ১৫ বছরে আমেরিকার কোনও সংস্থা পরমাণু চুল্লি জোগানে রাজি হয়নি। মোদী সরকার তাই পরমাণু শক্তি আইনের সঙ্গে ইউপিএ সরকারের সেই দায়বদ্ধতা বিলও প্রত্যাহার করে নতুন ‘শান্তি’ (সাস্টেটেনেবল হারনেসিং অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব নিউক্লিয়ার এনার্জি ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া) বিল এনেছে।

আজ কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, কার চাপে এই আইনি দায়বদ্ধতা প্রত্যাহার করা হচ্ছে? ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে খুশি করতেই মোদী সরকার এই নীতি নিচ্ছে বলেও বিরোধীরা ইঙ্গিত করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে? মণীশ তিওয়ারি বলেন, ইউপিএ আমলে সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এই দায়বদ্ধতা আইন তৈরি হয়েছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, যে সব বেসরকারি সংস্থা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাবে, তারা ক্ষতিপূরণ দেবে। বিদেশি সংস্থাগুলির সঙ্গে তারা এ বিষয়ে চুক্তি করবে। সেই ক্ষতিপূরণও যথেষ্ট না হলে সরকারের পরমাণু দায়বদ্ধতা তহবিল থাকবে। সরকারের উত্তরে অসন্তুষ্ট বিরোধীরা বিল পাশের সময় ওয়াক-আউট করেন। সংসদের বাইরে মণীশ বলেন, ‘‘কার চাপে সরকার পরমাণু চুল্লি জোগানকারী বিদেশি সংস্থাগুলিকে দায়মুক্ত করছে, তার উত্তর মেলেনি। মোদী সরকার বেসরকারি সংস্থাকে লগ্নি করতে দিয়ে তাদের মুনাফার রাস্তা খুলে দিচ্ছে। কিন্তু দুর্ঘটনায় দায় সরকার নিজের ঘাড়ে নিচ্ছে। যা আখেরে জনগণের উপরে চাপবে। এটা অভূতপূর্ব। কল্যাণকারী রাষ্ট্রের সংজ্ঞাই বদলে দেওয়া হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Gautam Adani Nuclear deal Parliamentary Session

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy