নড়চড় হল না আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির। আগামিকাল থেকে ভারতীয় পণ্যের উপরে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করছে আমেরিকা।
ঘরোয়া ভাবে নয়াদিল্লি মানছে, আমেরিকার সঙ্গে এত বড় বাণিজ্য-সংঘাত সাম্প্রতিক কালে আর হয়নি। এই টানাপড়েনের প্রভাব ভারত এবং আমেরিকার সুবিস্তৃত সামগ্রিক কৌশলগত সম্পর্কে কতটা পড়বে, তা নিয়ে আলোচনা এবং খতিয়ে দেখা শুরু হয়ে গিয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করছে, ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনের বৃহত্তর কৌশলগত অংশীদারি এই বাণিজ্য-যুদ্ধের জেরে আপাতত ব্যাহত হবে না। বস্তুত, দেশজ ‘তেজস’ যুদ্ধবিমানের জন্য আরও ১১৩টি জিই-৪০৪ ইঞ্জিন কিনতে আমেরিকান সংস্থা জিই-র সঙ্গে এই সেপ্টেম্বরেই প্রায় ১০০ কোটি ডলারের চুক্তি চূড়ান্ত করতে চলেছে ভারত। তবে বাণিজ্য চুক্তি সম্পূর্ণ মুখ থুবড়ে পড়লে তার প্রভাব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যান্য ক্ষেত্রে চুঁইয়ে আসবে না, এমনটাও বুকে হাত রেখে বলতে পারছে না বিদেশ মন্ত্রক। আপাতত অপেক্ষা করা এবং কূটনৈতিক দৌত্যের সমস্ত রাস্তা খুলে রাখা হচ্ছে।
ভারত-আমেরিকা দু’দেশের কর্তারাই বোঝেন, কৌশলগত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দুর্বল হলে সবচেয়ে লাভ চিনের। ফলে বাণিজ্য চুক্তিকে ঘেঁটে দিয়ে চিনকে সুবিধা করে দিতে ট্রাম্প প্রশাসন খুবই তৎপর হয়ে উঠবে, বিষয়টি এমন নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। আজ দিল্লির আমেরিকান দূতাবাস বলেছে, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং শক্তি ক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমেরিকা। ইন্দো-আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের শক্তি সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে আমেরিকার কর্তারা এ কথাও বলেছেন যে, দু’দেশের মধ্যে সমন্বয়ের ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে শক্তি ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা সম্ভব। এক কর্তার কথায়, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে রফতানি ক্ষেত্রে যৌথ ভাবে কাজ করতে আমেরিকা প্রস্তুত, যাতে শক্তি ক্ষেত্রটিতে নিরাপত্তা অর্জন করা যায়। তাঁর মতে, ভারতে অশোধিত তেল এবং গ্যাস রফতানিতে শীর্ষ স্থানটি নিতে পারে আমেরিকা।
গোড়া থেকেই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পাল্লা ভারতের দিকে ঝুঁকে থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন ট্রাম্প। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, চুক্তিতে সুবিধাজনক শর্তে ভারতকে রাজি করানোর জন্য চাপ চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতেই সম্ভবত তাঁর শুল্ক-অস্ত্র। একই পন্থা ট্রাম্প অতীতে নিয়েছেন জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে। পাশাপাশি, রাশিয়াকে পরোক্ষ চাপে আলোচনার টেবিলে বসাতে চাইছেন ট্রাম্প। তাঁর ধারণা, রাশিয়ার তেলের ‘বড় খদ্দের’ নয়াদিল্লি সরে গেলে ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ-ভাঁড়ারে টান পড়বে। যদিও যুদ্ধ থামলেই ট্রাম্প জরিমানা তুলবেন, এমন আশায় নেই সাউথ ব্লক।
জার্মান সংবাদপত্র ‘ফ্রাঙ্কফুর্টার আলগামাইনে’ দাবি করেছে, গত কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্প চার বার নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করেছেন। এক বারও ফোন ধরেননি প্রধানমন্ত্রী। জার্মান পত্রিকাটি মোদীর এই মনোভাবকে ‘তাঁর ক্রোধের গভীরতা এবং সতর্ক পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করলেও ভারত বা আমেরিকা, কেউই এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেনি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)